Thank you for trying Sticky AMP!!

স্বাধীনতা উৎসবের উদ্বোধনী দিনে ছিল সমবেত সংগীত পরিবেশনা। ছবি: সংগৃহীত

কথা, গান, নৃত্যে জমজমাট স্বাধীনতা উৎসব

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাজধানী আজ উৎসবে রঙিন। গান, কবিতা, নাটকসহ নানা আয়োজনে মুখর রাজধানীর সংস্কৃতি অঙ্গন। গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকেই শুরু হয়েছে নানা আয়োজন। স্বাধীনতা উৎসব দেখতে উৎসব–রাঙা হয়েই এসেছিল অগণিত মানুষ। গতকাল বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের অনুষ্ঠানে ছিল উপচে পড়া ভিড়। সেখানে সুরে সুরে উচ্চারিত হলো মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা।

‘সুবর্ণজয়ন্তীর অঙ্গীকার, সমতা-সম্প্রীতির বাংলাদেশ’ স্লোগানে গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুরু হয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত দুই দিনব্যাপী স্বাধীনতা উৎসব। উৎসবের প্রথম পর্বে ছিল আলোচনা। দ্বিতীয় পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। বসন্তের বিকেলে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ সব আন্দোলন–সংগ্রামে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মিনারের মূল বেদিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। পালন করা হয় এক মিনিটের নীরবতা। এরপর অতিথি শিল্পীসহ সবাই জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন। ওড়ানো হয় বর্ণিল বেলুন।

এরপর বহ্নিশিখার শিল্পীদের কণ্ঠে গীত হয় মুক্তিযুদ্ধের গান। জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মুহাম্মদ সামাদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ, জোটের সহসভাপতি ঝুনা চৌধুরী, পথনাটক পরিষদের সভাপতি মিজানুর রহমান, অনন্ত হিরা, মানজার চৌধুরী,রেজিনা ওয়ালী লীনা প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহ্।

স্বাধীনতা উৎসবের উদ্বোধন করেন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উৎসবের প্রতিনিধিরা। ছবি: সংগৃহীত

উৎসবের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন আহাম্মেদ গিয়াস। এতে বলা হয়, ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বিকাশের প্রতি অবহেলা ও অদূরদর্শিতা আমাদের শঙ্কিত করে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে শিল্পী-সাহিত্যিক তথা সংস্কৃতি সমাজের পক্ষ থেকে আমরা রাষ্ট্র ও বিশেষভাবে সরকারের সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি নির্ধারণ ও কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সম্পৃক্তি ও অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠার দাবি করছি।’

সভাপতির বক্তব্যে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘যেসব শিল্পী ও সংগঠন মুক্তিযুদ্ধ করেছে, পাকিস্তান আমলে রবীন্দ্রসংগীত বন্ধের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়েছে এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য লড়াই করেছে, সেই সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর কোনো মর্যাদা আজ আমরা যথাযথভাবে দেখছি না। এতে ক্ষতিটা হবে রাষ্ট্রের, কারণ সংস্কৃতিকর্মীরা হতাশায় নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলে দেশকে বাঁচানোর জন্য যে সাংস্কৃতিক জাগরণ দরকার।’

শহীদদের অবদানের কথা স্মরণ করে দুঃখ, বেদনা ও হতাশার মধ্যে আমাদের শৌর্য-বীর্যের কাহিনিগুলো নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা জরুরি বলে এমন মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) ও জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি মুহাম্মদ সামাদ।
ভারত-পাকিস্তানের মতো টেবিলে বসে কলমের খোঁচায় নয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ত দিয়ে আনতে হয়েছে—এমন মন্তব্য করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘আমরা গণকবরগুলোও রক্ষণাবেক্ষণ করিনি। ঢাকা শহরে কোথাও ২৫ মার্চের হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসের কোনো চিত্র খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্তু পৃথিবীর যেসব দেশে যুদ্ধ হয়েছে, প্রতিটি দেশে একেকটি যুদ্ধ-আক্রান্ত শহরে শতাধিক স্থাপনা স্মারক হিসেবে রেখে দেওয়া হয়েছে। আমরা রাখিনি। এটি বেদনাদায়ক। রাস্তা ও ভবন সবই হবে, কিন্তু একাত্তরের স্মৃতিচিহ্নগুলো রাখলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম জেনে যাবে এ দেশে ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছিলেন, ২ লাখের বেশি নারী সম্ভ্রম হারিয়েছেন—এসবের বিনিময়েই দেশটা স্বাধীন হয়েছে। অথচ তার কোনো কিছুর অস্তিত্ব বাংলাদেশে নেই৷’

আলোচনা শেষে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এতে অংশ নেয় শিশু সংগঠন অচিন পাখি ও মৈত্রী শিশুদল। সম্প্রীতির বারতায় দলীয় সংগীত পরিবেশন করে সপ্তরেখা শিল্পীগোষ্ঠী।

অতিথি শিল্পীসহ সবাই জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন

দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে কথা আবৃত্তিচর্চা কেন্দ্র ও স্বননের বাচিকশিল্পীরা। একক কণ্ঠে গান শোনান আবদুল হালিম খান ও দিল বাহার। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন ছইয়িমা ইসলাম নিঝুম। সব শেষে পথনাটকের পরিবেশনা। বীরাঙ্গনার বয়ান শীর্ষক পথনাটক উপস্থাপন করে শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্র। আজ শনিবার বিকেল চারটায় শুরু হবে দ্বিতীয় দিনের উৎসব।