Thank you for trying Sticky AMP!!

লকডাউনে ভালো নেই চলচ্চিত্রের শ্রমজীবী মানুষেরা

করোনাকালে কষ্টে আছেন সিনেমার শ্রমজীবী মানুষেরা

করোনাকালে কষ্টে আছেন সিনেমার শ্রমজীবী মানুষেরা। মেকআপশিল্পী, প্রযোজনা ও লাইট-ক্যামেরার কলাকুশলী–সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লকডাউনে প্রায় শতভাগ কর্মহীন তাঁরা। অনেকেই আছেন অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে। কেউ কেউ চলছেন ধারদেনা করে। গতবার লকডাউনে ব্যক্তি, চলচ্চিত্র সংগঠন ও সরকারি কিছু সহায়তা পেয়েছিলেন তাঁরা। তবে এবার কেউ মনে রাখেনি এই মানুষগুলোকে।

বছরের শুরুতে সিনেমার শুটিং পুরোদমে শুরু হয়। তখন কাজ পেতে শুরু করেছিলেন চলচ্চিত্রের এই শ্রমজীবী মানুষেরা। এতে অনেকেই আয় করে পুরোনো দেনা পরিশোধের কথা ভেবেছিলেন। তখনই করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলো। বন্ধ হয়ে গেল মাসুদ রানা, বুবুজান, গ্যাংস্টার, সাইকো, অমানুষসহ বেশ কিছু সিনেমার কাজ। এপ্রিলে একাধিক সিনেমার শুটিং শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সেটা হয়নি। ক্ষেত্রবিশেষে করোনার কারণে বেশি লোক নিয়ে শুটিংয়ের সাহসও করছেন না প্রযোজক-নির্মাতারা। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সহকারী ব্যবস্থাপক সমিতির নেতা প্রোডাকশন ম্যানেজার মোহম্মদ বাহাদুর বলেন, ‘এবার করোনা নিয়ে সবাই শঙ্কায় আছে। বেশির ভাগ নির্মাতাই নতুন করে শুটিং করতে চাইবেন না। আমরা বিপদে পড়েছি, কারণ সামনে ঈদ। আমাদের কারও কাজ নেই। ঈদের পরে কবে কাজ শুরু হবে, জানি না। চলচ্চিত্র প্রোডাকশনের ৮০ শতাংশের বেশি মানুষ বেকার, বাকিরা নাটকের শুটিংয়ে কাজ করছেন।’

বছরের শুরুতে সিনেমার শুটিং পুরোদমে শুরু হয়

চলচ্চিত্র মেকআপ আর্টিস্টদের সমিতির সহসভাপতি মোহম্মদ আলী বলেন, ‘করোনায় সবার আগে বাদ পড়ে মেকআপ আর্টিস্ট। আমরা এক শতাধিক আর্টিস্টের প্রায় সবাই কর্মহীন। আমাদের নিয়ে সরকার ও চলচ্চিত্রের কেউ ভাবছে না। গতবার আমাদের নিয়ে লেখালেখি হওয়ায় সংগঠনের কিছু মানুষ সহায়তা করেছিলেন। পরে শিল্পী ও সিনেমার অনেকের কাছে শুনতে হয়েছে, আমরা তাদের সাহায্যে চলি। সাময়িক অসুবিধায় পড়ে তাদের কাছে আমরা দুস্থ। এই নিয়ে মনোমালিন্য হয়েছে। এবার না খেয়ে মরে গেলেও কারও কাছে সাহায্য চাইতে যাব না।’

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে শুটিংয়ের কারিগরি দলের এক কর্মী জানালেন, প্রায় আট বছর ধরে তিনি এ পেশায় আছেন। তাঁর একার আয়েই চলে চারজনের পরিবার। গতবার ঘরে চাল-ডালও ছিল না তাঁর। ধারদেনা করে কিছুদিন চলেছিলেন। পরে বাধ্য হয়ে এফডিসিতে সাহায্য নিতে যান। পেয়েছিলেন চার-পাঁচ কেজি চাল, ডাল, মুড়ি ও সেমাই। তিনি জানালেন, সে সময় কেউ কেউ পচা চালও পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এসবের বিনিময়ে তারা নানা দিক থেকে আমাদের ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করল। এবারও কষ্টে দিন যাচ্ছে। যত দিন পারি এভাবে চলব, তবু ফটোসেশনে যাওয়ার ইচ্ছা নেই।’

করোনায় এবার কলাকুশলীদের মাথায় হাত

টিটো মিয়া, মিরাজ হোসেন, শাহজাহানসহ আরও বেশ কয়েকজন কলাকুশলীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের প্রতিদিন আয় ৮ ’শত থেকে হাজার টাকা। নিয়মিত কাজ থাকলে মাসে ১৫ থেকে ২০ দিন কাজ করতে পারেন। করোনায় এবার তাঁদের মাথায় হাত। দীর্ঘদিন পর গত ফেব্রুয়ারিতে কাজ বাড়তে শুরু করেছিল। অনেকেরই ঈদের আগপর্যন্ত টানা কাজ ছিল। করোনার কারণে অনেককেরই পারিশ্রমিক দেননি নির্মাতা ও প্রযোজকেরা। তা ছাড়া লকডাউনের আগে কাজ করে তাঁরা বাড়তি কোনো টাকা জমাতে পারেন না। এ জন্য এক মাস শুটিং না থাকায় তাঁদের খারাপ সময় যাচ্ছে। বাংলাদেশ প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নেতা খোরশেদ আলম খসরু বলেন, ‘সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছি। জানতে পেরেছি, অনেকের অবস্থাই ভালো নয়। আমাদের পরিকল্পনা আছে, যারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তাদের পাশে দাঁড়ানো।’

গত বছরও চলচ্চিত্রের বিপদগ্রস্ত শ্রমজীবীদের পাশে দাঁড়িয়েছিল চলচ্চিত্রশিল্পী সমিতি। এবারও শিগগিরই সাংগঠনিকভাবে সহযোগিতা দেবে তারা। সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর বলেন, ‘লকডাউনে অনেকেই ভালো নেই। আমরা ঈদের আগেই সহায়তা দেব।’ চলচ্চিত্রের শ্রমজীবী কলাকুশলীদের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সমিতির পক্ষ থেকে প্রথমত শিল্পীদের সহায়তা করব। তারপর যদি আমাদের পক্ষ থেকে সম্ভব হয়, তাহলে অন্য কলাকুশলীদের পাশেও দাঁড়াব।’

মিশা সওদাগর বলেন, এবারও শিগগিরই সাংগঠনিকভাবে সহযোগিতা দেবে তারা