Thank you for trying Sticky AMP!!

স্টুডিও থিয়েটার মিলনায়তনে গতকাল স্পেস অ্যান্ড অ্যাক্টিং রিসার্চ সেন্টারের দুই আগন্তুক বনাম করবী ফুল নাটকটির দুটি প্রদর্শনী হয়। নাট্যকর্মীরা চাইছেন নিয়মিত নাটক মঞ্চায়ন করে পেশাদার নাট্যচর্চার দিকে এগিয়ে যেতে। ছবি: সংগৃহীত

পদ–পদবি নয়, নাট্যকর্মীরা চান নাট্যচর্চার সুযোগ

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি বাংলাদেশের মঞ্চনাটক চর্চার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান। পাশপাশি বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন বাংলাদেশের মঞ্চনাটকের সবচেয়ে বড় মোর্চা সংগঠন। সম্প্রতি এ দুটি প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এতে থমথমে অবস্থা বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনে। নাট্যকর্মীরা জানিয়েছেন মিশ্র প্রতিক্রিয়া। আলোচনা উঠেছে ফেডারেশনের কার্যকারিতা নিয়েও। নাট্যকর্মীদের আক্ষেপ, নাটক চর্চায় নানা সমস্যা থাকা সত্ত্বেও তা নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। পদ–পদবি আর নেতৃত্বের লড়াই নিয়ে চর্চা চলছে নাট্যাঙ্গনে।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তিনি বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের চেয়ারম্যানও। অন্যদিকে ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়েজীদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে খোদ ফেডারেশন থেকে। যদিও দুজনেই এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং অভিযোগ এখনো প্রমাণিতও নয়।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের শিল্প–সংস্কৃতিতে মঞ্চনাটকের ভূমিকা অসামান্য। মঞ্চনাটকের স্রোতকে আরও ক্ষুরধার করতে ১৯৮০ সালে গ্রুপ থিয়েটারের প্রতিষ্ঠা হয়। ৩৮টি নাটকের দল নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল এ সংগঠন। মঞ্চনাটকের বিভিন্ন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয় সংগঠনটি। বিশেষ করে অভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন বাতিলের দাবিতে দীর্ঘ ও কঠিন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিল।

তবে 'ফেডারেশনের সেই আসল রূপ নেই'—বেশ কয়েক বছর ধরেই এমন অভিযোগে বিদ্ধ হচ্ছিল সংগঠনটি। মঞ্চনাটকে দর্শকও ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছে। করোনা মহামারি এসে মঞ্চনাটক চর্চায় একটা বড় আঘাত হানে। স্বাধীনতার ৫০ বছর দেশ ও জাতির কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

বাংলাদেশে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী

এই সময়ে করোনার আঘাত কাটিয়ে মঞ্চনাটককে এগিয়ে নেওয়ার আলোচনাই ছিল নাট্যকর্মীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এ সময়ে মঞ্চনাটক সংশ্লিষ্ট দুটি বড় প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এমন দুর্নীতির অভিযোগে বিব্রত নাট্যকর্মীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে নির্দেশক ও নাট্যকার মাসুম রেজার সঙ্গে। তিনি বলেন, 'দুটো বিষয়ই থিয়েটার কর্মীদের জন্য বিব্রতকর। থিয়েটারে এ রকম দুটো ঘটনার কারণে অনেকে অনেক রকম কটাক্ষ করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা মন্তব্য করছেন। এটা আমাদের জন্য বেশ অস্বস্তির কারণ হয়েছে। তবে ঘটনার সত্যতা এবং কে দোষী বা নির্দোষ, এ নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। আমার ভাবনা কেবল থিয়েটার নিয়ে।'

অভিনেতা-নির্দেশক মোহাম্মদ আলী হায়দারের মতে, 'যে প্রক্রিয়ায় এ অভিযোগগুলো এসেছে, দুদক যে প্রক্রিয়ায় কাজ করছে, এটা সঠিকভাবে হোক। যদি কোর্ট পর্যন্ত গড়ায় গড়াক। সত্যটা বেরিয়ে আসুক। এটাই গ্রহণ করব। এটা শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের পক্ষে যাক কিংবা বিপক্ষে যাক যা ফলাফল আসবে, সেটাই আমরা গ্রহণ করব। একইভাবে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের ক্ষেত্রেও যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, সেটাও যেহেতু একটা দেওয়ানি অপরাধ। এটাও আদালতে যাওয়া উচিত। কারণ, এতগুলো টাকা ফেডারেশনের নিজস্ব টাকা না। এটা বাংলাদেশের সকল নাট্যকর্মীর টাকা। এটা একক মানুষ খেয়ে ফেলতে পারেন না।'

এদিকে নাট্যকর্মীদের কারও কারও মতে, গ্রুপ থিয়েটার চর্চা ক্ষমতার চর্চার জায়গা হিসেবে রূপান্তরিত হচ্ছে। ফেডারেশন এখন 'থিয়েটার রাজনীতি'তে ঢুকে গেছে। তাই এ সংগঠনের যৌক্তিকতা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। নাট্যসমালোচক আবু সাঈদের মতে, বিদেশে যখন নাটকে শিল্পসৌন্দর্য, চিন্তাশীল উপস্থাপন, নিরীক্ষা ও দর্শক-উপযোগিতা প্রাধান্য পায়, তখন এ দেশে শৌখিন, অনুদানভিত্তিক বা অ্যাজেন্ডাভিত্তিক নাট্যচর্চা দুঃখজনক। বিদেশে আছে পূর্ণ বাণিজ্যিক, রেপার্টরি ও এডুকেশনাল থিয়েটার চর্চা।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি

তরুণ নাট্যকর্মী হুমায়ুন আজম বলেন, 'শিল্পকলা একাডেমি এবং গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনকে ঘিরে সাম্প্রতিক অভিযোগ, বাদানুবাদ, কাদা ছোড়াছুড়ি দেখে একজন সংস্কৃতিকর্মী হিসেবে বিপন্নবোধ করছি। সুন্দরের জয়গান গাইতে এসে কোন অন্ধকারের ছবি আঁকছেন তাঁরা নতুন প্রজন্মের কাছে, এ আত্মজিজ্ঞাসাটুকু জাগ্রত হোক এই কামনা।' প্রাচ্যনাটের সদস্য ও নাট্যকর্মী সাইফুল জার্নালের মতে, 'গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন হচ্ছে একটা বড় আন্দোলনের ফসল, সারা দেশের নাট্যকর্মীদের অধিকার আদায়ের মঞ্চ। শিল্পকলা একাডেমি হচ্ছে শিল্প–সংস্কৃতিসংশ্লিষ্ট সকলের গর্বের জায়গা। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের নামে যখন দুর্নীতির অভিযোগ আসে, তখন আমরা হতাশ হই। আমাদের শিক্ষা, দর্শন প্রশ্নবিদ্ধ হয়। যেহেতু এখন পর্যন্ত কারও অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি, তাই এটা নিয়ে মন্তব্য করা যাচ্ছে না। কিন্তু ব্যাপারটা যদি প্রমাণিত হয়, আশা করি তাঁরা নিজেদের সংশোধন করবেন এবং বিশ্বাসভঙ্গের কারণে নাট্য ও সংস্কৃতিকর্মীদের কাছে ক্ষমা চাইবেন। আর অসত্য হলে তারও বিচার হতে হবে। তবে এমন অভিযোগ ওঠা ভালো লক্ষণ নয়।'
সারা দেশে ভালো মঞ্চ নেই, মঞ্চের সংস্কার নেই, নতুন দর্শক সৃষ্টির কোনো উদ্যোগ নেই। নাট্যকর্মীদের এমন আক্ষেপ দীর্ঘদিনের। এমন পরিস্থিতিতে নাট্যাঙ্গনের রুচিশীল, শিক্ষিত, নিঃস্বার্থ, দেশপ্রেমিক মানুষগুলোকে আবার একত্র হওয়ার কথা বলছেন তাঁরা। অনেকে মনে করেন, অনুদানভিত্তিক নাট্যচর্চা থেকে বের হয়ে এখন পেশাদার নাট্যচর্চার দিকে এগোনো উচিত।