নতুন সিনেমাও নেই, দর্শকও নেই

নভেম্বর মাসে শুক্রবার এসেছে চার দিন। শুক্রবারের সঙ্গে নতুন সিনেমা মুক্তির একটা যোগসূত্র আছে। আজ মাসের শেষ দিন। এই চার শুক্রবারে মুক্তি পায়নি একটি নতুন ছবিও। প্রেক্ষাগৃহে পুরোনো ছবি চালালেও, সিনেমা হল খাঁ খাঁ, দর্শক নেই।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতি থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে, নভেম্বর মাসে কোনো নতুন সিনেমা মুক্তি পায়নি। এমনকি ডিসেম্বর মাসেও একই অবস্থা চলমান থাকার আশঙ্কা আছে। এদিকে সেন্সর সনদ পেয়ে মুক্তির জন্য প্রস্তুত আছে বেশ কয়েকটি সিনেমা। সেন্সর বোর্ডে জমা পড়েছে কিছু, আর কিছু ছবির প্রযোজনা–পরবর্তী কাজ চলছে। ছবিগুলোর প্রযোজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীতে করোনা সংক্রমণ বাড়ার কারণে দর্শক সিনেমা হলে আসতে চাইবেন না। ফলে সিনেমা মুক্তি দিলে বড় ধরনের লোকসান হওয়ার আশঙ্কায় তাঁরা।

চলতি বছরের মার্চ মাসে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল সান মিউজিক অ্যান্ড মোশন পিকচার্স লিমিটেডের বিশ্বসুন্দরী ছবিটি। কিন্তু করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ায় ছবি মুক্তির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান।

২০ মার্চ বান্ধব সিনেমা মুক্তির দিনক্ষণ ঠিক করা হয়েছিল। করোনার কারণে মুক্তি পায়নি।

নতুন স্বাভাবিকে প্রেক্ষাগৃহ চালু হলে ১১ ডিসেম্বরে ছবিটি মুক্তির নতুন তারিখ চূড়ান্ত করা হয়।কিন্তু করোনা আবার বেড়ে যাওয়ায় সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলেছেন প্রযোজক।

ছবির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান অনুপম কথাচিত্রের স্বত্বাধিকারী অনুপ কুমার বড়ুয়া বলেন, ‘সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল। পোস্টারও বানিয়ে রেখেছি। কিন্তু গত সপ্তাহে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে। তাই এই সময়ে ছবিটি মুক্তি দিয়ে ঝুঁকি নিতে চাচ্ছি না। খুব চমৎকার একটা গল্পের ছবি। আমরা চাই, ছবিটা সবাই প্রেক্ষাগৃহে এসে দেখুক। করোনা পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হোক।’

শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ ২, পরাণ ও বিদ্রোহী ছবির প্রযোজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই মুহূর্তে দর্শকের প্রেক্ষাগৃহমুখী হওয়ার সম্ভাবনা কম। এখনই ছবিগুলো মুক্তির পক্ষে নন তাঁরা। তবে নতুন ছবি মুক্তি না পাওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন সিনেমা হলমালিকেরা। ঢাকার আনন্দ সিনেমা হলে এ মাসে যে কয়টি ছবি প্রদর্শিত হয়েছে, সব কটিই পুরোনো।

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শামসুদ্দীন বলেন, নতুন সিনেমা নেই, পুরোনো সিনেমাও দর্শক টানতে পারছে না। দর্শক সিনেমা হলে আসতে এই পরিস্থিতি একটা বড় বাধা মনে হচ্ছে।

নতুন স্বাভাবিকে চট্টগ্রামের সিলভার স্ক্রিনে নতুন ছবি উনপঞ্চাশ বাতাস মুক্তি পেয়েছিল। শুরুতে দর্শক এসেছিল, কিন্তু পরবর্তীকালে কমে যায়। পুরোনো ছবি দেবীও খুব একটা দর্শক টানতে পারেনি। প্রতিষ্ঠানটির অংশীদার ফারুক আহমেদ বলেন, ‘নতুন সিনেমা ছাড়া প্রেক্ষাগৃহ বাঁচানো সম্ভব না। আমরা পুরোনো ছবি চালিয়ে দেখেছি, দর্শকের তাতে কোনো আগ্রহ নেই।’

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি কাজী শোয়েব রশীদ বলেন, ‘প্রযোজকদের আবেদনের কারণেই সরকারের কাছে প্রেক্ষাগৃহ খুলে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছি। খোলার পর দেখি, নতুন ছবির অভাব! নতুন ভালো সিনেমা না হলে দর্শক আসবে না। কিন্তু কাউকে না কাউকে চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। সাহস করে ভালো মানের নতুন ছবি মুক্তি দিতে হবে।’