Thank you for trying Sticky AMP!!

সালমাননামা

>তিনি নেই প্রায় ২৪ বছর হলো। বেঁচে থাকলে হয়তো বয়সের ছাপ ফুটে উঠত হাসিতে। গলায় ভর করত গাম্ভীর্য। দুয়েকটা সাদা চুল দেখা গেলেও তাঁর নায়কসুলভ ব্যক্তিত্বের সামনে হয়তো কোনো পাত্তাই পেত না। কিন্তু ভক্তরা সালমান শাহর সেই বয়সের রংবদল দেখতে পারলেন না। সালমান আটকে গেলেন তারুণ্যেই। হয়ে থাকলেন ২৫ বছরের চিরসতেজ ও তরুণ এক প্রিয়মুখ। সম্প্রতি সালমান শাহর মৃত্যুরহস্য নতুন করে এসেছে আলোচনায়। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আত্মহত্যা করেছেন এই নায়ক। তবে আমরা সেই রহস্যের বাইরে গিয়ে আজ শুধু সালমান শাহকে নিয়ে জানব। লিখেছেন আদর রহমান ও মনজুরুল আলম 

সালমানের শুরু
প্রথম সিনেমা দিয়েই মাত্র ২২ বছর বয়সে তারকা হয়ে যান সালমান শাহ। ১৯৯৩ সালে মুক্তি পায় সালমানের প্রথম ছবি কেয়ামত থেকে কেয়ামত। ফেসবুক ছিল না, ইউটিউব ছিল না, ছিল না প্রচারণার এত শত মাধ্যম। তারপরও ছবি মুক্তির প্রথম সপ্তাহেই নবাগত সালমান শাহ ও মৌসুমী হয়ে ওঠেন তারকা। নিজের ব্যক্তিত্ব, নায়কোচিত চাহনি আর অভিনয় দিয়ে শুরুতেই সালমান বুঝিয়ে দেন, তিনি এই সিনেমার জগতে এসেছেন রাজত্ব করতে। কেয়ামত থেকে কেয়ামত ছবির পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান শুরু থেকেই দেখেছেন জনপ্রিয় এই চিত্রনায়কের উত্থান। সম্প্রতি সালমান শাহকে নিয়ে তিনি বলেন, ‘সালমান এল, জয় করল, আবার চলে গেল। তার এই মাত্র ৪ বছরের ফিল্ম ক্যারিয়ার থেকে কিন্তু সে অনেক পেয়েছিল। কারও জীবনে এত অল্প সময়ে এত কিছু পাওয়া হয় না, যতটা সে পেয়েছিল।’

সালমান–শাবনূর জুটি বেঁধে ১৪টি ছবিতে অভিনয় করেন

সালমানের নায়িকারা
১৯৯৩ সালে অভিষেকের পরই একের পর ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হতে শুরু করেন সালমান শাহ। ওই সময়ের জনপ্রিয় সব নায়িকাদের তিনি পান সহশিল্পী হিসেবে। মৌসুমী, শাবনূর, শাবনাজ, লিমা, শিল্পী—সবার সঙ্গেই সালমান শাহ পর্দায় হাজির হয়েছেন। তবে শাবনূরের সঙ্গে সালমান শাহর জুটি বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম সফল। ১৯৯৪ সালে তাঁরা প্রথম একসঙ্গে অভিনয় করেন তুমি আমার ছবিতে। সে বছরের ঈদে মুক্তি পেয়ে দারুণ ব্যবসা করে ছবিটি। এই ছবি যৌথভাবে পরিচালনা করেছিলেন জহিরুল হক ও তমিজ উদ্দিন। তুমি আমার ছবির সাফল্যের পর সালমান–শাবনূর জুটিকে নিয়ে একের পর এক ছবি নির্মাণ শুরু হয়। মাত্র তিন বছরেএই জুটি ১৪টি ছবিতে অভিনয় করেন, যা সালমানের মোট অভিনীত ছবির অর্ধেকের বেশি।

সালমান শাহ্‌ জন্মোৎসব ২০১৯ এর পোস্টার দেখছেন দুই দর্শক। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

শেষ ছবি
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান সালমান শাহ। সে সময় জনপ্রিয়তার শিখরে ছিলেন তিনি। হাতে তখন অনেকগুলো ছবির কাজ। কিছুর ডাবিং চলছে, কিছুর শুটিং শেষ দিকে, আবার কিছু একেবারে মাঝপথে। মোট পাঁচটি ছবির শিডিউলে ঘুরেফিরে অভিনয় করছিলেন তিনি। এর চারটিরই নায়িকা ছিলেন শাবনুর। সে সময়ই বাংলাদেশের সিনেমাপ্রেমীরা পান এক দুঃসংবাদ। সালমানের মৃত্যুর পর এক বছর পর্যন্ত মুক্তি পেতে থাকে তাঁর অভিনীত ছবিগুলো। ১৯৯৭ সালে সালমানের একেকটা ছবি মুক্তি পাওয়া মানেই ছিল প্রেক্ষাগৃহে দর্শকদের উপচে পড়া ভিড় আর সিনেমা শেষে ভেজা চোখে প্রেক্ষাগৃহ থেকে বেরিয়ে আসা। চাওয়া থেকে পাওয়া, স্বপ্নের নায়ক, আনন্দ অশ্রুর মতো ছবিগুলো দর্শকের প্রিয় নায়ক হারানোর কষ্টকে সেই বছর আরও গাঢ় করে তুলেছিল। যে ছবিগুলো সালমান শেষ করে যেতে পারেননি, যেমন বুকের ভিতর আগুন, প্রেম পিয়াসী—সেগুলো নির্মাতারা শেষ করেছেন অন্য অভিনেতা ও ডামিশিল্পীদের সহায়তায়। কিন্তু কিছু দৃশ্যে ছায়া চরিত্র থাকলেও দর্শকেরা সেখানেও সালমানকেই খুঁজে পেয়েছিলেন।

এখনো সালমান শাহ

বলছিলাম সেই ২৪ বছর আগের কথা। কিন্তু বর্তমানে ফিরে এলেও সালমান শাহর ভক্তরা এখনো এই নায়ককে ভালোবাসেন আগের মতোই। সালমানের মৃত্যু রহস্যের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর সবার প্রতিক্রিয়া দেখে সেই ভালোবাসা আঁচ করা যায়। এই ভালোবাসার উষ্ণতা আরও বোঝা যায় যখন সেপ্টেম্বর আসে, অর্থাৎ সালমানের জন্ম ও মৃত্যুদিবসের মােস। প্রতিবছর ঢুলি কমিউনিকেশনস সেপ্টেম্বর মাসে আয়োজন করে সালমান শাহ জন্মোৎসব। সেই উৎসবে প্রদর্শিত হয় সালমান শাহ অভিনীত ছবিগুলো। এসব দেখতেই দর্শক যে পরিমাণে হলমুখী হন, তাতেই বোঝা যায় আড়াই দশক আগে হারিয়ে যাওয়া এই নায়ক এখনো কতটা প্রাসঙ্গিক। এ ছাড়া ফেসবুক, টুইটারে এখনো সালমানের নামে তৈরি পেজ ও গ্রুপগুলোর সক্রিয়তাও অনেককে অবাক করে দেয়। এখনো অনেকে নিজেকে ‘সালমান শাহর ভক্ত’ হিসেবে পরিচয় দিতে গিয়ে আবেগী হয়ে পড়েন। তাই এখনো বোঝা যায়, সালমান শাহ আছেন ও থাকবেন।