Thank you for trying Sticky AMP!!

পরিচালক হিসেবে তৌকীর আহমেদের দেড় যুগ পূর্ণ হলো আজ। তাঁর পরিচালিত তিনটি আলোচিত সিনেমা অজ্ঞাতনামা, হালদা ও জয়যাত্রার দৃশ্য

‘অতৃপ্তিই শিল্পীকে এগিয়ে নিয়ে যায়’

চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে দেড় যুগ পূর্ণ করলেন তৌকীর আহমেদ। ২০০৪ সালের ১৫ নভেম্বর মুক্তি পায় তাঁর পরিচালিত প্রথম ছবি জয়যাত্রা।

ছোটবেলা থেকে সিনেমা দেখার ঝোঁক। স্কুল–কলেজে পড়ার সময়ই বিশ্ব চলচ্চিত্রের সঙ্গে পরিচয়। বুয়েটে ভর্তির পর সিনেমা নিয়ে আগ্রহ আরও বাড়ে। ফিল্ম ক্লাবের সদস্য হন। ফুরসত মিললেই ছবি দেখতে ঢুঁ মারতেন ব্রিটিশ কাউন্সিল, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে।

‘জয়যাত্রা’ সিনেমা দিয়ে শুরু হয় পরিচালক তৌকীর আহমেদের যাত্রা

পরে মঞ্চ ও টেলিভিশনে কাজ শুরু করলেও তৌকীর আহমেদের মনের মধ্যে সিনেমা ছিল সব সময়। সিনেমা নিয়ে ব্যক্তিগত পড়াশোনা ও দেখা চলছিল। এর মধ্যেই শুরু করেন মঞ্চ ও টিভিতে নির্দেশনা, তৈরি করেন ‘প্রতিসরণ, ‘নাইওরি, ‘উত্তর পুরুষ, ‘লন্ডনি কন্যা, ‘তোমার বসন্ত দিনে’র মতো মঞ্চনাটক, টিভি নাটক ও টেলিছবি। তৌকীরের ভাষায়, এগুলো ছিল সিনেমা নির্মাণের আগের ‘প্রশিক্ষণ’। ২০০২ সালে নিউইয়র্ক ফিল্ম একাডেমিতে ডিপ্লোমা করেন। ২০০৪ সালে মুক্তি পায় প্রথম সিনেমা ‘জয়যাত্রা’।

‘জয়যাত্রা’ সিনেমার একটি দৃশ্য

প্রথম সিনেমা থেকেই লগ্নি জোগাড় করতে সংগ্রাম করতে হয়েছে। ‘প্রযোজক পাওয়া সহজ ছিল না। আমি তখন স্থাপত্য পেশায় ছিলাম, ব্যবসাও করছিলাম, সব মিলিয়ে নিজেই প্রযোজনা করি। আরেকটি বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল পরিবেশনা। হল পাওয়াও কঠিন ছিল। এফডিসির বাইরের সিনেমা প্রদর্শনকে বাণিজ্যিকভাবে লাভবানও মনে করতেন না প্রদর্শকেরা।’

‘অজ্ঞাতনামা’ সিনেমার একটি দৃশ্য

‘জয়যাত্রা’, ‘রূপকথার গল্প’, ‘অজ্ঞাতনামা’, ‘হালদা’ থেকে ‘ফাগুন হাওয়ায়’—তৌকীরের সিনেমার বড় বৈশিষ্ট্য নিজের দেশের শিকড়ের সঙ্গে যোগ। তৌকীর জানালেন, যে গল্প যখন তাঁকে তাড়িত করে, বলা জরুরি মনে হয়, সেটাই নির্মাণ করেন। এভাবেই অজ্ঞাতনামা বা হালদা হয়েছে। আবার যখন মনে হয়েছে, ভাষা আন্দোলন নিয়ে কাজ করা দরকার, ‘ফাগুন হওয়ায়’ করেছেন। ‘স্ফুলিঙ্গ’ ছবিতে এ প্রজন্মের দর্শকের কাছে মুক্তিযুদ্ধকে অন্য রকমভাবে তুলে ধরেছেন, ব্যান্ড দলের মধ্য দিয়ে গল্প বলেছেন।

সিনেমা বানাতে মেধা, প্রস্তুতি থেকে বিনিয়োগ পর্যন্ত অনেক ধরনের বিষয় থাকে। সিনেমা বানাতে গিয়ে নানাভাবে নিরুৎসাহিত হয়েছি, অনেক ছবির প্রযোজকও জোগাড় করতে পারিনি

তৌকীরের বেশির ভাগ সিনেমাই বাণিজ্যিক সাফল্য পায়নি। তবে ‘অজ্ঞাতনামা’ ইউটিউবে দেওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়। এখন যখন হাওয়ার মতো সিনেমা বাণিজ্যিক সাফল্য পাচ্ছে, তৌকীরের কি মনে হয়, এই সময়ে মুক্তি পেলে ‘অজ্ঞাতনামা’সহ তাঁর অন্যান্য ছবি আরও সাফল্য পেত?

‘অজ্ঞাতনামা’র শুটিংয়ে ব্যস্ত তৌকীর আহমেদ

জবাবে তৌকীর বলেন, ‘সিনেমাকে ঠিকঠাকভাবে প্রচার করা বা আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরতে যে যোগ্যতা লাগে, আমার সেটা নেই। একটা সিনেমা হিট হওয়া বা না হওয়ার সঙ্গে সেই সিনেমার ভালো বা খারাপ হওয়ার কোনো সম্পর্ক আছে বলে মনে হয় না।’

তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ‘রূপকথার গল্প’ সিনেমার একটি দৃশ্য

নিজেকে স্বাধীন ধারার নির্মাতা মনে করেন তৌকীর আহমেদ, প্রচলিত বাণিজ্যিক ঘরানার সিনেমার বাইরে গিয়ে যিনি নিজের গল্পটা বলতে চান। ১৮ বছরে ৭টি সিনেমা বানিয়েছেন। সংখ্যাটা কি আরও বেশি হতে পারত? নিশ্চয়ই পারত। প্রতিবছর একটা করে সিনেমা বানাতে পারলে পরিচালক নিজেও খুশি হতেন। না হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তৌকীর যা বললেন, তাতে মিশে থাকল আক্ষেপ, ‘সিনেমা বানাতে মেধা, প্রস্তুতি থেকে বিনিয়োগ পর্যন্ত অনেক ধরনের বিষয় থাকে। সিনেমা বানাতে গিয়ে নানাভাবে নিরুৎসাহিত হয়েছি, অনেক ছবির প্রযোজকও জোগাড় করতে পারিনি।’

‘ফাগুন হাওয়ায়’ সিনেমার একটি দৃশ্য

যে প্রজেক্টগুলোর জন্য বিনিয়োগ পাননি, এর একটি ‘ফাগুন হাওয়ায়’। ছবিটি তিনি করতে চেয়েছিলেন ২০০৮ সালে। শেষ পর্যন্ত করতে পেরেছেন ৯ বছর পর। সময়মতো ছবিটি করতে না পেরে পরিচালনায় প্রায় ৯ বছরের বিরতি পড়ে—২০০৭ সালে ‘দারুচিনি দ্বীপ’-এর পর ‘অজ্ঞাতনামা’ করেন ২০১৬ সালে। তৌকীর বললেন, ‘পরিবেশ–পরিস্থিতি মিলিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম, অভিমানও হয়। পরিচালনা থেকে সরে গিয়ে অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। মাঝখানে কাজ করলে আরও চারটি ছবি হতেই পারত।’ কথায় কথায় পরিচালক জানালেন, আগামী বছরই নতুন সিনেমা করবেন।

‘স্ফুলিঙ্গ’ ছবির দৃশ্যে পরীমনি ও শ্যামল মওলা

সারাক্ষণই পেছন ফিরে নিজের কাজ কাটাছেঁড়া করেন পরিচালক তৌকীর। মনে করেন, যা করেছেন, তার মধ্যে অনেক ত্রুটি আছে, যা তাঁকে কখনো পীড়া দেয়। আবার মনে হয়, এটা তো অভিজ্ঞতারই অংশ। পরিতৃপ্ত হওয়ার সুযোগ শিল্পীর কমই থাকে, অতৃপ্তিই শিল্পীকে এগিয়ে নিয়ে যায়, বলেন তৌকীর।

সিনেমাকে ঠিকঠাকভাবে প্রচার করা বা আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরতে যে যোগ্যতা লাগে, আমার সেটা নেই। একটা সিনেমা হিট হওয়া বা না হওয়ার সঙ্গে সেই সিনেমার ভালো বা খারাপ হওয়ার কোনো সম্পর্ক আছে বলে মনে হয় না

সাত সিনেমার মধ্যে কোন কাজগুলো এগিয়ে রাখবেন? ‘জয়যাত্রায় আমরা অনেক কিছুই ঠিকঠাকভাবে করতে পেরেছিলাম, অজ্ঞাতনামা অনেক বেশি দর্শকের গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। আমার কাছে হালদা অনেক পরিশীলিত নির্মাণ মনে হয়,’ বললেন তৌকীর।

‘হালদা’ সিনেমার দৃশ্য

চলতি বছর হাওয়া, পরাণ ভালো ব্যবসা করায় অনেক প্রযোজক, নির্মাতা বাংলাদেশের সিনেমা নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। তবে তৌকীর আহমেদ মনে করেন, বিচ্ছিন্ন দুয়েকটি ঘটনা দিয়ে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা কঠিন। মাল্টিপ্লেক্সের সংখ্যা বাড়াকে যেমন ইতিবাচকভাবে হিসেবে দেখছেন, তেমনি মনে করেন, মাল্টিপ্লেক্স টিকিটের মূল্য বেশি। এ ছাড়া মাল্টিপ্লেক্সগুলো স্বাধীন ধারার নির্মাতাদের ছবি চালাতে কতটা আগ্রহী, সেটি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এই নির্মাতা। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া দুটি ছবি—‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ ও ‘দেশান্তর’-এর উদাহরণ দিলেন। তৌকীর আহমেদ মনে করেন, বাণিজ্যিক ছবির বাইরে অন্য ধারার কাজ যাঁরা করতে চাইবেন, তাঁদের জন্য সিনেমার বাজার এখনো কঠিন।

Also Read: ২৩ দিনে ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ করেছেন তৌকীর

Also Read: সিনেমা স্থূল বিনোদন নয়: তৌকীর আহমেদ