Thank you for trying Sticky AMP!!

সহজ সরল গল্পের 'আগুন চাবুক'

উৎস নাট্যদলের পঞ্চম প্রযোজনা আগুন চাবুক নাটকের উদ্বোধনী প্রদর্শনীর একটি দৃশ্য। শুক্রবার, জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটারে

নতুন নাটকের যাত্রাকালে উদ্বোধনী দিনে একটা উৎসব উৎসব ভাব থাকে। গেল শুক্রবার আগুন চাবুক নাটকের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। দলের কর্মীদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনার কমতি ছিল না। একই মিলনায়তনে পরপর দুটি প্রদর্শনীতে দর্শকও নেহাত কম হয়নি।

শুরুতে বলে রাখি, ২০১৫ সালের ৮ মে প্রতিষ্ঠিত উৎস নাট্যদলের পঞ্চম প্রযোজনা আগুন চাবুক নাটকটি রচনার পাশাপাশি নির্দেশনা দিয়েছেন মান্নান হীরা। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন শাহরান খান, লিটা খান, ইমরান হোসেন ও জিয়াউল হক। নাটকের গানের কথা লিখেছেন মান্নান হীরা।

নবীন দলের নতুন নাটককে উৎসাহ দিতে এসেছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, মামুনুর রশীদ ও গোলাম কুদ্দুস। তাঁরা মঞ্চে গিয়ে প্রদীপ জ্বালিয়ে শুভকামনা জানান। নাটক শেষে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য দেন তাঁরা।

আগুন চাবুক নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন দেখতে গিয়ে প্রথমেই মনে প্রশ্ন জাগে, নাটকটির নামটি এমন কেন? আগুন চাবুক? নাটক শুরুর পর বেশ সময় প্রশ্নটি মাথায় থেকে যায়। একেকটা সংলাপ সেকি দীর্ঘ! গল্পে মূল ঢুকতে সময় লেগে গেল।

মঞ্চে প্রথমে একটি কাকতাড়ুয়ার দেখা মেলে। নানা ভঙ্গিতে অনেকে কথা বলে গেলেন। এত কথা যে কম ধৈর্যর দর্শকেরা ক্লান্ত হয়েছেন। তবে এ চরিত্রে অভিনয় করা শাহরান খানের আঙ্গিক, বাচিক অভিনয় প্রশংসার দাবি রাখে। এরপর এলেন কৃষাণী (নাটকে ‘মেয়েটি’) চরিত্রে অভিনয় করা লিটা খান। তারপর যুবক চরিত্রে ইমরান হোসেন। স্টুডিও থিয়েটারে অপরিসর মঞ্চটি তখন যেন পাকা ফসলের মাঠ। ফসলের ঘ্রাণে ম-ম চারদিক! এবারও দীর্ঘ সংলাপ। নেচে-গেয়ে শিল্পীরা বোঝালেন, যখন কৃষকের মনে উৎসবের রং লাগে, তখন এই উৎসবের রং যতটা না বাহ্যিক, তার চেয়ে বেশি আত্মিক, ভেতরের। তাই জীর্ণ পোশাকেও তারা স্বতঃস্ফূর্ত। নিজেকে ভাবে রঙিন, বর্ণিল।

ধীরে ধীরে বোঝা গেল, আগুন চাবুক কাহিনিতে তুলে ধরা হয়েছে সত্যিকারই স্বপ্নময় কৃষিজীবী মানুষের জীবনটা। জমিতে ফসল বপনের দিন থেকে প্রতি মুহূর্তে তার স্বপ্নের পরিধি। কৃষকের প্রথম প্রেম তার কষ্টার্জিত কর্ষিত ফসল। নারী, পুরুষ, যুবক, তরুণী—সবাই এ স্বপ্নের জাল বুনে প্রহর গোনেন ফসল ঘরে তোলার সময় অব্দি। এসব বার্তা অভিনয় আর সংলাপের কারিশমায় দর্শকদের বুঝতে কষ্ট হয়নি।

নাটকের নাম আগুন চাবুক কেন, সেটি অনুমান করা গেল চতুর্থ চরিত্র মুয়াজ্জিন আসার পর। ফসল কাটবার প্রস্তুতিতে যখন উৎসব পোশাকে ছন্দময় নৃত্য চলে, জমিতে তখনই গ্রামের চেনা মুয়াজ্জিন বাদ সাধেন। বলেন, নারী দেহের স্পর্শ পেলে ফসল কমে যায়। একদিন ফসলের জমি ফসলহীন হয়ে উঠবে। কৃষাণী রুখে দাঁড়ায়—পাশে এসে দাঁড়ায় শত বছরের ফসলের পাহারাদার (নিষ্প্রাণ) কাকতাড়ুয়াটি।

নাটকের উদ্বোধন করে বেশ খানিকটা সময় দেখেছিলেন রামেন্দু মজুমদার। নাটক নিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলাম তাঁর কাছে। তাঁর কথা শুনে মনে হলো, খুব একটা মনে ধরেনি নাটকটা। তাঁর মতে, বর্ণনাত্মক হলেও প্রথম দিকে দীর্ঘ সংলাপের কারণে ঝুলে গেছে। যদিও পুরোপুরি দেখার সুযোগ হয়নি। অন্য একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য বেরিয়ে যেতে হয়েছে।

কথা হলো নাট্যকার মান্নান হীরার সঙ্গে। তিনি জানালেন, গল্পটি একটি সত্যিকার ঘটনা অবলম্বন করে সাজানো। যা দৈনিক প্রথম আলোতেই পড়েছেন। বিষয়টি আমার কাছে প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সমাজে নারীকে অবহেলা ও অবজ্ঞা অবিরাম। রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবার সর্বোপরি ধর্মান্ধতা নারীকে পরাধীন করে রাখে। হাজার বছরের ইতিহাস-সভ্যতা ও উন্নয়ন যে গতিতে এগোয়, নারীর অগ্রগতি সে অনুপাতে হয় না। আমি নাটকে নারীদের অসীম সাহসে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে দেখিয়েছি।’

রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবার ও ধর্মান্ধতার বিপরীতে নারীকে শক্তিশালী করে দেখিয়েছেন নির্দেশক। যেমন বাস্তবের জীর্ণ-শীর্ণ কৃষাণীর জায়গায় প্রফুল্ল ও মোটাসোটা মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের কৃষাণী দেখিয়েছেন নির্দেশক। নাটক দেখতে এসেছিলেন নির্দেশক ও থিয়েটার আর্ট ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক মোহাম্মদ বারী। তাঁর কাছে রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবার ও সর্বোপরি ধর্মান্ধতার পরিপ্রেক্ষিতে আগুন চাবুক নাটকের গল্পটাকে প্রয়োজনীয় বলে মনে হয়েছে।

প্রথম প্রদর্শনীর তুলনায় সেদিনের দ্বিতীয় প্রদর্শনীটিতে বেশ খানিকটা পোক্তই মনে হয়েছে। নাটক শেষে নির্দেশক মান্নান হীরার একটা কথা মনে পড়েছে। তিনি বলেছিলেন, ‘খুবই সহজ সরলভাবে গল্পটাকে মঞ্চে বলবার চেষ্টা করেছি। মঞ্চসজ্জা, আলো ও আধুনিক সময়ের কোরিওগ্রাফির কোনো বাহুল্য নেই। আমি বিশ্বাস করি, শিল্পীরাই মঞ্চে প্রথম ও শেষ কথা।’