Thank you for trying Sticky AMP!!

চলচ্চিত্রপাড়ায় বিবর্ণ ঈদ

সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে ঈদে এই সিনেমাগুলো বিনোদন জোগাত বড় পর্দায়। গ্রাফিক্স: আমিনুল
>
  • টানা চার মাস বন্ধ সিনেমা হল।
  • দুই ঈদেই জ্বলছে না সিনেমা হলের আলো।
  • কষ্টে দিন যাপন করছেন সিনেমা হল কর্মচারীরা।

করোনাভাইরাসের প্রকোপে গত চার মাস প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ। ছবি মুক্তি না পাওয়ায় ঈদুল ফিতরে চলচ্চিত্রপাড়া ছিল রংহীন, নিষ্প্রভ। ঈদুল আজহা কড়া নাড়ছে। কিন্তু খুলছে না সিনেমা হল। এবারও মুক্তি পাচ্ছে না কোনো সিনেমা। তাই এবারও চলচ্চিত্রের রঙিন জগতের মানুষদের ঈদ হবে বিবর্ণ।

সরকারি আদেশে গত প্রায় চার মাস বন্ধ থাকা সিনেমা হল এই ঈদেও খুলে দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। খোলার সম্ভাবনাও নেই। কারণ, ঈদ আসতে যে সময় বাকি, সেই অল্প সময়ের মধ্যে সিনেমা হলগুলো ঈদের জন্য প্রস্তুত করাও সম্ভব নয়।
সাধারণ দিনে মুক্তির থেকে ঈদ উৎসবে ছবি মুক্তিতে আয় বেশি হয়। যে কারণে শুধু তারকারাই নন, চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও ঈদের দিকে তাকিয়ে থাকেন। কিন্তু এই ঈদেও প্রেক্ষাগৃহ খোলার পরিস্থিতি না থাকায় চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট সবার জন্য ঈদ আসছে নিষ্প্রভ হয়ে।

ঢাকার ডেমরার মতিমহল ও রানীমহল সিনেমা হল দুটিতে বহু বছর ধরে কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন জিয়াউল হক। হল বন্ধ হওয়ার পর নিজ গ্রাম নারায়ণগঞ্জের বাঘাপাড়ায় চলে গেছেন। সেখানে অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে তাঁর। তিনি বলেন, ‘প্রথম কয়েক মাস মালিকের কাছ থেকে কিছু টাকা পেয়েছি। দুই হলে প্রায় ১৫ জন কর্মকর্তা–কর্মচারী। হল বন্ধ থাকলে মালিকই–বা টাকা কোথা থেকে দেবেন। সারা বছর যা-ই হোক, ঈদের সময় হল থেকে আয় বেশি হয়। তখন আমাদের ঈদটাও ভালো কাটে। এ বছর পরপর দুটি ঈদই কষ্টের মধ্যে পার করতে হচ্ছে।’
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় সিনেমা হল যশোরের মণিহারের কমর্চারী প্রায় ৩০ জন। হল বন্ধের মধ্যে দুই মাস ঠিকঠাক বেতন দিতে পারলেও এখন আর পারছেন না হলের মালিক। হলটির ব্যবস্থাপক তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘এ বছর ঈদ বলে কিছু নেই আমাদের জীবনে। চার মাস হল বন্ধ। মার্চ ও এপ্রিল মাসের বেতন দিয়ে অর্ধেক কর্মচারীকে হল খোলার আগপর্যন্ত ছুটি দিয়েছি। ছুটিতে থাকা কর্মচারীরা কোনো বেতন পাবেন না।’

নিজের হলের কর্মচারীদের দুর্দশার কথা নিজেই জানালেন নারায়ণগঞ্জের সাথী সিনেমা হলের মালিক ও প্রদর্শক সমিতির সহসভাপতি মিয়া আলাউদ্দীন। তিনি বলেন, ‘আমার হলে সাতজন কর্মচারী। আমি ঠিকমতো বেতন দিতে পারছি না। হলের নিচে কয়েকটি দোকান আছে, সেখান থেকে যা ভাড়া পাচ্ছি, তাঁদের মধ্যে ভাগ করে দিচ্ছি। ঈদে হল খুললে কিছু আয় হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কমর্চারীদেরও ঈদটা ভালো যেত।’

এ রকম ঢাকা ও ঢাকার বাইরের সব বড় বড় হল যেমন মধুমিতা, বলাকা—সব হলের একই অবস্থা। কোনো কোনো সিনেমা হল বন্ধ হওয়ার জোগাড়। প্রদর্শক সমিতির সাবেক নেতা ইফতেখার উদ্দিন বলেন, সাধারণ সময়ে তেমন ভালো ছবি থাকে না। আয়ও হয় না। ঈদকেন্দ্রিক ছবিগুলো বড় বাজেটের হয়। দুই ঈদের আয় থেকেই সারা বছর কর্মচারীদের বেতন দিয়ে হলটা বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করি।’
শুধু প্রদর্শক, তারকা এবং সিনেমা হলের কর্মচারীরাই কষ্টে নেই, কষ্টে আছেন পরিচালক ও প্রযোজকেরাও। এমনিতেই চলচ্চিত্রশিল্পের অবস্থা ভালো নয়, তার মধ্যে চার মাস বন্ধ থাকায় অনেক পরিচালক ও প্রযোজক নিজেদের গুটিয়ে নেওয়ার চিন্তা করছেন।