Thank you for trying Sticky AMP!!

মাত্র ১৩ বছর বয়সে ‘সুতরাং’ ছবিতে কাজ করেছিলেন কবরী

কবরীর প্রথম দিনের শুটিংয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল

কবরী অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘সুতরাং’। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৩ বছর। নাচ করলেও অভিনয়ের কিছুই জানতেন না। পরিচালক তাঁকে ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল, লং শট, টপ শট ও শুটিংয়ে টেকনিক্যাল বিষয়গুলো বোঝাচ্ছিলেন। পরে একটি রোমান্টিক দৃশ্য দিয়ে শুটিং শুরু হয়। কী করবেন কোনো কিছু বুঝে উঠতে পারছিলেন না এই কিশোরী অভিনেত্রী। ঘটনাক্রমে শুটিংয়ের একসময় সিনেমাটির পরিচালক ও সহ-অভিনেতা সুভাষ দত্ত কবরীকে জোরে চড় মারেন।

প্রথম দিনের শুটিংয়ের ঘটনা, খুঁটিনাটি সবই তাঁর শেষ বয়সেও মনে ছিল। সেদিন শুটিংয়ে যাওয়ার পর কবরী চারদিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলেন। চারদিকে মানুষ জড়ো হয়ে আছেন। সবার চোখ তাঁর দিকে। এর মধ্যে চিত্রনাট্য নিয়ে নির্মাতা সুভাষ দত্ত তাঁকে দৃশ্য বুঝিয়ে দিয়ে বলছেন, ডায়ালগ বলার সময় বেশি বড় করে হাঁ করবেন না। ঠোঁট যেন বেশি না ঝুলে পড়ে। চোখগুলো মোটেও বড় করবে না, একদম ছোট ছোট করে কথা বলবে। এসব শুনে কবরী মাথা ঝাঁকিয়ে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিলেন। সেদিন দৃশ্যটি ছিল এমন, পেয়ারাগাছে উঠে সরু একটি ডাল থেকে পেয়ারা পাড়তে হবে।

সুতরাং ছবিতে সুভাষ দত্তের সঙ্গে কবরী।

পেয়ারাগাছের ডালটা দেখে তাঁর ভয় লাগছিল। কিন্তু পরিচালককে কিছু বলতে পারছিলেন না কবরী। কারণ, তিনি আগেই বলেছেন, এমন পেয়ারাগাছে অনেকবার তাঁর ওঠা হয়েছে।

কিন্তু পেয়ারাগাছে উঠতে গিয়ে কিছুটা ভয় পেয়ে যান। তাঁর চিন্তা, যদি গাছ থেকে পড়ে যান! নিচ থেকে পরিচালক বলেন, ক্যামেরা-অ্যাকশন, যে কথা সেই কাজ। পেয়ারা ছিঁড়তে ডালে পা দিতেই তিনি সঙ্গে সঙ্গে গাছ থেকে মাটিতে পড়েন। কোমর ও পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা পেয়ে কান্নাকাটি করছেন। এই ঘটনা সম্পর্কে কবরী বলেছিলেন, ‘আমি যে গাছ থেকে পড়ব, এটা নির্মাতা আগে থেকেই জানতেন। পরে বুঝতে পেরেছি, কেন তিনি আগেই বলেন না। পড়ার পরে সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্য কাট হলো।’ দত্ত দা (সুভাষ দত্ত) দূর থেকে এসে বললেন, ‘দেখি দেখি বলে তিনি এগিয়ে এসে দেখেন, পায়ের গোড়ালির পাশ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল।’

সুভাষ দত্ত ও কবরী

চড় খেয়ে কান্না বন্ধ হয়ে গেল কবরীর। তখন তিনি লজ্জায় মাথা ওপরে তুলতে পারছিলেন না। সবাই তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকায় তিনি অপমানিত বোধ করেছিলেন। সে সময় দূর্বা ঘাস চিবিয়ে নির্মাতা পায়ের ছিলে যাওয়া অংশে লাগিয়ে দিলেন। পরে সুভাষ দত্ত কবরীকে খুবই আদর করেছিলেন। নির্মাতা তাঁকে বলেছিলেন, ‘তুমি কী রাগ করেছ?’ তখন কবরী বলেছিলেন, ‘আপনি এত লোকের সামনে আমাকে থাপ্পড় মারতে পারলেন? আমি কষ্ট পেয়েছি।’ তখন নির্মাতা জানান, আরে বোকা মেয়ে এটা ছিল শুটিংয়ের অংশ। এটা শর্ট। কবরী থ হয়ে তাকিয়ে আছেন। একটা ঘটনা থেকে তাৎক্ষণিকভাবে আরেকটা শট হতে পারে, প্রথম দিনের শুটিং থেকে এটাই ছিল কবরীর বড় শিক্ষা।

সেদিন তাঁর অভিনয় দেখে চিত্রগ্রাহক থেকে শুরু করে সবাই খুবই প্রশংসা করেছিলেন। কবরী ভেবেছিলেন হয়তো তাঁকে দিয়ে অভিনয় হবে। প্রতিদিনের অভিনয় থেকে শিখতে শুরু করেন কবরী। তাঁকে সিনেমায় গানের সঙ্গে ঠোঁট মেলাতে হতো। এটা ঠিকভাবে করার জন্য তিনি গান শেখা শুরু করেন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি অভিনয়ের খুঁটিনাটি শিখেছেন। যার ফলাফল তিনি দেশের সফল একজন অভিনেত্রী হয়ে উঠতে পেরেছিলেন। এই জন্য তাঁকে শুধু অভিনয় নিয়ে থাকতে হয়েছে।

কবরী কখনোই কান্নার জন্য গ্লিসারিন ব্যবহার করতেন না

কিছু না বুঝেই তিনি অভিনয়ে এসেছিলেন। কিছুটা নাচ জানতেন এই যা। নির্মাতা সুভাষ দত্ত ছিলেন থিয়েটার করা মানুষ। কবরী তাঁর কাছে অভিনয়ের খুঁটিনাটি বুঝে নেন। একবার শুটিংয়ে তাঁকে একজন চিত্রগ্রাহক বলেছিলেন, ক্লোজ শটে ইমোশনটা ভালো ধরা যায়। তিনি কবরীকে শিখিয়েছিলেন, ধরো, ক্যামেরা তোমার নায়ক, তার সামনে তাকিয়ে অতীতের একটি স্মৃতি স্মরণ করো, যা তোমার চোখে জল এনে দেবে।

দীর্ঘক্ষণ কবরী ক্যামেরার সামনে তাকিয়ে হুহু করে কাঁদছিলেন। তখন নির্মাতা বলেছিলেন অ্যাকশন। সেদিন সেটের সবাই তাঁর কান্নায় অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। সেই থেকে কবরী কখনোই কান্নার জন্য গ্লিসারিন ব্যবহার করতেন না।

সুতরাং ছবিতে সুভাষ দত্তের সঙ্গে কবরী।

কবরী মনে করতেন, প্রতিটা মানুষের কাছ থেকেই শেখার আছে। শুটিংয়ের লাইনম্যান, প্রোডাকশন বয় থেকে শুরু করে সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতেন। নিয়মিত তাঁদের খোঁজখবর নিতেন। মানুষ হিসেবে তিনি সবাইকে সম্মান দিতেন। কবরীর মতে, ‘মানুষের মেধা নিয়ে জন্ম হয় না। তাকে তৈরি করতে হয়। কাজ, জানাশোনার মধ্য দিয়েই তাঁর মেধার বিকাশ ঘটেছে। এ জন্য প্রবল ইচ্ছেশক্তি দরকার। শুধু আসলাম–গেলাম করলে জীবনে কিছু হবে না। ধৈর্য ধরতে হবে। এ জন্য তিনি ১৯৬৩ সাল থেকে আমৃত্যু ধৈর্য ধরে শিখেছেন এবং নতুনদের শিখিয়েছেন।’