Thank you for trying Sticky AMP!!

উঠে আসছে না তরুণ নাট্যকার

সম্প্রতি ঢাকার মঞ্চে বেড়েছে রূপান্তর ও অনুবাদ নাটক। তেমন একটি প্রযোজনা স্যামুয়েল বেকেটের নাটক হ্যাপি ডেজ

চলতি বছরে ঢাকার মঞ্চে উল্লেখযোগ্য নতুন নাটকগুলো হলো থিয়েটার আর্ট ইউনিটের অনুদ্ধারণীয়, স্পর্ধার জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা, ব নাটুয়ার নিশিকাব্য, মনিপুরি থিয়েটারের হ্যাপি ডেজ, মেঠোপথ ও সহজপাঠ থিয়েটারের জলকুমারী, তাড়ুয়ার লেট মি আউট ও লোক নাট্যদলের আমরা তিনজন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ঘুমকুমারী। এর মধ্যে বেশির ভাগই রূপান্তর বা অনুবাদ নাটক।

সম্প্রতি সাহিত্যকর্ম অবলম্বনে নাটক মঞ্চায়ন বেড়েছে। আসছে বিদেশি অনুবাদ নাটকও। সে তুলনায় মঞ্চের জন্য নতুন নাটক লেখা হচ্ছে কম।

অনুদ্ধারণীয় নাটকটি বুদ্ধদেব বসুর ছোটগল্প, জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা নাটকটি শহীদুল জহিরের উপন্যাস, নিশিকাব্য নাটকটি জাফর ইকবালের উপন্যাস মধ্যরাত্রিতে তিনজন দুর্ভাগা তরুণ, আমরা তিনজন নাটকটি বুদ্ধদেব বসুর গল্প এবং ঘুমকুমারী নাটকটি দ্য স্লিপিং বিউটি গল্প অবলম্বনে রচিত হয়েছে। আর হ্যাপি ডেজ নাটকটি স্যামুয়েল বেকেটের। শুধু তাই নয়, গত বছরে মঞ্চে আসা নতুন নাটকগুলোর বেশির ভাগই মৌলিক নয়। এর মধ্যে দ্য আলকেমিস্ট পাওলো কোয়েলহোর উপন্যাস, রাহু চণ্ডালের হাড় অভিজিৎ সেনের উপন্যাস, ভুলস্বর্গ ও মহাপতঙ্গ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও আবু ইসহাকের সাহিত্যকর্ম অবলম্বনে তৈরি। এ ছাড়া ওপেন কাপল দারিও ফো, অ্যান ইন্সপেক্টর কলস জেবি প্রিসলি, ডিয়ার লায়ার টিমথি কিল্টি, ম্যাকবেথ শেক্সপিয়ারের লেখা। এ ছাড়া বাংলায় মৌলিক যে কয়েকটি নাটক মঞ্চে এসেছে তার বেশ কয়েকটি ধ্রুপদি সাহিত্যিকদের লেখা।

অনেকগুলো মঞ্চসফল নাটকের নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনেতা মামুনুর রশীদ। তিনি বলেন, ‘এটা মেধার একটা শূন্যতা হতে পারে। প্রতিবছরই যে মৌলিক নাটক পাব তা আশা করতে পারি না। তাই অনুবাদের দিকে ঝোঁকা ছাড়া উপায় থাকে না। তবে লক্ষণটা ভালো না। আমরা যারা নিয়মিত মৌলিক নাটক লিখতাম, তাদের লেখাটা কমে গেছে। সেই শূন্যতা ভরাট করে তরুণেরা। কিন্তু তরুণদের মধ্যে মৌলিক নাট্যকার উঠে আসছে না।’

বাংলাদেশের মঞ্চসফল নাটক লিখেছেন সেলিম আল দীন, আবদুল্লাহ আল-মামুন, সৈয়দ শামসুল হক, মামুনুর রশীদ, মমতাজউদ্দীন আহমেদ প্রমুখ। তাঁদের লেখার অনুপস্থিতিতে তরুণ নাট্যকার গড়ে না ওঠার কারণে বিপদে পড়েছে দলগুলোও। তারা মৌলিক পাণ্ডুলিপির সংকটে ভুগছে। নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘অবশ্যই আমাদের মৌলিক নাট্যকারের অভাব খুবই বেশি। সে জন্য আমাদের রূপান্তর ও অনুবাদের দিকে ঝুঁকতে হচ্ছে। মামুন চলে যাওয়ার পরে আমরা সমস্যায় পড়েছি। একই অবস্থা ঢাকা থিয়েটারেও। সেলিম আল দীন চলে গেছেন। তা ছাড়া সৈয়দ শামসুল হক মৌলিক নাটক লিখতেন। বিভিন্ন দল সে নাটক মঞ্চে আনত। তিনি নেই। তাঁদের শূন্যতা পূরণে নতুন নাট্যকার আসছে না, যাঁরা মঞ্চসফল নাটক লিখতে পারেন।’

বিষয়টি নিয়ে সজাগ তরুণ নাট্যকারদের কয়েকজনও। নাট্যকার ও নির্দেশক শুভাশিস সিনহা বলেন, ‘আসলে তখন একজনের থেকে আরেকজনের লেখার ধরন আলাদা ছিল। কিন্তু সেলিম আল দীন-পরবর্তীকালের তরুণ নাট্যকারেরা একই ধরনের লেখা লিখছেন, যাতে নাটকগুলো একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছে।’

নাট্যকার মাসুম রেজা বলেন, ‘যারা রূপান্তর ও অনুবাদে আগ্রহী হচ্ছে, তাদের আমি নিরুৎসাহিত করছি। গল্প থেকে নাটকে রূপান্তরের জন্য একটি দল এসেছিল। আমি বলেছি, আমার নাটক নাও। রূপান্তর করতে পারব না। এর একটা বড় কারণ হলো আমরা নাট্যকার তৈরি করতে পারছি না। আবার নাট্যকার যেহেতু খুব বেশি লাইমলাইটে থাকেন না, তাই অনেকে নিরুৎসাহিত হন। কিন্তু একজন অভিনেতা নাট্যকারের সংলাপ বলেই জনপ্রিয় হন। এই আনন্দটা পাওয়া গেলে নাট্যকার তৈরি করা সম্ভব।’

তবে নতুন নাট্যকারেরাও চেষ্টা করছেন। তাঁরা নাটক লিখছেন। এমনটি মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক ইউসুফ হাসান। তিনি বলেন, ‘মৌলিক নাটক যে প্রকাশ হয়নি তা নয়। যাঁরা মঞ্চে নির্দেশনা দিচ্ছেন, তাঁরা কাকতালীয়ভাবে অনুবাদ নাটকের দিকে ঝুঁকে গেছেন। কিন্তু মৌলিক নাটক বের হয়েছে। দু-একটা মঞ্চেও এসেছে। তবে এখন যেহেতু নানা মাধ্যম। তাই নাট্যকাররা নানা দিকে ঝুঁকছেন।’

কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটকের বিভাগগুলোতে ক্রিয়েটিভ রাইটিং ও নাটক লেখা নিয়ে কোর্স করানো হয়। তবে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে অন্য পেশায় যুক্ত হয়ে আর নাটক লেখার দিকে মনোযোগ দিতে পারেন না। যাঁরা পেশাদারি নাটক লিখছেন, তাঁরা টেলিভিশন ও নতুন মিডিয়ার জন্য লিখছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগে নাটক লেখা বিষয়ে পাঠদান করিয়েছেন কবি সৈয়দ শামসুল হক, মামুনুর রশীদ, শাহমান মৈশান ও শহিদুল মামুন। বিভাগের শিক্ষক আশিকুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগীয় কোর্সে বিষয়টি আছে। শিক্ষার্থীরা নিজেরা নিজেদের নাটক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। কিন্তু পরবর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হন তাঁরা। নাটক লেখার বিষয়টি আর কন্টিনিউ করতে পারেন না। এটা শুধু নাটক লেখা না; নির্দেশনা, অভিনয় সব ক্ষেত্রেই একই অবস্থা।’