Thank you for trying Sticky AMP!!

ই-টিকেটিং ও সেন্ট্রাল সার্ভারে বাঁচতে পারে চলচ্চিত্রশিল্প

মুক্তির প্রত্যাশায় থাকা ‘মায়াবতী’ চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাই চলচ্চিত্রের অবস্থা মৃতপ্রায়। এটি বলেছেন চলচ্চিত্রের প্রযোজক, পরিচালক, অভিনয়শিল্পীসহ চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ধীরে ধীরে বন্ধ হচ্ছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সিনেমা হলও। কারণ হিসেবে উঠে এসেছে সিনেমার বুকিং এজেন্ট, প্রযোজকদের হলে হলে পাঠানো প্রতিনিধি ও হল কর্মকর্তাদের অসাধু তত্পরতা। পাশাপাশি উঠে এসেছে টিকিট বিক্রির টাকার সুষম বণ্টিত না হওয়াসহ বেশ কিছু বিষয়। তবে বর্তমান সময়ে বুকিং এজেন্ট ও হল প্রতিনিধিদের অসাধু তৎপরতাকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন এদের হাত থেকে পরিত্রাণের উপায়ও।
চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, এখন সিনেমা বাঁচাতে এবং প্রযোজকদের ফেরাতে হলে প্রেক্ষাগৃহ ও প্রযোজকদের মধ্যে অবস্থান করা অসাধু বুকিং এজেন্ট, হল প্রতিনিধির মতো মধ্যস্বত্বভোগীদের বাদ দিতে হবে। এর বিকল্প হিসেবে দরকার বিএফডিসিতে সেন্ট্রাল সার্ভার স্থাপন এবং প্রেক্ষাগৃহে ই-টিকেটিং ব্যবস্থা চালু।

এ ব্যাপারে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘বিএফডিসিতে সেন্ট্রাল সার্ভার বসাতে হবে। হলে হলে থাকবে ই-টিকেটিং ব্যবস্থা। যেসব হলে ছবিটি প্রদর্শিত হবে, ওই সব প্রেক্ষাগৃহে এফডিসি থেকে বিশেষ গোপন কোড নম্বর দেওয়া হবে। কোড নম্বর ওই সব হলের সিস্টেমে প্রবেশ করানো হলেই নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত প্রদর্শিত হবে ছবিটি। কোনো বুকিং এজেন্টের আর দরকার হবে না।’

মুশফিকুর রহমান গুলজার আরও বলেন, ‘প্রেক্ষাগৃহে অনলাইনে টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা হলে সেন্ট্রাল সার্ভারে বসেই হলের টিকিট বিক্রির সঠিক সংখ্যা জানা যাবে। প্রযোজকও অনলাইনে প্রেক্ষাগৃহের টিকিট বিক্রির সঠিক সংখ্যা জানতে পারবেন। ফলে আর হলে হলে প্রতিনিধি পাঠাতে হবে না। এভাবে টিকিট বিক্রিতে স্বচ্ছতা এলেই প্রযোজকের বিনিয়োগের সুরক্ষা হবে। প্রযোজকেরা আবারও বড় বাজেট নিয়ে ফিরতে পারবেন সিনেমাতে।’
সিনেমার বর্তমান পরিস্থিতির কারণে বছরখানেক ধরেই সিনেমা নির্মাণ করছেন না প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান হার্টবিট প্রোডাকশন্সের চেয়ারম্যান তাপসী ঠাকুর। ই-টিকেটিং ও সেন্ট্রাল সার্ভার স্থাপন করা হলে শতভাগ না হলেও সিনেমার প্রধান একটি সমস্যার সমাধান হবে। সিনেমার মোড় ঘুরে যাবে বলে মনে করেন এই প্রযোজক।

তাপসী ঠাকুর বলেন, ‘এ সময়ে সিনেমাকে বাঁচাতে ই-টিকেটিং ও সেন্ট্রাল সার্ভার ব্যবস্থা খুবই জরুরি। এর মাধ্যমে টিকিট বিক্রির টাকার সঠিক হিসাব ঘরে বসেই পাব আমরা। টিকিট বিক্রির সঠিক হিসাব দিয়ে দর্শকের সংখ্যাও গোনা যাবে। এতে দর্শক সিনেমা দেখছেন কি দেখছেন না, তা-ও বোঝা যাবে। তার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী সিনেমাগুলো তৈরিরও একটা দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে। মাঝে বুকিং এজেন্ট, প্রতিনিধির জন্য বাড়তি খরচ কিংবা টিকিট বিক্রির টাকা নিয়ে প্রতিনিধিদের গোলমাল পাকানোর সুযোগ থাকবে না।’

এদিকে দুই বছর আগেই বিষয়টি মাথায় নিয়েছে বর্তমান সরকার। ‘দেশব্যাপী সিনেমা হল ডিজিটালাইজেশন প্রকল্প’ নেওয়া হয়েছে। এর বাজেট ধরা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। ওই প্রকল্পে দেশব্যাপী সিনেমা হল আধুনিকায়নের পাশাপাশি বিএফডিসিতে সেন্ট্রাল সার্ভার স্থাপন করার কথা রয়েছে। পাশাপাশি প্রেক্ষাগৃহগুলোতে ই-টিকেটিং যুক্ত করার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রকল্পটি নিয়ে দুই বছর ধরে কাজ করছে তথ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রকল্পটি নিয়ে কোনো সুখবর নেই। নেই কোনো অগ্রগতি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির এক সদস্য ও বিএফডিসির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রকল্পটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় পাস করাতে চায় না। বেশ কিছুদিন আগে থেকে নতুন করে আবার প্রকল্পটির সংশোধন করছে তথ্য মন্ত্রণালয়। নতুন অর্থবছর শুরু হয়েছে। সংশোধন করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে প্রকল্পটি।’

এদিকে প্রকল্পটির উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দীন বলেন, ‘কোনো অগ্রগতি না পেয়ে মাস দুয়েক হলো প্রকল্পটির আর কোনো খোঁজখবর রাখি না।’
চলচ্চিত্র প্রযোজক পাড়াখ্যাত একসময়কার ব্যস্ত কাকরাইলও নীরব হয়ে এসেছে। প্রযোজকেরা অফিস গুটিয়ে ছাড়ছেন কাকরাইল। ছবির অভাবে কমছে সিনেমা হল। ১ হাজার ২০০ হল থেকে সারা দেশে এখন নিয়মিত সিনেমা হলের সংখ্যা মাত্র দেড় শতাধিক। প্রতিবছরই কোনো না কোনো জেলা থেকে সিনেমা হল বন্ধের খবর পাওয়া যাচ্ছে। আর এর জন্য আপাতত দায়ী করা হচ্ছে সিনেমার বুকিং এজেন্ট, প্রযোজকদের হলে হলে পাঠানো প্রতিনিধি ও হল কর্মকর্তাদের অসাধু তত্পরতা, টিকিট বিক্রির টাকার সুষম বণ্টিত না হওয়া, হলের আধুনিকায়ন না হওয়াসহ বেশ কিছু বিষয়কে। তবে বর্তমান সময়ে বুকিং এজেন্ট ও হল প্রতিনিধিদের বিষয়টিকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।