Thank you for trying Sticky AMP!!

শুটিং না থাকায় মানবেতর জীবন

শবনম ফারিয়ার সঙ্গে প্রোডাকশন বয় হাসিব হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

করোনায় শুটিং বন্ধ হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন চলচ্চিত্র এবং নাটকের প্রযোজনা সহকারীরা। দিন গুনছেন, কবে শুরু হবে শুটিং। পরিবার-পরিজন নিয়ে দুর্দিন যাচ্ছে তাদের। কেউ শুটিংয়ের জন্য ডাকলেই জীবনের মায়া ত্যাগ করে কাজ করতে চান তারা। স্বল্প আয়ে জীবন চলা এই প্রোডাকশন বয়দের জীবন থামিয়ে দিয়েছে করোনাভাইরাস।

প্রতিদিন শুটিংয়ের কাজ করে এই প্রযোজনা সহকারীরা আয় করতেন ৮শ টাকা। এ টাকা দিয়েই চলত তাঁদের সংসার। এ রকম প্রযোজনা সহকারীদের অন্যতম শুকুর মিয়া। তিনি প্রথম দিকে ভেবেছিলেন ১০ দিনের বন্ধ শেষ হলে আবারও শুটিংয়ে ফিরতে পারবেন তিনি। তারপর আর্থিক কষ্ট কেটে যাবে। সেই আশায় ধার-দেনা করে যেনতেন ভাবে পার করেছেন গত পনেরোটি দিন। গতকাল ৫ এপ্রিল খবর নিয়ে জানতে পেরেছেন ১১ তারিখের পরও শুটিং শুরু হওয়ার নিশ্চয়তা নেই। এ কথা শুনেই অর্থনৈতিক সংকটের চিন্তায় মানসিকভাবে ভেঙে পরেছেন তিনি। শুকুর গ্রামের বাড়ি থেকে মুঠোফোনে জানান, ‘মেসে থাকতাম। করোনার কারণে সেখানে কেউ না থাকায় আমার পক্ষে রান্নাবান্না করে খাওয়ার উপায় ছিল না। ধার-দেনা করে বাড়ি আসছি। ভাবসিলাম শুটিং শুরু হলে কোনভাবে চালায়া নিব। কিন্তু এখন আরও বিপদে পরে গেলাম। কালকে একজনকে ফোন দিয়ে শুনলাম এ মাসেও নাকি শুটিং শুরু হবে না। দুই ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী, বাবা-মা নিয়ে অথৈ সাগরে পরে গেছি ভাই। আলুভর্তা, ডাল দিয়ে আজকে না হয় খাইলাম, কালকে কী খামু জানি না। মেস ভাড়া, ধারের টাকা চাইতাছে বাড়িওয়ালা আর পাওনাদার। কই থেকে দিমু কিছুই বুঝতেছি না। শুটিং হইবো কি হইবো না সেই খবর নেওয়ার টাকাও আজ মোবাইলে নাই।’

পূর্ণিমার সঙ্গে প্রোডাকশন বয় হাসিব মোল্লা। ছবি: সংগৃহীত

একটি নাটকের শুটিং ইউনিটে ৩ থেকে ৪ জন প্রোডাকশন বয় থাকে। চলচ্চিত্র হলে টিম ভেদে সেই সংখ্যা গড়ায় ৭ থেকে ৮ জন পর্যন্ত। এসব প্রোডাকশন বয়দের কাজ শুরু হয় সকাল থেকে। সবার আগে তারা শুটিং স্পটে পৌঁছান। ইউনিটে কোন তারকা পৌঁছলেই তাঁদের জিনিসপত্র, মেকআপ রুমে নিয়ে যাওয়া, ইউনিটের সবাইকে চা-নাস্তা খাওয়ানো, শুটিংয়ের জায়গা পরিষ্কার করা, শুটিংয়ের মালপত্র দেখে রাখার কাজটি তারা করেন। টিমের কারও জুতা সেলাইয়ের প্রয়োজন হলেও সেগুলো তারাই করেন। তারা না থাকলে অনেক সময় শুটিং বন্ধ হওয়ারও উপক্রম হয়। শুটিংয়ের সব কাজে শেষে সবার পর গভীর রাতে ছুটি হয় তাদের। সারা দিনের এসব কাজের জন্য তারা পান ৮শ টাকা মজুরি।

ঢাকায় থাকলে নিজের খাবারের চিন্তা করতে হবে, তাই শুটিং বন্ধ হতেই গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী চলে যান প্রোডাকশন সহকারী একরাম হোসেন। সেখান থেকে মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘খুব কষ্টে আছি ভাইয়া। সারা বছর কাজ কম থাকে। মাসে ১০-১২ দিন শুটিং থাকে। এখন আমাদের কাজের মৌসুম। ঈদ পর্যন্ত আমাগো কাজ থাকবো। অহন একটু ভালো থাকুম আর অহনি কাজ নাই। খায়া না-খায়া দিন যাচ্ছে। পরিবারে টাকা দিতে পারতেছি না। কাজ না করলে ক্যামনে বাঁচুম ভাই। আল্লাহর কাছে দোয়া করতেছি যেন করোনা কমে, তাড়াতাড়ি শুটিং শুরু হয়।’

প্রোডাকশন বয় মেরাজ হোসেনের সেলফিতে তাসকিন আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

‘বসদের দিকে মুক চায়া তাকায়া আছি। যাগো কাজ করি, তারা যদি কেউ সাহায্য করে তাহলে আমাদের উপকার হইতো। বাসায় বাজার করার টাকা নাই। পরিবার নিয়ে চলতে পারতেছি না। গ্রামে আব্বায় থাহে। সেখানেও টাকা পাঠাতে হয়। কষ্ট কইরা আব্বারে আজ এক হাজার টাকা পাঠাইছি। সংকটে আছি ভাই। লজ্জা কইরা বলতে পারি না। আবার শুনতাছি এই মাসে শুটিং হবে না। এহন কি করমু। অহনি ঘরে বাজারের টাকা নাই, তারপর দেওয়া হয়নাই ঘরভাড়া। কোন উপায়ে চলতেছি কাউরে বঝাইতে পারমু না।’ কথাগুলো প্রোডাকশন সহকারী হাসিব হোসেনের।

এখনো ৬ জনের সংসার নিয়ে টেনেটুনে চলছেন বাবলু মিয়া। ফেনী থেকে তিনি বলেন, ‘আমার একার আয়ে পরিবার চলে। ছয়জনের সংসার নিয়ে খুব সমস্যায় আছি। যা দেখতেছি, মনে হয় না ঈদের আগে শুটিং শুরু হবে। না হলে কপালে দুঃখ আছে। এখনো কষ্ট করে সংসার চালাচ্ছি। কিন্তু আর এক সপ্তাহ পর কীভাবে চালাব সেটা ভেবে দিশেহারা অবস্থা। চিন্তায় ঘুম হারাম হয়ে গেছে। প্রোডাকশনের কাজ ছাড়া তো অন্য কিছু করি না। জমিজমা থাকলে তো আর ঢাকায় গিয়া প্রোডাকশনের কাজ করতাম না। আমরা অসহায়, একার ইনকামে পরিবার চলে। ক্যামনে কী হয়, কীভাবে চলমু সব আল্লার উপর ছাইরা দিছি।’

মেরাজ হোসেনের বয়স ১৮ বছর। বয়সে ছোট হলেও ৭ জনের সংসারের দায়িত্ব তাঁর ওপর। এখনই কাজ না থাকায় পরিবার নিয়ে সংকটে পড়েছেন তিনি। গ্রাম থেকে মুঠোফোনে তিনি জানান, ‘কত দিন কাজ নাই। বসে বসে খাইতেছি। অহন এমন অবস্থা যে চাল-ডাল কেনার টাকাও প্রায় নাই। কেমনে চলুম এই নিয়ে খুব ঝামেলায় আছি। টাকা-পয়সা হাতে নাই। বাজারে যাইতে পারতেছি না। কে খাওইয়াইবো? ভাই-বোনদের আমার কাজের টাকায় চলতে হয়। আগে একভাবে চলতাম, অহন কষ্টে পড়ছি। অহন কাজ না থাকলে খামু কী ভাবতেছি।’