Thank you for trying Sticky AMP!!

ইন্ডিয়ান ফিল্ম বাজারে বাংলাদেশের দুই সিনেমা

নির্মাতা মাকসুদ হোসাইন ও তানহা জাফরীন

ভারতের 'ফিল্ম বাজার' তরুণ নির্মাতাদের জন্য দারুণ আগ্রহের এক জায়গা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নামীদামি প্রযোজক, চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজকসহ অন্যদের সঙ্গে সম্মিলন ঘটিয়ে দেয় এ বাজার। এ বছর এ বাজারে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন বাংলাদেশের নির্মাতা মাকসুদ হোসাইন ও তানহা জাফরীন। ফিল্ম বাজারের কো-প্রোডাকশনে অংশ নিচ্ছে তাঁদের দুটি সিনেমা। ফিল্ম বাজারের এ আয়োজনের উদ্যোক্তা ভারতের ন্যাশনাল ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (এনএফডিসি)।
আমেরিকায় ফিল্ম প্রডাকশনের ওপর পড়াশোনা করেছেন মাকসুদ হোসাইন। এর আগে ১৫টির মতো স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা বানিয়ে হাত পাকিয়েছেন।

থ্রি বিউটিজ নামে স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা ২০০৬ সালে স্টুডেন্ট একাডেমি পুরস্কার জয় করে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কিছু চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়েছে তার বেশ কিছু স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি। ফিল্ম বাজারে অংশ নিতে যাওয়া তাঁর ছবিটির নাম সাফা। এটি তাঁর প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি। নারীপ্রধান দুই চরিত্রকে কেন্দ্রে রেখে লেখা হয়েছে ছবির চিত্রনাট্য। মাকসুদ বলেন, 'ভারতের ফিল্ম বাজারের মতো জায়গায় প্রথম সিনেমা দিয়ে অংশ নেওয়ার সুযোগ আমার জন্য গৌরবের। মনে করছি এটা আমার জন্য অনেক বড় সুযোগ। সিনেমাটি নিয়ে অনেক দিন ধরে কাজ করছি। ফিল্ম বাজারের এই সুযোগের সৎ ব্যবহার করব।'

প্রায় ২৪ বছর আগে মাকসুদের স্ত্রী এবং শাশুড়ি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন। তারপর থেকেই হুইলচেয়ারে চলাফেরা করেন শাশুড়ি। সেই ঘটনায় মানসিকভাবে আঘাত পেয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী। তিনি তখন ১২ বছরের কিশোরী। সেই গল্পটিই ঢাকার একটি নিম্নবিত্ত পরিবারের মধ্যে মেলাবেন এই নির্মাতা। যেখানে সাফা নামের এক নারী মাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেন।

দিল্লির এশিয়ান একাডেমি অব ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন (এএএফটি) থেকে ফিল্ম মেকিং (ডিরেকশন অ্যান্ড প্রডাকশন) এর ওপর মাস্টার্স করে মুম্বাইতে ৩ বছর কাজ করেছেন তানহা জাফরীন। পরে ঢাকায় এসে বিজ্ঞাপন নির্মাণ শুরু করেন। নাটক, বিজ্ঞাপন, স্বল্পদৈর্ঘ্য, তথ্যচিত্র বানিয়ে অনেক আগেই সুনাম অর্জন করেছেন এই নির্মাতা। দুই বছর ধরে নিজের গল্প থেকে রাজীব রাফির সঙ্গে লিখছিলেন প্রথম সিনেমা জলছবির চিত্রনাট্য। সিনেমাটির শুটিং নিয়েও একটু একটু করে এগোচ্ছিলেন। এমন সময় এ সুযোগ পেয়ে খুশি এই নির্মাতা। তবে এ আনন্দ মন ভরে উপভোগ করতে পারছেন না জাফরীন, 'এ সুযোগের জন্য আমি অপেক্ষা করছিলাম। আমি অনেক এক্সাইটেড। কিন্তু মনটা খারাপ। এমন সময় খবরটি পেলাম, যখন আমার বাবার ক্যানসার ধরা পড়েছে। আমি এখন বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে রয়েছি। এর মধ্যেই আমাকে ফিল্ম বাজার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে সকল ডকুমেন্ট পাঠাতে হচ্ছে। অনেকটা হুট করেই সবকিছু হয়ে গেল। ফাইনালি যে সুযোগটা চাচ্ছিলাম, সেটাই পেয়ে গেলাম। কাজটি নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেতে চাই।' গল্প সম্পর্কে তিনি আরও জানান, বোবায় ধরা (স্লিপ প্যারালাইজড) একটি ছেলের গল্প। এ অসুস্থতাকেই ছেলেটি শিল্পে রূপান্তরিত করে। তার সংগ্রামকেই পর্দায় তুলে ধরা হয়েছে।

আগামী ২০ নভেম্বর থেকে ভার্চ্যুয়ালি বসছে ফিল্ম বাজার, চলবে ২৫ তারিখ পর্যন্ত। তাই এখন ভীষণ ব্যস্ত এই দুই নির্মাতা। জীবনবৃত্তান্ত, কাজের পরিকল্পনাসহ নানান কিছু অনলাইনে জমা দিতে হচ্ছে। এ আয়োজনে, বিভিন্ন দেশ থেকে ফান্ড পাওয়ার জন্য প্রযোজকদের কাছে তাঁদের ছবিটি পিচ করতে হবে। প্রযোজকেরা সন্তুষ্ট হলেই সিনেমাটির সঙ্গে যুক্ত হবেন তাঁরা। ফিল্ম বাজারের সিনেমাগুলো বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবেও সুযোগ পায়। এসব সিনেমার পূর্বপরিকল্পনা উৎসব আয়োজকদের আগ্রহের জন্ম দিতে পারলেই পরে তাঁরা নির্মিত সিনেমাটি দেখতে চাইবেন। বড় উৎসবগুলোতে এভাবে অনেক নির্মাতার ভাগ্যের দুয়ার খুলে যায়। এ ফিল্ম বাজারে গত বছর নুহাশ হুমায়ূনের মুভিং বাংলাদেশ সিনেমাটি নির্বাচিত হয়। সিনেমাটি পরে কান চলচ্চিত্র উৎসবের মার্শে দ্যু ফিল্মে নির্বাচিত হয়। সিনেমাটি সম্প্রতি টোকিও চলচ্চিত্র উৎসবের ছবির বাজারে অংশ নিয়েছে।