Thank you for trying Sticky AMP!!

জাতীয় নাট্যশালায় আগত অতিথিদের নিয়ে পদাতিক নাট্য সংসদের সদস্যরা দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন করেন। ছবি: ফেসবুক থেকে  

যেন শীতসকালের মিঠে রোদ

‘সকালের মিঠে রোদে ভালো থাকে শরীর। আর সন্ধ্যার পর নাটকের ওমে ভালো থাকে মন।’ নাটক দেখতে আসা এক তরুণের স্বগতোক্তি। গতকাল শনিবার বিকেলে নাটক দেখতে এসেছিল অনেকেই। এক মঞ্চে দর্শক দেখেছেন পরপর দুটি নাটক। পদাতিক নাট্য সংসদের ‘গহনযাত্রা’ ও ‘ম্যাকবেথ’। দুটি নাটকেরই ৫০তম প্রদর্শনী ছিল গতকাল। ২১ জানুয়ারি পদাতিক নাট্য সংসদ ৪৪ বছরে পদার্পণ করছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপনের অংশ হিসেবে গতকাল সে উপলক্ষে ছিল দুই নাটকের প্রদর্শনী, সম্মাননা প্রদান ও আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রিয়জন হারানোয় বেদনাক্রান্ত ও করোনায় থমকে থাকা নাট্যাঙ্গনে গতকালের দিনটি ছিল কিছুটা ব্যতিক্রম।

‘ম্যাকবেথ’ নাটকের একটি দৃশ্য

‘নাটক হোক জীবনযুদ্ধের হাতিয়ার’ ও ‘নাটক হোক জীবনের প্রকাশিত সত্য’—এই মূলমন্ত্র ধারণ করে ১৯৭৮ সালের ২১ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি চত্বর থেকে যাত্রা শুরু হয় পদাতিকের। নাট্যশালার বাইরে করিডরে প্রদীপ জ্বালানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান।

উদ্বোধনী আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান, নির্দেশক ও অভিনেত্রী লাকী ইনাম ও গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়েজীদ।

কেক কেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন

সভাপতিত্ব করেন পদাতিক নাট্য সংসদের সভাপতি সৈয়দ তাসনীন হোসাইন। উদ্বোধনী আয়োজনের পর শুরু হয় নাটক ‘গহনযাত্রা’র প্রদর্শনী। রুবাইয়াৎ আহমেদের রচনা ও সুদীপ চক্রবর্তীর নির্দেশনায় নাটকে একক অভিনয় করেছেন সৈয়দা শামছি আরা। নাটকে তুলে ধরা হয় বিশ্বের সামগ্রিক অবস্থা, জঙ্গিবাদের উত্থান ও বিশ্বরাজনীতির সামগ্রিক চিত্র।
‘গহনযাত্রা’ শেষে শুরু হয় প্রবন্ধপাঠ। ‘করোনার ক্রান্তিকালে মনে পড়ে’ শীর্ষক প্রবন্ধটি উপস্থাপনা করেন অপূর্ব কুমার কুণ্ডু। প্রবন্ধে তিনি করোনাকালে হারানো প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী, মনজুরে মাওলা, ওস্তাদ শাহাদাত হোসেন খান, আলী যাকের, সাদেক বাচ্চু, কে এস ফিরোজ, মান্নান হীরা, মোস্তফা কামাল সৈয়দ, আবদুল কাদের, মুজিবুর রহমান দিলু প্রমুখকে স্মরণ করেন।

‘গহনযাত্রা’ নাটকে সৈয়দা শামছি আরা

তুলে ধরেন নাট্যজন আলী যাকের ও মান্নান হীরার জীবন ও কর্মের বিভিন্ন দিক। প্রবন্ধ শেষে আবারও শুরু হয় নাটক, ‘ম্যাকবেথ’।

উইলিয়াম শেক্‌সপিয়ার রচিত নাটকটি সৈয়দ শামসুল হকের অনুবাদ থেকে নির্দেশনা দিয়েছেন সুদীপ চক্রবর্তী। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন মশিউর রহমান, মহিউদ্দিন জুয়েল, শাখাওয়াত হোসেন প্রমুখ।

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ সম্মাননা পদক তুলে দেন

শেষে নাটকের নেপথ্যের কারিগরদের দেওয়া হয় সম্মাননা স্মারক। সম্মাননাপ্রাপ্তরা হলেন সৈয়দ শামসুল হক (মরণোত্তর), ওয়াহিদা মল্লিক জলি, সুদীপ চক্রবর্তী, রুবাইয়াৎ আহমেদ, সায়েম রানা, তৈমুর হান্নান, সঞ্জীব কুমার দে, আতিকুল ইসলাম, শিশির রহমান প্রমুখ। যাঁরা উপস্থিত ছিলেন না, তাঁদের প্রতিনিধিরা স্মারক গ্রহণ করেন। এ ছাড়া ‘ম্যাকবেথ’ নাটকের ৫০টি মঞ্চায়নে অংশগ্রহণ করায় সৈয়দা শামছি আরা, মশিউর রহমান, শাখাওয়াত হোসেন, ইকরামুল ইসলাম, সালমান শুভ ও তন্ময় বিশ্বাসকে ৫০তম সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ সম্মাননা পদক তুলে দেন।

প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন অতিথিরা

এমনিতে শীতের আগমনে উৎসবের আমেজে মুখর হয়ে ওঠে ঢাকার সংস্কৃতি অঙ্গন। নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাস রীতিমতো উৎসবে রূপ নেয়। একটি শেষ হতে না হতেই শুরু হয়ে যায় আরেকটি উৎসব। করোনায় থেমে গেছে সব আয়োজন। থমকে থাকা সংস্কৃতি অঙ্গনে গতকালের সন্ধ্যাটি ছিল যেন শীতসকালের মিঠে রোদের মতোই।