Thank you for trying Sticky AMP!!

ভারতে আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবে 'গোলাপজান'

‘গোলাপজান’ নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন রোকেয়া রফিক বেবী। ছবি:সংগৃহীত

ঢাকার মঞ্চে আলোচিত নাটক ‘গোলাপজান’। আদি ঢাকার জীবন-জীবিকার স্মৃতিময় উচ্চারণ এটি। নাটকে ৬৫ বছরের অভিজ্ঞতায় এক সাধারণ নারী গোলাপজান পরম মমতার সঙ্গে বর্ণনা করেছে তার শৈশব-কৈশোর, যৌবন থেকে পৌঢ়ত্বে পৌঁছার সংগ্রামী কাহিনি। বিশ শতকের মধ্যভাগে রাজধানী ঢাকা শহরের শ্রমজীবী একজন নারীর ধনবাদী সমাজব্যবস্থা বিকাশের ধারায় ক্রমাগত সংগ্রামী হয়ে ওঠার কথামালায় আবৃত হয়েছে নাটকটি। নাটকটি এখন ভারতে।

দুই বাংলার মিলনমেলায় মধ্যমগ্রাম ভারতের নজরুল শতবার্ষিকী সদন পৌরসভা মিলনায়তনে চলছে গঙ্গা-পদ্মা আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব। এতে নাট্য প্রদর্শনীর জন্য ডাক পেয়েছে বাংলাদেশের স্বনামধন্য নাট্যদল থিয়েটার আর্ট ইউনিট। আসরে রোববার বেলা আড়াইটায় মঞ্চস্থ হবে দলটির সাড়াজাগানো নাটক ‘গোলাপজান’।

আবু তাহেরের মূল গল্প অবলম্বনে প্রযোজনাটির নাট্যরূপ ও নির্দেশনা দিয়েছেন এস এম সোলায়মান। আন্তর্জাতিক এ নাট্যোৎসবে অংশ নিতে গত শুক্রবার থিয়েটার আর্ট ইউনিট ঢাকা থেকে ভারতের উদ্দেশে রওনা হয়।

নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন রোকেয়া রফিক বেবী। নাটকের গল্পে দেখা যায়, তিরিশের দশকে ঢাকা শহরের এক অতি দরিদ্র পরিবারে গোলাপজানের জন্ম। তার শৈশব-কৈশোর স্মৃতি মধুরতায় ভরপুর। মক্তবে পড়াশোনার সময় প্রায় শৈশবেই তার বিয়ে হয় এক ঘোড়ার গাড়ির কোচোয়ানের সঙ্গে। গাড়ি টানা ঘোড়াটির নাম লাল্লু, যে কিনা গোলাপজানের কাছে সন্তানের মতো প্রিয়। লাল্লুর সঙ্গে নাম মিলিয়ে গোলাপজান তার একমাত্র সন্তানের নাম রাখে সাল্লু। যার পুরো নাম সালাউদ্দিন। লাল্লু, সাল্লু, কোচোয়ান স্বামীকে নিয়েই গোলাপজানের এক জীবন।

একদিন কিশোর সাল্লু তৎকালীন ঢাকার অতি জনপ্রিয় ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা ‘সাকরাইন’-এ অংশ নিতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে মারাত্মক আহত হয়। আহত ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে বিক্রি করে দিতে হয় লাল্লুকে—জকি এরফানের কাছে। সন্তানসম লাল্লুকে বিক্রির কষ্ট সইতে না সইতেই মারা যায় সাল্লু। এ অবস্থায় প্রায় দিশেহারা হয়ে পড়ে গোলাপজান। ইতিমধ্যেই ঢাকার সমাজচিত্র বদলাতে শুরু করেছে। বিশ শতকের মধ্যভাগে বিশ্বব্যাপী নতুন প্রযুক্তি বিকাশের দোলা এসে লাগে ঢাকা শহরেও। ঘোড়ার গাড়ির বদলে ঢাকায় শুরু হয় রিকশার প্রচলন। গোলাপজানের স্বামী কোচোয়ান থেকে হয়ে যায় রিকশাচালক। কিন্তু একদিন সে মোটরগাড়ির ধাক্কায় হারিয়ে ফেলে একটি পা। স্বামীর পঙ্গুতে অসহায় পরিবারটির বোঝা নেমে আসে গোলাপজানের ওপর।

‘গোলাপজান’ নাটকের একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

শুরু হয় গোলাপজানের আরেক জীবন। রাষ্ট্র এবং সমাজের কাছে পরিত্যক্ত গোলাপজান হয়ে ওঠে জীবনসংগ্রামের প্রতীক। নেমে আসে রাস্তায় ‘ঘুগনি’ বিক্রির পেশায়। সমাজের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে গোলাপজান শামিল হয় সর্বহারা শ্রেণির শ্রমজীবীদের সংগ্রামের কাতারে।

এ সময় সমাজের প্রযুক্তি বিকাশ হতে থাকে দ্রুত। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দ্রুত বদল হতে থাকে গোলাপজানের পেশাও। গভীর বিস্ময়ে গোলাপজান লক্ষ করে দ্রুত থেকে দ্রুততার সঙ্গে বদলে যাচ্ছে ঢাকা শহরের সমাজ ও সামাজিক ব্যবস্থা। আর ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক মূল্যবোধ। নব্য ধনপতিদের দৌরাত্ম্যে তিন পুরুষের অতি আপন ঢাকা শহর গোলাপজানের কাছে ক্রমাগত অচেনা হতে থাকে।

তার পেশা থেকে শুরু করে আপন জীবন পর্যন্ত বাঁধা পড়ে যায় সমাজপতিদের হাতে। নিজের চোখের সামনে তথাকথিত সামাজিক উন্নয়নের জাঁতাকলে মানবিক মূল্যবোধের পিষ্টতা দেখে হতাশ হয়ে পড়ে গোলাপজান।

জানা গেছে, গঙ্গা-পদ্মা আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব এ ছাড়া মঞ্চস্থ হবে ক্যালকাটা পাপেট থিয়েটারের নাটক ‘আলাদীন’, পূর্বরঙ্গের ‘পাঁচ অধ্যায়’, ভূমিসূতের ‘চর্যাপদের কবি’, সায়কের ‘ভালো লোক’, চাকদার ‘ভানু সুন্দরীর পালা’, নাট্যজনের ‘বিল্বমঙ্গল কাব্য’, নটধার ‘মহাভারত-২’, রঙ্গলোকের ‘লম্বকর্ণ পালা’, ক্যালকাটা কায়ার ‘আলিবাবা’ এবং নয়ে নাটুয়ার ‘মাটির গাড়ি মৃচ্ছকটিক’।