Thank you for trying Sticky AMP!!

সাদেক বাচ্চু ও মহিউদ্দিন বাহার

সাদেক বাচ্চু ও মহিউদ্দিন বাহারের প্রতি শিল্পীদের শ্রদ্ধা

একই দিনে প্রয়াত হলেন অভিনয়জগতের দুই গুণী শিল্পী। অভিনেতা সাদেক বাচ্চু ও মহিউদ্দিন বাহার। দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন ৬৬ বছর বয়সী সাদেক বাচ্চু। এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়েছিলেন করোনাভাইরাসে। অন্যদিকে ৭৩ বছর বয়সী মহিউদ্দিন বাহার দীর্ঘদিন ধরে হৃদ্রোগ ও কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন। গতকাল সোমবার ভোর ৫টায় মহিউদ্দিন বাহার এবং দুপুর ১২টায় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন সাদেক বাচ্চু। তাঁদের শ্রদ্ধা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন বিনোদন অঙ্গনের তারকারা।
হানিফ সংকেত ও মহিউদ্দিন বাহার

হানিফ সংকেত, উপস্থাপক ও নির্মাতা

চলে গেলেন ইত্যাদির আরও একজন নিয়মিত শিল্পী মহিউদ্দিন বাহার। তাঁর সঙ্গে আমার ছিল আত্মিক সম্পর্ক। শুটিং ছাড়াও প্রায় নিয়মিত তিনি আমার অফিসে-বাসায় আসতেন, গল্প করতেন। অভিনয়কে খুব ভালোবাসতেন। ইত্যাদিতে সর্বশেষ অভিনয় করেছেন ২০১৮ সালের মার্চ মাসে (ব্রাহ্মণবাড়িয়া পর্বে)। সে সময়ও তিনি অসুস্থ ছিলেন, ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারতেন না। কিন্তু অভিনয়ের প্রবল ইচ্ছা থাকায় আমরা অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে নিয়ে আসি। সবাই মিলে কোলে করে তাঁকে দোতলায় ওঠাই। অনেক দিন পর সহশিল্পীদের কাছে পেয়ে সারা দিন তাঁদের সঙ্গে গল্প করে কাটিয়ে দেন তিনি। অত্যন্ত বিনয়ী, সহজ-সরল মানুষ ছিলেন তিনি। অত্যন্ত সাদামাটা জীবন যাপন করতেন। সরকারের সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে ২০০৫ সালে অবসর নেন এই অভিনেতা। মহিউদ্দিন ভাই ছিলেন একজন সৎ, নীতিবান আদর্শ সরকারি কর্মকর্তা। গুণী এই অভিনেতার মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।

সাদেক বাচ্চু ও শাকিব খান

শাকিব খান, চিত্রনায়ক

সাদেক বাচ্চু ভাই শুধু আমার সহশিল্পীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন চলচ্চিত্রে আমার অভিভাবকদের একজন। তিনি আমাকে সব সময় আগলে রেখে ভালো পথে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিতেন, মানসিক সাপোর্ট দিয়ে সাহস জোগাতেন। নিয়মিত খোঁজখবর রাখতেন। সহশিল্পী বা অভিভাবকত্বের বাইরেও আমার প্রতি বাচ্চু ভাইয়ের এক অদৃশ্য মায়া ছিল। তিনি আর নেই, শোনামাত্রই আমার ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে। চলচ্চিত্রে এতগুলো বছর কাজ করে অনেকের সঙ্গে পরিচয় ও সুসম্পর্ক হলেও সবাই আপন হতে পারেননি। হাতে গোনা কিছু মানুষ হৃদয়ে ঠাঁই পেয়েছেন। তাঁদেরই একজন ছিলেন সাদেক বাচ্চু ভাই। তাঁর সঙ্গে মন খুলে কথা বলতাম। সবকিছু শেয়ার করতাম। তিনি ভালো কাজে যেমন উৎসাহ দিতেন, তেমনি মন্দ শুনলে কষ্ট পেতেন। এমন গুণী অভিভাবক আর কোথায় পাব।

ওমর সানী, চিত্রনায়ক

সাদেক বাচ্চু একটা নাম, একটা ইতিহাস। বহু বছর আগে থেকেই তাঁর শিডিউল পাওয়া দুষ্কর ছিল। আখেরি হামলা, মুক্তির সংগ্রাম, রঙিন রংবাজসহ বহু ছবিতে আমরা একত্রে কাজ করেছিলাম। এবার বুঝি আমাদের পালা। ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি সবার কাছে। ক্ষমা করবেন। বাচ্চু ভাই আমার জীবনে ছবি হয়ে থাকবেন।

রিয়াজ, চিত্রনায়ক

আর কখনো রাতে ফোন করে কেউ বলবে না, ‘আহা রে তোমাকে অনেক রাতে ফোন দিলাম...’ ওপারে ভালো থাকুন বাচ্চু ভাই।

সাদেক বাচ্চু ও আরিফিন শুভ

আরিফিন শুভ, চিত্রনায়ক

তাঁর সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। শুটিংয়ের ফাঁকে আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিয়েছি, অভিনয় নিয়ে কথা বলেছি। তিনি আমাকে খুব পছন্দ করতেন। তাঁর একটা কথা আমার অনেক দিন মনে থাকবে। বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা একটা পাকা দালান পেয়েছিলাম। সেই দালানেই আমরা থাকতে শুরু করি, বেড়ে ওঠার সুযোগ পাই। তোরা এমন একটা সময়ে এসেছিস, যখন দালানটা একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এফডিসির যৌবন হারানোর পর তোরা এসেছিস। তোদের অনেক সংগ্রাম করতে হবে।’

মিশা সওদাগর, শিল্পী সমিতির সভাপতি

আমি আমার ভাইকে হারিয়েছি, আমার শিক্ষক, আমার পরামর্শদাতাকে হারিয়েছি।

জায়েদ খান, শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক

আর পারলাম না। লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হলো। ওপারে ভালো থাকবেন বাচ্চু ভাই।

নিপুণ, চিত্রনায়িকা

সাদেক বাচ্চু ভাইও চলে গেলেন। বাচ্চু ভাইয়ের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি।

বুবলী, চিত্রনায়িকা

প্রায় প্রতিটি সিনেমাতেই আপনার সঙ্গে অভিনয়ের সৌভাগ্য হয়েছিল। কী স্নেহ করতেন, শুটিংয়ের ফাঁকে একটু সুযোগ হলেই কত কত অভিজ্ঞতা শেয়ার করতেন, নানা সিনেমার গল্প বলতেন। কথার ফাঁকে বলতেন, ‘মামণি, তোমার আন্টিকে একটা ফোন দিয়ে নিই দাঁড়াও। কথা বলো আন্টির সঙ্গে, একদিন বাসায় এসে আন্টির সঙ্গে দেখা কোরো, গল্প কোরো, ভালো লাগবে।’ আন্টির সঙ্গে ফোনে কথাও হয়েছিল। বলেছিলাম, বাসায় যাব। কিন্তু আপনিই তো চলে গেলেন আঙ্কেল। বাংলা চলচ্চিত্রসহ আমরা সবাই একজন অভিজ্ঞ, গুণী শিল্পীকে হারালাম। ভালো থাকবেন আঙ্কেল!

সাদেক বাচ্চুর সঙ্গে বুবলী

মাহিয়া মাহি, চিত্রনায়িকা

আমরা ভালো একজন মানুষকে হারালাম। তাঁর সঙ্গে এফডিসিতে অনেকবার দেখা হয়েছে। তিনি সব সময় আমাকে মা বলে সম্বোধন করতেন। অনেক আদর করতেন। কিন্তু খারাপ লাগছে এই ভেবে যে আজ তিনি নেই, কিন্তু তাঁকে নিয়ে সবাই লিখছে। তিনি জীবিত থাকতে তাঁকে নিয়ে যদি সবাই এভাবে লিখতেন, তাহলে তিনি হয়তো আরও কিছুদিন আমাদের মাঝে থাকতেন। ওপারে ভালো থাকবেন বাচ্চু ভাই।

জাহারা মিতু, চিত্রনায়িকা

আগুন ছবির সেটে প্রথম দেখা। সালাম দেওয়ার পর কাছে ডেকে বললেন, ‘এটা আমার মেয়ে না?’ পাশ থেকে একজন বলে উঠল, ‘জি’। প্রথম দিনেই তিনি এত কাছে টেনে নিলেন। আব্বু মারা যাওয়ার পর ওই প্রথম কারও মুখে সারা দিনে এতবার মা ডাক শুনেছিলাম। অনেক হাহাকার লাগছে বাবা। মানুষকে ভালোবাসার যে অসীম ক্ষমতা আপনার ছিল, তাঁর জন্য যাঁরা আপনাকে কাছ থেকে দেখেছেন, তাঁরা আপনাকে মনে রাখবেন আজীবন। জানি না করোনা আর কতজনকে কেড়ে নেবে এভাবে।