Thank you for trying Sticky AMP!!

জন্মদিনের সন্ধ্যায় মঞ্চে থাকবেন 'হাছনজানের রাজা'

‘হাছনজানের রাজা’ নাটকে রামিজ রাজু। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

একজন মঞ্চশিল্পী তাঁর জন্মদিনের সন্ধ্যায় মঞ্চে থাকবেন। নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করে তিনি পুরো গল্পটা এগিয়ে নেবেন। তাঁর মঞ্চনাটকের জীবনে এর চেয়ে সুন্দর দিন আর কী হতে পারে!

ঢাকার মঞ্চে সাম্প্রতিক কালের অন্যতম আলোচিত নাটক ‘হাছনজানের রাজা’। এ নাটকে হাসন রাজা চরিত্রে অভিনয় করেছেন তরুণ অভিনেতা রামিজ রাজু। আজ তাঁর জন্মদিন। আজ সন্ধ্যায় তিনি থাকবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায়। সন্ধ্যা সাতটায় শুরু হবে নাটক ‘হাছনজানের রাজা’। তার আগে একই মঞ্চে গঙ্গা-যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসবের উদ্বোধনী ঘণ্টা বাজবে। বাংলাদেশ ও ভারতের অংশগ্রহণে এটি অন্যতম বড় উৎসব।

রামিজ রাজু তথাকথিত পর্দার নায়ক না। দেখলে চেনা যাবে, এমন নয়। থিয়েটারপাড়ায় যাঁদের আসা-যাওয়া, তাঁদের কাছে বেশি পরিচিত তিনি। থিয়েটার নিয়েই যে ধ্যানজ্ঞান। প্রাঙ্গণেমোরের হয়ে করেছেন রবীন্দ্রনাথের উত্তীয়, অতীন, বিশুপাগল, অমিত কিংবা শোভনলাল। কখনো মঞ্চে এসেছেন সম্রাট শাহজাহান কিংবা মুকুন্দ দাস হয়ে। অভিনয় করেছেন রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের চরিত্রে। টেলিভিশন নাটক-সিনেমায় তাঁকে কখনো কখনো দেখা গেছে।

জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে রামিজের কাছে জানতে চাওয়া হয় নাট্যজগতে তাঁর শুরুর কথা। জানালেন, তিতুমীর কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করেছেন তিনি। থিয়েটার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। রাজুর স্মৃতিচারণায় জানা যায়, ‘কলেজের একটি অনুষ্ঠানে বন্ধু গান গাইছিল, আমি বাজাচ্ছিলাম তবলা। এটা দেখে এক বন্ধু আমাকে প্রস্তাব করেন, তাঁদের একজন অসুস্থ থাকায় একটি নাটকে আমি রিদম বাজাতে পারব কি না। জানতে চাই কোথায়? তিনি বললেন, টিএসসি।’

‘হাছনজানের রাজা’ নাটক দিয়ে শুরু হবে গঙ্গা-যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

সেবার অতিথি হিসেবে দলের হয়ে তবলা বাজালেন। এরপর এক মহড়াও কামাই দেননি। অভিনয়ে সুযোগ পান আর না পান, মহড়ায় রাজু উপস্থিত থাকেন প্রতিদিন। একদিন ঠিকই সুযোগ আসে। রাজু প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমাকে স্ক্রিপ্ট দেওয়া হলো। পরদিন মহড়া দেখে দলপ্রধান প্রশংসা করলেন। বললেন, ‘ছেলেটি নতুন এসেছে। ও যদি পারে, তোমরা পারছ না কেন?’ তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। এই যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হলো, এটা দিয়েই থিয়েটারে ঢুকে গেলাম।’ তারপরের পথচলা কেবলই এগিয়ে যাওয়ার। ২০০৩ সাল পর্যন্ত কাজ করেন নটরাজ দলে। এরপর দলটি ঝিমিয়ে গেলে রাজুও চলে যান অন্য দলে। একসময় অনন্ত হীরা ও নূনা আফরোজ প্রতিষ্ঠা করেন নতুন দল ‘প্রাঙ্গণেমোর’। রাজু চলে যান সেখানে।

অভিনয় করেছেন দলের ১৬টি প্রযোজনায়। কাজ করেছেন ডিজাইন ও সংগীতে। নির্দেশনাও দিয়েছেন একটি। ২০১৬ সালে পেয়েছেন ‘এস এম সোলায়মান প্রণোদনা’। অভিনয়ের এ স্মারক রাজুর সাফল্যের মুকুটে পালক হয়ে থাকবে। মঞ্চের এ মানুষটির ইচ্ছা, থিয়েটারকে পেশাদারির জায়গায় নিয়ে যাওয়া।

গঙ্গা-যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসবে আজ স্টুডিও থিয়েটার মঞ্চস্থ হবে ‘উজানে মৃত্যু’। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

রাজু জানান, আজ তাঁর জন্মদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। একটাই কারণ, সন্ধ্যাটা কাটবে মঞ্চে। আজ নাটকটির ২০তম প্রদর্শনী হবে। গঙ্গা-যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসবের মূল মঞ্চেই হবে নাটকটি। নাটক শুরুর আগে এই মঞ্চে হবে উৎসবের উদ্বোধন। উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংসদ আসাদুজ্জামান নূর ও ভারতের নাট্যব্যক্তিত্ব মেঘনাদ ভট্টাচার্য। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। এ ছাড়া উদ্বোধনী পর্বে সম্মানিত অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকী, ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক নিপা চৌধুরী, বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের সভাপতি মান্নান হীরা এবং বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল নাট্যজন কামাল বায়েজীদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করবেন বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহ। স্বাগত বক্তব্য দেবেন উৎসব পর্ষদের সদস্যসচিব আকতারুজ্জামান। সভাপতিত্ব করবেন উৎসব পর্ষদের আহ্বায়ক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুছ। উদ্বোধনী মঞ্চে নৃত্য পরিবেশন করবে স্পন্দন। পরিচালনায় অনিক বসু।

উদ্বোধনী দিনে জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনের পাশাপাশি পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনে রয়েছে ঢাকা থিয়েটারের ‘পঞ্চনারী আখ্যান’ এবং স্টুডিও থিয়েটার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে পালাকারের ‘উজানে মৃত্যু’। এই উৎসব চলবে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত।

‘পঞ্চনারী আখ্যান’ মঞ্চস্থ হবে পরীক্ষণ থিয়েটার হলে। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

অষ্টমবারের মতো এবারও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তন, পরীক্ষণ থিয়েটার হল ও স্টুডিও থিয়েটার হলে অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ অংশগ্রহণে এই সাংস্কৃতিক যজ্ঞ। এবার গঙ্গা-যমুনা উৎসবে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি মিলনায়তন, মুক্তমঞ্চ এবং বাংলাদেশ মহিলা সমিতি মিলনায়তন। এসব স্থানে প্রতিদিন বিকেল সাড়ে চারটা থেকে থাকবে নানা বিষয়-বৈচিত্র্যের পথনাটক, আবৃত্তি, সংগীত, নৃত্যসহ নানা পরিবেশনা।

এবার উৎসবে মঞ্চনাটক নিয়ে ভারতের চারটি নাট্যদল এবং ঢাকা ও ঢাকার বাইরের ২৬টি নাট্যদলসহ মোট ৩০টি নাটকের দল অংশ নেবে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার অভিন্ন সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং সংস্কৃতির মানুষের মৈত্রীর বন্ধন আরও সুদৃঢ় করার লক্ষ্য নিয়েই সাত বছর ধরে ‘গঙ্গা-যমুনা উৎসব’-এর আয়োজন করে যাচ্ছে গঙ্গা-যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব উদ্‌যাপন কমিটি।

কয়েক বছর ধরে কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘গঙ্গা-যমুনা নাট্যোৎসব’। আসরটি দুই বাংলার থিয়েটার অঙ্গনে সাড়া ফেলে। শুরু থেকেই কলকাতার এই নাট্যোৎসবে বাংলাদেশের একাধিক নাট্যসংগঠন অংশ নিয়ে আসছে। ২০১২ সাল থেকে একই নামে বাংলাদেশেও একটি উৎসব আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করে ‘গঙ্গা-যমুনা নাট্যোৎসব’ পর্ষদ। ২০১৪ সালে এসে নাট্য প্রদর্শনীর পাশাপাশি বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মেলবন্ধনে উৎসবকে আরও প্রসারিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। তারই আলোকে নামকরণ করা হয় ‘গঙ্গা-যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব’।