Thank you for trying Sticky AMP!!

খাগড়াছড়িতে পরিবেশিত হলো ‘রক্তে ভেজা গৌরবগাথা’

শুরুতেই দেখানো হয় পাহাড়ের সংস্কৃতি। পাহাড় ছিল আনন্দের, গ্রামে গ্রামে চলছে উৎসবের আমেজ। ত্রিপুরা, মারমা, চাকমা আর বাঙালিরা মিলেমিশে বসবাস করছেন শান্তিতে। অবসর সময়ে গ্রামের যুবকেরা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাচ্ছেন বাঁশ হোরাম দিয়ে। মেয়েরা নিজস্ব পোশাক পরে করছে ঐতিহ্যবাহী বোতল নাচ, জুম নাচ। কিন্তু এই আনন্দের মাঝে চলে আসে ভয়াবহতা। পূর্ব পাকিস্তানে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করছে পাহাড়ের লোকজন, প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে তাদের, এমন খবরে পাহাড়েও চলে আসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।  
একাত্তরের পাহাড়ের মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যাকে কেন্দ্র করে হৃদয়বিদারক ঘটনা নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় খাগড়াছড়ি বিসিক শিল্পনগরী মাঠে পরিবেশিত হয়  ‘রক্তে ভেজা গৌরবগাথা’ নাটক। এ নাটকে মূলত ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাহাড়ের ঘটে যাওয়া বিষয়টি দেখানো হয়েছে।

১ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের নাটকটিতে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা, ১৯৬৯ সালের গণ–অভ্যুথান, শহীদ আফতাবুল কাদেরের জীবন, মুক্তিযুদ্ধে নিজের সিংহাসনের লোভ না করে মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের মং রাজা মংপ্রু সাইনের ও রানি নীহার দেবীর রাজভান্ডার খালি করে সহায়তা কাহিনি দেখানো হয়েছে। পাহাড়িদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, রাজাকার-আলবদরদের সহায়তায় মুক্তিবাহিনী ধরা এবং অমানুষিক নির্যাতনের মাধ্যমে তাঁদের হত্যা করা। নারী ও শিশুদের নির্যাতন করে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার মতো দৃশ্যও ফুটে উঠেছে।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে নাটকটি লিখেছেন সুবীর মহাজন। নির্দেশনায় ছিলেন তিনি। সুবীর মহাজন বলেন, ‘নাটকটি রচনা করেছি মূলত খাগড়াছড়ির মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি নিয়ে। অনেকেই জানেন না খাগড়াছড়ির মানুষের মুক্তিযুদ্ধের অবদান সম্পর্কে। বাঙালির জাতিসত্তাকে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত করতে এখানকার মানুষেরও অনেক অবদান ছিল। বাংলা ভাষা রক্ষা এবং বাংলাদেশ গঠনে পাহাড়ের মানুষের অনেক পরিশ্রম ও সহায়তা রয়েছে।

আমরা চেষ্টা করেছি নতুন প্রজন্ম এবং সাধারণ মানুষের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন বিষয়কে পৌঁছে দিতে। ১১০ জনের বেশি কলাকুশলী মিলে তৈরি হয়েছে এই নাটক।’
নাটক শুরুর আগে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। জেলা শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারত প্রত্যাগত টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান সংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, মুক্তিযোদ্ধা রণ বিক্রম ত্রিপুরা।