Thank you for trying Sticky AMP!!

বিষয়টি কাউকে জানাতে চাইনি

চিত্রনায়িকা ববি। ছবি: ফেসবুক থেকে

করোনা–আতঙ্কের মধ্যে মাসখানেক হলো ঘরেই অবস্থান করছেন চিত্রনায়িকা ববি। ঘরে থাকলেও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন তিনি। সম্প্রতি এই চিত্রনায়িকা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় এসব মানুষের মধ্যে প্রায় তিন শ প্যাকেট খাবার বিতরণ করেছেন। আজ রাতে পথশিশুদের জন্য রান্না করা খাবার বিতরণ করবেন। এর বাইরে ঘরে বসে সিনেমা, ওয়েব সিরিজ দেখে সময় কাটছে। মাঝেমধ্যে রসুই ঘরেও উঁকি দিচ্ছেন এই তারকা।

কত দিন হলো ঘরে অবস্থান করছেন?

প্রায় এক মাস হয়ে গেল। দেশের এই পরিস্থিতিতে নিম্ন আয়ের মানুষ খুব বিপদে আছেন। সবকিছু বন্ধ থাকার কারণে তাঁদের আয় কমে গেছে। মাঝে দুই দিন বেরিয়েছিলাম শহরের নিম্ন আয়ের মানুষকে কিছু সহযোগিতা করার জন্য। আমার কাছে মনে হচ্ছে, এই এক মাস যেন এক যুগ। এভাবে গৃহবন্দী জীবনে আমরা অভ্যস্ত নই। তা ছাড়া মাও পাশে নেই। প্রায় চার মাস হলো বড় বোনের কাছে অস্ট্রেলিয়াতে আছেন। আসার কথা ছিল কিন্তু লকডাউনের কারণে আটকে গেছেন। এ জন্য আরও বেশি খারাপ লাগছে।

নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কী করলেন?

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে রাস্তায় মানুষজনকে বেরোতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। অফিস–আদালত বন্ধ থাকার কারণে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এসব দিনমজুরকে সরকারি বেসরকারিভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সহায়তা করছে। পাশাপাশি বিনোদন জগতের কেউ কেউ খাবার নিয়ে ইতিমধ্যে এসব মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কয়েক দিন ধরে চাল, ডাল, তেল, আলু, লবণ ও সাবান মিলিয়ে তিন শ প্যাকেট খাবার মিরপুর, কারওয়ান বাজার, কমলাপুরসহ কয়েকটি এলাকাতে বিতরণ করলাম। তিন দিন ধরেই ফাঁকে ফাঁকে এই সব মানুষকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। বিষয়টি কাউকে জানাতে চাইনি। এরপরও দেখলাম, আমরা যারা মিডিয়াতে কাজ করি, তাদের ভক্ত–দর্শক আছেন, তাঁরাও তো উৎসাহিত হতে পারেন। অথবা অন্য সহশিল্পীরাও এগিয়ে আসতে পারেন। তাই এ বিষয়ে বললাম। এই মুহূর্তে এই মানুষগুলোর পাশে থাকাটা খুবই জরুরি। কারণ, এ অবস্থা কত দিন চলবে, তা কেউ জানে না।

চিত্রনায়িকা ববি। ছবি: ফেসবুক থেকে

চলচ্চিত্রেও স্বল্প আয়ের শিল্পী ও কলাকুশলীরা আছেন, তাঁদের জন্য কিছু করছেন?

হ্যাঁ। সবাইকে সহযোগিতা করার সামর্থ্য আমার নেই। এর মধ্যে কাছের কিছু প্রোডাকশন বয় ও মেকআপম্যানদের সহযোগিতা করেছি। ঢাকার বাইরেও কিছু অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করেছি।

কোথায়?

আমার দাদার বাড়ি জামালপুরের দেওয়ানপাড়া এলাকাতে। ওখানে নিম্ন আয়ের কিছু মানুষ ও এতিমখানার বাচ্চাদের জন্য কিছু নগদ অর্থ পাঠিয়েছি। ৫ মার্চ ছিল আমার বাবার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। বাবা বেঁচে থাকলে এই সব মানুষের জন্য আরও বড় কিছু করতেন। বাবার আদর্শ নিয়েই অসহায় মানুষের জন্য কিছু করতে চাইছি।

চিত্রনায়িকা ববি। ছবি: ফেসবুক থেকে

ঘরে কীভাবে সময় কাটছে?

ঘরের কাজ করছি। মাঝেমধ্যে রান্নাঘরে যাই। এ ছাড়া বেশির ভাগ সময় সিনেমা ও ওয়েব সিরিজ দেখে সময় কাটছে। কিন্তু নামাজ মিস করি না। আমাদের পরিবারে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার রীতি অনেক আগের।

কী কী সিনেমা দেখলেন?

সব তো মনে নেই। প্রতিদিন রাতেই একটি–দুটি করে সিনেমা দেখা হয়। নেটফ্লিক্সে ‘সি’ ওয়েব সিরিজটা খুব ভালো লেগেছে।

নিজে রান্না করছেন?

হ্যাঁ। কারণ, হাতে প্রচুর সময়। যেহেতু রান্না টুকটাক পারি, তাই করছি। মিক্সড ভ্যাজিটেবলস, নুডলস, চিকেন ফ্রাই—এগুলো মাঝেমধ্যে রান্না করছি। এবার ঝাল পোয়া নামে নতুন একটি আইটেম রান্না করা শিখলাম।

চিত্রনায়িকা ববি। ছবি: ফেসবুক থেকে

করোনাভাইরাসের প্রভাব দিন দিন বাড়ছে এখানে। এই মুহূর্তে আপনার ভক্ত–দর্শকের কাছে কী চাওয়া থাকবে?

যেহেতু এর কোনো ওষুধ নেই। একমাত্র ওষুধ হলো বাইরে না বেরিয়ে ঘরে অবস্থান করা। তাহলে এই রোগ বিস্তার লাভ করতে পারবে না। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে। আমাদের এখানে বিস্তার হলে মহামারি লেগে যাবে। তাই দয়া করে আপনারা খুব জরুরি কাজ ছাড়া একদমই বের হবেন না। তাহলে আপনি নিরাপদ থাকবেন, দেশের মানুষ নিরাপদে থাকবে, দ্রুতই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারব আমরা।

এই পরিস্থিতিতে মানুষের জন্য কোনো শিক্ষণীয় বিষয় অনুভব করছেন কি?

একটি বিষয় লক্ষ করলাম, শুধু আমাদের দেশেই নয়, সারা পৃথিবীর মানুষের মধ্যে একটা মানবতাবোধের জায়গা তৈরি হচ্ছে। ঝগড়াঝাঁটি ভুলে সবাই যেন এক হয়েছেন। মানুষ মানুষের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন। মানুষের প্রতি মানুষের দয়ামায়া তৈরি হচ্ছে। যেটি আগে এতটা ছিল না। যাই হোক, আমার বিশ্বাস, অচিরেই এই দুর্যোগ কেটে যাবে। পৃথিবীর মানুষগুলো আর বেশি মানবিক হবে। পৃথিবীটাও আরও সুন্দর হবে।