Thank you for trying Sticky AMP!!

মৃণাল সেনকে নিয়ে আলোচনা করছেন মানজারে হাসীন মুরাদ

‘মৃণাল সেন একজন জাত লড়াকু’

তিনি একজন জাত লড়াকু। তিনি বহির্মুখী, একেবারেই অন্তর্মুখী নন। ভারতীয় গণনাট্য সংঘ বা আইপিটিএর সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা, পরবর্তীকালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে তাঁর রাজনৈতিক সচেতনতা প্রকাশ পেয়েছে। এভাবেই চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেনকে নিয়ে বললেন নির্মাতা মানজারে হাসীন মুরাদ।

মৃণাল সেনের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে ‘মৃণাল সেন রেট্রোস্পেক্টিভ’–এর উদ্বোধনী আয়োজনে এসব কথা বলেন নির্মাতা মানজারে হাসীন মুরাদ। যৌথভাবে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে চলচ্চিত্রম ফিল্ম সোসাইটি ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।
মানজারে হাসীন মুরাদ আরও বলেন, তিনি নির্মাতা হিসেবে চলচ্চিত্র নির্মাণকে সামাজিক পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশে কোনো চলচ্চিত্র শিল্পমানে উত্তীর্ণ হলেই কেবল দর্শকের আশা পূরণ করতে পারে। তার বাইরে গিয়ে কাজ করেছেন মৃণাল সেন, এটিই তাঁর শক্তির বড় জায়গা।

আলোচনায় মৃণাল সেনের সঙ্গে ঘুরেফিরে সত্যজিৎ রায় ও ঋত্বিক ঘটকের কথা এসেছে। মানজারে হাসীনের ভাষ্যে, তিন চলচ্চিত্রকার এমন এক সময়ে একই শহরে থেকে কাজ করেছেন, এমন বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন, এটা বিস্ময়। তিনজন একখানে বসে একই রকম ছবি বানালেন না।...যাঁরা স্বাধীন ধারা নিয়ে কাজ করতে চান, তাঁদের কাছে মৃণাল সেন এক অর্থে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিন মহারথীর মধ্যে একমাত্র মহারথী, তিনি ছবি বানাতে কত কম অর্থনির্ভর হতে হয়, কত কম পুঁজির দাসত্ব করতে হয়, কিন্তু বাস্তবতাকে শৈল্পিকভাবে উপস্থাপন করা যায়, দেখিয়েছেন।

মৃণাল সেনের জন্ম শতবার্ষিকীর উদ্বোধনী আয়োজনে বাঁ থেকে মানজারে হাসীন মুরাদ, মোরশেদুল ইসলাম ও সালাহউদ্দীন জাকী

উদাহরণ দিয়ে মানজারে হাসীন বলেন, ভুবন সোম সিনেমার কাহিনি ৯ বছর ধরে ভেবেছেন মৃণাল সেন। কেউ পৃষ্ঠপোষকতা করেননি। ছবিটি মাত্র ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় নির্মাণ করেছেন। এখন অনেকে বড় বাজেট ছাড়া সিনেমা নির্মাণ করতে চান না, এটা তাঁদের জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে।
আলোচনায় মৃণাল সেনের সিনেমা নির্মাণকৌশল নিয়েও আলোচনা করেছেন মানজারে হাসীন। তাঁর ভাষ্যে, আকালের সন্ধানে, একদিন প্রতিদিন, মৃগয়া সিনেমায় তথ্যচিত্রের স্টাইলের প্রাধান্য রয়েছে। তাঁর সিনেমাটোগ্রাফার কে কে মহাজন বলেছেন, আর্থিক ও কারিগরি দিক না বাড়িয়ে কী করে দৃশ্যে ইম্প্রোভাইজেশন করা যায়, সেটি তিনি করতেন। এটি একধরনের তথ্যচিত্রের ভাবনা দ্বারা প্রভাবিত। একটা বিষয়কে স্পষ্ট করে ও উচ্চকিতভাবে প্রকাশ করেছেন, সেখানে শিল্পকে প্রাধান্য দিয়েই করেছেন।

আলোচনায় মৃণাল সেনের নারী চরিত্রও উঠে এসেছে। বাইশে শ্রাবণ, মৃগয়া, একদিন প্রতিদিন সিনেমার উদাহরণ টেনে মানজারে হাসীন বলেন, নারীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন মৃণাল সেন। কিন্তু তথাকথিত অর্থে নয়, নারীকে শ্রদ্ধা করতেই হবে। তাঁর যৌক্তিক অবস্থান থেকে নারীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। যিনি মানুষে মানুষে সমতার কামনা করেন, তিনি এটি করবেনই। নারীদের সক্ষমতা ও গলদ দুটোকেই সামনে এনেছেন।
পাঁচ দিনব্যাপী ‘মৃণাল সেন রেট্রোস্পেক্টিভ’–এর উদ্বোধন করেন নির্মাতা সালাহউদ্দীন জাকী, সভাপতিত্ব করেন নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম। আলোচনা শেষে ভুবন সোম চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়েছে। ১৯ মে পর্যন্ত চলবে এ আয়োজন। পাঁচ দিনব্যাপী আয়োজনে প্রদর্শিত হবে মৃণাল সেনের চলচ্চিত্র ও মৃণাল সেনের জীবনের গল্প নিয়ে তৈরি হওয়া প্রামাণ্যচিত্রসহ ১২টি ছবি।

Also Read: আমার মৃণাল সেন হয়ে ওঠা

Also Read: মৃণাল সেনকে ‘বন্ধু’ বলতেন তাঁর ছেলে