Thank you for trying Sticky AMP!!

শিল্পগুরু সফিউদ্দীন আহমেদের চশমা, ঘড়ি ও বাবা মতিউদ্দীনের ঘড়ি

কাচের বাক্সে দেড় শ বছরের সোনার ঘড়ি

কোনো এক ২৩ তারিখ সোমবার ১০টা ২ মিনিটে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল রুপালি রিকো ঘড়িটি। সেটার এক পাশে শিল্পগুরু সফিউদ্দীন আহমেদের চমশা, আর অন্য পাশে বাবা শেখ মতিউদ্দীনের ব্যবহৃত চেইনসংবলিত সোনার ঘড়িটি। এ ঘড়িটির বয়স দেড় শ বছর। এত দিন এসব যত্ন করে রাখা ছিল ঘরে। আজ থেকে এগুলো সবার দেখার জন্য কাচের বাক্সে প্রদর্শিত হচ্ছে। সফিউদ্দীনের ধানমন্ডির বাড়ির দোতলার দুয়ার এখন সবার জন্য খোলা।

লোকে বলে শিল্পীরা ‘অগোছালো’ হয়। শিল্পগুরু সফিউদ্দীন আহমেদের বাড়িতে গেলে সেই ধারণা একেবারেই বদলে যাবে। আর তৈরি হবে আত্মোপলব্ধি, কী করেছি সারাটা জীবন? ভেঙে নতুন করে গড়া বাড়িটার দোতলায় চালু হয়েছে শিল্পগুরু সফিউদ্দীন আহমেদ সংগ্রহশালা। গতকাল শুক্রবার বিকেলে ধানমন্ডির ৪ নম্বর সড়কের সেই বাড়ির উঠানে ছিল শিল্পীদের মিলনমেলা। সফিউদ্দীন আহমেদের গুণগ্রাহীরা নতুন করে তাঁকে পাওয়ার আনন্দে হাজির হয়েছিলেন সেখানে। কেউ কেউ স্মৃতিচারণাও করছিলেন। কতটা গোছানো আর পরিপাটি মানুষ ছিলেন তিনি, ভেবে বিস্মিত এখনকার শিল্পীরাও। নিচতলায় এক শিল্পীর হাতে গড়া সফিউদ্দীনের ভাস্কর্য, দোতলায় আরেক শিল্পীর হাতে আঁকা তৈলচিত্র। আর ভেতরে স্মৃতি আর স্মৃতি। শিল্পী ও তাঁর স্ত্রীর হুইলচেয়ার, খাট, আলমারি, ড্রেসিং টেবিল, বইয়ের তাক, রাষ্ট্রীয় পদক ও সম্মাননা। ব্যবহারের জন্য কেনা পূর্ব পাকিস্তানে আসা প্রথম রেফ্রিজারেটরটিও রাখা আছে সযত্নে।

তখনকার দিনে দামী প্লেয়ারে গান শুনতেন শিল্পী সফিউদ্দীন। ছবি: রাসেল মাহমুদ

সংগ্রহশালা বা জাদুঘর যাই বলা হোক না কেন, এটি অনন্য। শিল্পীর ব্যবহৃত নানা জিনিসের পাশাপাশি দেখা যাবে নানা মাধ্যমে আঁকা তাঁর চিত্রকর্ম। তুলি ও রং মাখানোর যন্ত্রপাতি, পুরোনো প্রজেক্টর, দামি সংগীত প্লেয়ার। দেখা যাবে লন্ডনে তৈরি ত্রিকালের সাক্ষী এচিং যন্ত্র, যেটি ১৯৪৬ সালে ৬০০ রূপিতে কিনেছিলেন তিনি। ছবি তুলতে ভালোবাসতেন। তাঁর ছিল ছবি ওয়াশ করার যন্ত্রপাতি। স্ত্রীকে নৌকায় বসিয়ে পুরোনো বাড়িতে তোলা আলোকচিত্রগুলো আজ ঐতিহাসিক সম্পদ। সংগ্রহশালার সঙ্গেই আছে গ্যালারি আর প্রিন্টমেকিং স্টুডিও, যেটি ব্যবহারের সুযোগ পাবেন তরুণ ছাপচিত্রীরা।

‘ময়ুরাক্মীর তীরে’ ও শিল্পী সফিউদ্দীন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান সৈয়দ আজিজুল হকের সভাপতিত্বে সংগ্রহশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নাট্যজন ও সাংসদ আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন। আজিজুল হক বলেন, ‘দেশের বড় শিল্পীদের নামে গ্যালারি ও সংগ্রহশালা করা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব। পৃথিবীর সব দেশেই সেটা করা হয়। জয়নুল আবেদিনের নামে গ্যালারি আছে, আজ ব্যক্তিগত উদ্যোগে সফিউদ্দীনের নামে সংগ্রহশালাটি যাত্রা করল, এতে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো।’ আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে স্যারের অবস্থান ছিল স্পষ্ট। আমরা যত রকম আন্দোলন–সংগ্রামে ছিলাম, সেসবে তাঁর ছিল নীরব সমর্থন।’ আক্ষেপ নিয়ে নিসার হোসেন বলেন, ‘সংগ্রহশালার পাশাপাশি সংরক্ষনাগার থাকা দরকার, যা আমাদের দেশে নেই। সংরক্ষণ করতে না পারায় মূল্যবান সব শিল্পকর্ম নষ্ট হওয়ার পথে। স্যাররা কত দূরদর্শী মানুষ ছিলেন, এ রকম আয়োজন না করলে জানা হতো না।’

সংগ্রহশালা ঘুরে দেখছেন দর্শনার্থীরা। ছবি: প্রথম আলো

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শিল্পী সৈয়দ আবুল বারক আলভী, মনিরুজ্জামান, স্থপতি মঈনুল আবেদিন প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন সফিউদ্দীনের পুত্রবধূ, সফিউদ্দীন শিল্পালয়ের নির্বাহী পরিচালক নাহিদা শরমিন, সংগ্রহশালার পরিচালক ছেলে আহমেদ নাজির। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ঘুরে আসা যাবে এই শিল্পালয়।