Thank you for trying Sticky AMP!!

সুদিনের প্রত্যাশায় আছি সবাই

নায়ক রিয়াজ

সিনেমা জীবনের কথা বলে, শিকড়ের কথা বলে। বাংলাদেশের সিনেমা তার গৌরব ও ঐতিহ্যের পথে পা বাড়ায় মূলত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে। তাঁর হাতে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি)। শুরু হয় বাংলা সিনেমার এক সোনালি অধ্যায়।
শুরু থেকেই আমাদের সিনেমা নানা চড়াই–উতরাই পার করছে। কিন্তু সিনেমা আজকের মতো এমন দুর্দিন পার করবে, এটা কেউ কল্পনায়ও আনেনি। চারদিক থেকে সিনেমা সংকটে। মেধাবী গল্পকার, পরিচালক ও শিল্পীর পাশাপাশি সৃজনশীল প্রযোজকেরও অভাব। একসময়ের অশ্লীল ছবির প্রভাব, ভিডিও পাইরেসি, বুকিং এজেন্টের দৌরাত্ম্য এবং কিছু চলচ্চিত্রকর্মীর নোংরা রাজনীতি—সিনেমাকে অসীম সংকটে ফেলে দিয়েছে।

সিনেমা হলের সংখ্যাও কমছে দিন দিন। করোনার আগে তা আরও প্রকট আকার ধারণ করে। লকডাউন শুরু হওয়ার পরে সিনেমা নির্মাণ কমে যাওয়া, প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হওয়ায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। রাজধানী ও এর বাইরে যে কয়েকটি সিনেমা হল করোনার সময়েও খোলা ছিল, রক্ষণাবেক্ষণ ও নানা খরচ মিলিয়ে তাদের টিকে থাকা অসম্ভব হয় পড়ে। তাই অনেক সিনেমা হলের মালিক এই সময়ে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। এমনকি মাল্টিপ্লেক্সগুলোও বন্ধ হতে বসেছে। এরপরও সুদিনের প্রত্যাশায় আছি সবাই।

রাজধানী ও এর বাইরে যে কয়েকটি সিনেমা হল করোনার সময়েও খোলা ছিল, রক্ষণাবেক্ষণ ও নানা খরচ মিলিয়ে তাদের টিকে থাকা অসম্ভব হয় পড়ে। তাই অনেক সিনেমা হলের মালিক এই সময়ে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। এমনকি মাল্টিপ্লেক্সগুলোও বন্ধ হতে বসেছে। এরপরও সুদিনের প্রত্যাশায় আছি সবাই।

এখন নতুন ট্রেন্ড চালু হয়েছে, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নামে। এর মাধ্যমে আপনি যেকোনো জায়গায় বসে, বিশ্বের যেকোনো কনটেন্ট দেখতে পারেন। নাটক, সিনেমা, ওয়েব সিরিজ—যা–ই বলি না কেন, সবকিছু হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। এটাকে আমরা প্রযুক্তির অগ্রগতি বা যুগের দাবিও বলতে পারি। পুরোনো ধাঁচের সিনেমা এখন কেউ দেখতে আগ্রহী নয়। সিনেমা নির্মাণে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি সিনেমা হলের পরিবেশ ও প্রদর্শনের ব্যবস্থাও হতে হবে আধুনিক। কারণ, যতই বলি না কেন, সিনেমা এখন ঘরে ঘরে, হাতের মুঠোয়, কিন্তু দর্শক এখনো প্রেক্ষাগৃহে বসেই সিনেমা দেখে আনন্দ পান। সিনেমা হলের আনন্দ অন্য কোনোভাবে অনুভব করা সম্ভব নয়। আরও আধুনিক চিন্তা সিনেমা নির্মাণে নিয়ে আসতে হবে। তা না হলে আমরা বিশ্ব চলচ্চিত্রের সঙ্গে টিকে থাকতে পারব না।

চিত্রনায়ক রিয়াজ

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সিনেমাকে ভালোবেসে একটা বড় অঙ্কের টাকা বরাদ্দ করেছেন। আবার শুধু সিনেমা হল বানালেই তো হবে না। আমাদের ভালো ভালো সিনেমাও লাগবে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মের জন্য যদি সিনেমা, ওয়েব সিরিজ বানানো যায়, তাহলে হয়তো শিল্পী, প্রযোজক, পরিচালকদের একটা অংশ বেঁচে যাবেন। কিন্তু সেখানে তাঁদের যথেষ্ট মেধার ছাপ রাখতে হবে। চলচ্চিত্রের উন্নয়নে আমাদের ইনস্টিটিউট দরকার, যেমন ভারতের পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউট বা ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা। আমাদের এখানে গুটিকয় ইনস্টিটিউট হলেও সেগুলো কোনো উদাহরণ তৈরি করতে পারেনি। বাইরের দেশ থেকে কোনো ইনস্টিটিউটের শাখাও যদি চালু করা যায়, কিংবা ভালো শিক্ষক এনে শিক্ষা দেওয়া যায়, তাহলে আন্তর্জাতিক মানের পরিচালক, চিত্রনাট্যকার তৈরি হবে।

চলচ্চিত্রের উন্নয়নে আমাদের ইনস্টিটিউট দরকার, যেমন ভারতের পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউট বা ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা। আমাদের এখানে গুটিকয় ইনস্টিটিউট হলেও সেগুলো কোনো উদাহরণ তৈরি করতে পারেনি। বাইরের দেশ থেকে কোনো ইনস্টিটিউটের শাখাও যদি চালু করা যায়, কিংবা ভালো শিক্ষক এনে শিক্ষা দেওয়া যায়, তাহলে আন্তর্জাতিক মানের পরিচালক, চিত্রনাট্যকার তৈরি হবে।
রিয়াজ, চিত্রনায়ক
চিত্রনায়ক রিয়াজ আহমেদ

ভালো পরিচালক, ভালো গল্পকার, ভালো শিল্পী তৈরি হতে হবে। ভালো শিল্পী তৈরি হলে ভালো কনটেন্ট, ভালো সিনেমা তৈরি হবে। আর তা আমাদের বাজারের পাশাপাশি বিশ্ববাজারেও ছড়িয়ে যাবে। তাতে আমরা অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাব।
আমরা ইদানীং দেখি, চলচ্চিত্রের কিছু মানুষ সাহায্যের জন্য মাস্ক পরে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। যাঁরা সাহায্য দিচ্ছেন, আমি তাঁদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। পাশাপাশি এ–ও বলতে চাই, লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা চলচ্চিত্রকর্মীদের মাস্কের ওপরে যে দুটি চোখ, ওই চোখে যে ব্যথা, সেটাও উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন। সাহায্য দেওয়ার সময় মিডিয়াকে দাওয়াত দেওয়া কিংবা ফেসবুকে প্রচারের আগে সবার আত্মমর্যাদার কথাও ভাববেন। চলচ্চিত্রের সবাই যেন চলচ্চিত্রেই কাজ করে সুস্থভাবে বেঁচে থাকেন, সেটাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।