Thank you for trying Sticky AMP!!

'ব্ল্যাকপিংক ইন ইয়োর এরিয়া'

ব্ল্যাকপিংকের সদস্যরা

কোরিয়ান পপ বা কে পপের ভক্তের সংখ্যা এ দেশে বেড়েই চলেছে। গান, সুর, কথা, পরিবেশনা, শিল্পীদের বেশভূষা, ব্যক্তিত্ব—সবকিছুতেই পশ্চিমা পপ গানের জগৎ থেকে আলাদা কোরিয়ার এই ঘরানা। জনপ্রিয় কে পপ ব্যান্ডগুলো নিয়ে আমাদের এই ধারাবাহিক আয়োজন। বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘ব্ল্যাকপিংক’ নিয়ে আজকের এই লেখা। যাঁরা এরই মধ্যে শুনেছেন ব্ল্যাকপিংকের গান, তাঁরা নিশ্চয় পরিচিত ‘ব্ল্যাকপিংক ইন ইয়োর এরিয়া’ কথাটির সঙ্গে। যাঁদের কাছে কথাটি নতুন ঠেকছে, তাঁদের বলে রাখি, এটা এই দলের প্রায় সব গানেরই এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

অভিষেক

এতদিন পশ্চিমা সব রেকর্ড চূর্ণ-বিচূর্ণ করছিল কে পপ ব্যান্ড ‘বিটিএস’। এখন সঙ্গে যোগ দিয়েছে ‘ব্ল্যাকপিংক’। বলা যায় ঝড়ের বেগে চলছে কোরিয়ার চার নারী সদস্যের এই ব্যান্ড। ব্ল্যাকপিংকের অভিষেক হয় ২০১৬ সালের ৮ আগস্ট। এই সময়ের মধ্যেই বহুভাষী পারফরম্যান্স দিয়ে দেশের সীমানা পেরিয়ে তারা যুক্ত হচ্ছে নানা দেশের নানা বয়সের ভক্তদের সঙ্গে। জিসো, জেনি, রোজ আর লিসারা তাঁদের বিশ্বব্যাপী ট্যুর মাত্র শুরু করেছেন, কিন্তু এরই মধ্যে তাঁদের শক্তিশালী ভক্তবাহিনী সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে। 

জনপ্রিয়তা 

যখন লিখছি, ব্ল্যাকপিংকের গান ‘ডু–ডু ডু–ডু’ (Ddu-Du Ddu-Du) ইউটিউবে দেখা হয়ে গেছে ৮৭ কোটি ৮০ লাখ বারের বেশি। ইউটিউবে কে পপ গ্রুপের সর্বোচ্চবার দেখা ভিডিও এটিই (২০১২ সালের সাই-এর একক গান ‘গ্যাংনাম স্টাইল’ ৩০০ কোটি বারের বেশি দেখা হয়েছে)। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্ল্যাকপিংকের অনুসরণকারীর সংখ্যা শুনলে আপনার চোখ কপালে উঠবে। লিসা ব্ল্যাকপিংকের মূল নৃত্যশিল্পী ও বয়সে সবচেয়ে কনিষ্ঠ সদস্য। ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুসারী ২ কোটি ২০ লাখের বেশি। তিনি হলেন সবচেয়ে বেশি ‘ফলোয়ড’ (অনুসরণীয়) নারী কে পপশিল্পী। 

নামকরণ

ব্ল্যাকপিংক নামটা শুধু যে দুটো রং মিলে হয়েছে, তা কিন্তু নয়। ‘ব্ল্যাকপিংক’ নামকরণের মাধ্যমে ব্যান্ডের সদস্যদের বহুমুখী বৈশিষ্ট্যের কথা বোঝানো হয়। তবে ব্যান্ডের প্রযোজক প্রতিষ্ঠান ওয়াইজি এন্টারটেইনমেন্টের একজন জানান, ব্ল্যাকপিংক অর্থ ‘সৌন্দর্যই সবকিছু নয়’। মূলত এ দিয়ে বোঝায়, তারা এমন একটা দল যারা কেবল সৌন্দর্যকেই উপস্থাপন করে না, গুণ বা দক্ষতারও প্রদর্শন করে। ‘ডু–ডু ডু–ডু’ গানের প্রথম লাইনটি এজন্যই এমন-‘আই মে লুক সুইট, বাট আই ডোন্ট অ্যাক্ট লাইক ইট’ (আমি হয়তো দেখতে সুন্দর, তবে আমি কিন্তু এমন নই)। 

পরিবেশনা

ব্ল্যাকপিংকের গানের সংখ্যা কিন্তু খুব বেশি না। ‘কিল দিস লাভ’ মুক্তির আগ পর্যন্ত ব্যান্ডের কোরিয়ান ভাষার গানগুলোর জাপানিজ সংস্করণসহ ২০টির কম গান বের হয়েছে। কিন্তু যে গানগুলোই প্রকাশিত হয়েছে, অনেকটা ‘অ্যাটম বোমা’র মতো ফেটেছে বলতে পারেন। চোখধাঁধানো কোরিওগ্রাফির কারণে ভক্তরা গানগুলো নানা মাধ্যমে কভার করছেন অহরহ। 

সাফল্য

সদস্যদের দুর্দান্ত ব্যক্তিত্ব, র​্যাপিং, কণ্ঠ আর চটকদার মঞ্চ উপস্থিতি অগণিত ভক্তকে টেনেছে ব্ল্যাকপিংকের দিকে। ‘হুইসেল’ ও ‘বুমবায়াহ’ গান দুটি নিয়ে ব্যান্ডের প্রথম অ্যালবাম ‘স্কয়ার ওয়ান’ মুক্তি পায় ২০১৬ সালে। তখন এক মাসের কম বয়স ব্ল্যাকপিংকের। তখনই বিলবোর্ড চার্টে শুরু হয়ে যায় তোলপাড়। দুটি গানই ৬ হাজার বারের মতো অর্থের বিনিময়ে ডাউনলোড হয়, বিলবোর্ডের ‘ওয়ার্ল্ড ডিজিটাল সংস’-এ এক ও দুই নম্বর স্থান দখল করে নেয় গান দুটি! ২০১৮ সালে আগের চেয়ে বড় পরিসরে আন্তর্জাতিকভাবে নজরে আসতে থাকে ব্ল্যাকপিংক। ব্রিটিশ শিল্পী ডুয়া লিপার সঙ্গে এক হয়ে ‘কিস অ্যান্ড মেকআপ’ গানটি সেই বছর সাড়া ফেলে অনেক। দ্বিভাষী এ গানটি স্পটিফাইতে ২০ কোটি বারের বেশি স্ট্রিম করা হয়েছে। 

খ্যাতির সবচেয়ে বড় পালকটিও গত অক্টোবরে ব্ল্যাকপিংকের মুকুটে বসেছে, ইন্টারস্কোপ রেকর্ডস অ্যান্ড ইউনিভার্সাল মিউজিক গ্রুপের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে। চুক্তি শেষে এক সাক্ষাৎকারে দলটির প্রযোজক প্রতিষ্ঠান ওয়াইজি এন্টারটেইনমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইয়াং হিয়ুন সুক বলেন, ‘আমরা সবচেয়ে বড় মিউজিক কোম্পানি ইউনিভার্সাল মিউজিক গ্রুপের সঙ্গে থেকে কাজ করব। তারা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্ল্যাকপিংকের অভিষেক ও প্রচারে কাজ করবে।’ এরপর অনেক দিন পার হয়েছে। এরই মধ্যে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়াসহ বেশকিছু দেশে কনসার্ট করে ফেলেছে ব্ল্যাকপিংক। গত এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার কোচেলা ভ্যালি মিউজিক অ্যান্ড আর্টস ফেস্টিভ্যালের মতো বড় মঞ্চে নিজেদের তুলে ধরেছে ব্ল্যাকপিংক। 

ব্লিংক

ব্ল্যাকপিংকের ভক্তদের বলা হয় ‘ব্লিংক’। ২০১৭ সালের ১৪ জানুয়ারি ইনস্টাগ্রামে ব্ল্যাকপিংকের একটি ছবি পোস্ট করা হয়। কালো ব্যাকগ্রাউন্ড, ক্যাপশনে লেখা ‘ব্লিংক’। ভক্তদের জন্য সুন্দর একটি নাম ঠিক করে দেয় খোদ ব্ল্যাকপিংকই। 

তবে সবকিছুর জন্য প্রশংসার দাবিদার মূলত ব্যান্ডের চার সদস্য। দলের ২২ থেকে ২৪ বছর বয়সী সদস্যরা প্রত্যেকে ৪ থেকে ৬ বছর করে সময় নিয়ে নিজেদের প্রস্তুত করেছেন। দলের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ সদস্য জিসো অনর্গল ইংরেজি না বলতে পারলেও কোরিয়ান, জাপানি আর চীনা ভাষায় দক্ষ। মঞ্চের বাইরে দেখা যায় জিসোই আগলে রাখেন দলের অন্যদের। জেনি, রোজ, লিসার কথা লিখে শেষ করা যাবে না। জেনির দীর্ঘ অভিজ্ঞতা, সেই সঙ্গে পোকাভীতি; রোজের অসাধারণ কণ্ঠ, সেই সঙ্গে ছেলেমানুষী আচরণ; নাচে লিসার পারদর্শিতা, সেই সঙ্গে দলের সদস্যদের সঙ্গে তাঁর দুষ্টুমি—এই সবকিছুই ভক্তদের কাছে এক বিশেষ পাওয়া। 

মুসাব্বির হুসাইন