Thank you for trying Sticky AMP!!

সৈয়দ জাহাঙ্গীর ছিলেন বিমূর্ত চিত্রকলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী

শিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীরের ৮৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল শনিবার ধানমন্ডির গ্যালারি চিত্রকের উঠানজুড়ে চলে তাঁর স্মৃতিচারণা। ছবি: সংগৃহীত

মানুষ ও প্রকৃতির সম্পর্ক নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন দেশের বিশিষ্ট শিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর। দেশের সঙ্গে তাঁর যে আত্মিক বন্ধন রয়েছে, তার প্রভাব বারবার উঠে এসেছে তাঁর শিল্পকর্মে। চিত্রকলার ভুবনে তিনি খুবই সক্রিয় জীবন যাপন করেছেন। তিনি ছিলেন এ দেশের চিত্রশিল্পের পুরোধাস্বরূপ।

প্রয়াত চিত্রশিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীরের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। তাঁরা বলেন, চলনবলনে, কথাবার্তা কিংবা জ্ঞানের বিচারে সৈয়দ জাহাঙ্গীর ছিলেন আধুনিকতম শিল্পীদের একজন। তিনি ছিলেন বিমূর্ত চিত্রকলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী।
শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগের সাবেক পরিচালক এই শিল্পীর ৮৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল শনিবার ধানমন্ডির গ্যালারি চিত্রকের উঠানজুড়ে চলে তাঁর স্মৃতিচারণা।

স্মৃতিচারণায় তাঁর পরিবারের সদস্য, সহকর্মী, তাঁর কাজের ভক্তরা অংশ নেন। আড্ডার কথামালায় উঠে এসেছে সৈয়দ জাহাঙ্গীরের ৮৪ বছরের হাজারো স্মৃতি। তাঁর সৃষ্টিকর্ম ও জীবনের নানা বিষয় তুলে ধরা হয়। এ সময় বক্তরা বলেন, তাঁর ছবিতে প্রকৃতি ও মানুষের নানা অনুষঙ্গ খুবই সযত্নে উঠে এসেছে। নির্মাণশৈলীতে এসেছে সহজ ছন্দ, যা তাঁর সৃষ্টিকে করে তুলেছে তাৎপর্যময়। সৈয়দ জাহাঙ্গীরের ছবিতে মানুষের শ্রম-ঘাম, ভালোবাসা ও বন্ধনের দৃশ্যকাব্য উঠে এসেছিল। মূর্ত ও বিমূর্ত উভয় ক্ষেত্রেই সমকালীন চিত্রকলা অঙ্গনে রেখেছেন সাফল্যের স্বাক্ষর। দেশের মাটি ও মানুষের মর্মযাতনার অনুভব তাঁর সৃজনধারাকে করেছে বৈশিষ্ট্যময়। নিজ সৃষ্টিকর্মেই বেঁচে থাকবেন সৈয়দ জাহাঙ্গীর।

গ্যালারি চিত্রকের পরিচালক মো. মনির হোসেনের পরিচালনায় শুরুতেই বক্তব্য দেন শিল্পী শেখ আফজাল। এ সময় তিনি বলেন, মানুষকে খুব ভালোবাসতেন সৈয়দ জাহাঙ্গীর। ব্যক্তিত্বের মাধ্যমেই অন্য সবার থেকে তাঁকে আলাদা করা যেত। তিনি বাংলাদেশে চারুশিল্পে অনেক অবদান রেখেছেন।

২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে নিজের বাসায় শিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীরের মৃত্যু হয়। ছবি: সংগৃহীত

সৈয়দ জাহাঙ্গীরের পরিবারের সদস্য সৈয়দ জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা দশ ভাই-বোন চাচার কাছে বড় হয়েছি। বাবা মারা যাওয়ার পর চাচা আমাদের কখনোই বাবার অভাব বুঝতে দেননি। আমার প্রতিটি কর্মের উৎস তিনি।’

শিল্প সমালোচক অধ্যাপক মঈনুদ্দিন খালেদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, সবার প্রিয় ছিলেন সৈয়দ জাহাঙ্গীর। তাঁর মতো মানুষ চলে যাওয়া দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিল্প ও শিল্পীকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তাঁর মতো মানুষের খুব দরকার ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, খুবই রসিক ও আত্মবিশ্বাসী মানুষ ছিলেন সৈয়দ জাহাঙ্গীর। সবার সঙ্গে মিশে যাওয়ার ক্ষমতা ছিল তাঁর। অবস্থান অনুযায়ী নিজেকে বদলে ফেলতে পারতেন তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে শেখ শাফী আহমেদ বলেন, তিনি প্রথমে একজন ভালো মানুষ, এরপর একজন শিল্পী। তিনি জীবনকে উপভোগ করেছেন। সবাইকে মানিয়ে নেওয়া ও আপন করে নেওয়ার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল তাঁর।

সৈয়দ জাহাঙ্গীর ১৯৩৫ সালের ১ নভেম্বর সাতক্ষীরা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর সৃষ্টিকর্মের বেশির ভাগই গ্রাম এবং গ্রামের প্রকৃতি নিয়ে। প্রকৃতি এবং ঋতু পরিবর্তন ছিল তাঁর ছবির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাঁর বিখ্যাত প্রদর্শনী ও সিরিজের নাম হচ্ছে ‘আত্মার উজ্জীবন’, ‘উল্লাস’, ‘ধ্বনি’, ‘অজানা অন্বেষা’। তাঁর নানা চিত্রকর্মের মধ্যে ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সালের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে করা কাজ ‘আত্মার উজ্জীবন’ উল্লেখযোগ্য।
প্রায় ২২ বছর পেশাদার চিত্রকর হিসেবে কাজ করার পর তিনি ১৯৭৭ সালে শিল্পকলা একাডেমির শিল্পকলা বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন। সৈয়দ জাহাঙ্গীর শিল্পকলা একাডেমির পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন এবং শিল্পকলা একাডেমিতে চারুকলা বিভাগ চালু করেন।
সৈয়দ জাহাঙ্গীর ১৯৮৫ সালে একুশে পদক লাভ করেন। ১৯৯২ সালে চারুশিল্পী সংসদ তাঁকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করে। ২০০০ সালে মাইকেল মধুসূদন পুরস্কার এবং ২০০৫ সালে শশীভূষণ সম্মাননা লাভ করেন তিনি। ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে নিজের বাসায় শিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীরের মৃত্যু হয়।