Thank you for trying Sticky AMP!!

ষষ্ঠীতে শুরু হলো 'শারদীয় নাট্যোৎসব'

মণিপুরি থিয়েটারের ‘কহে বীরাঙ্গনা’ নাটকের একটি মুহূর্ত। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকের বোলে মুখর হয়ে উঠছে রাজধানীর পূজামণ্ডপগুলো। আজ শুক্রবার সকালে ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। আর শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় শুরু হয়েছে ‘শারদীয় নাট্যোৎসব’।

‘মঞ্চমায়ায় মানবতার জয়’ স্লোগান নিয়ে আজ থেকে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত পাঁচ দিন শারদীয় নাট্যোৎসব চলবে রাজধানীর সম্রাট আকবরের প্রধান সেনাপতি মানসিংহের স্মৃতিবিজড়িত রাজারবাগের গঙ্গাসাগর দিঘির পাড়ে বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির প্রাঙ্গণে। আয়োজক বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশান পরিচালনা কমিটি।

আজ বিকেলে শারদীয় নাট্যোৎসবের উদ্বোধন হয় ‘ফেরদৌসী মজুমদার বেস্ট স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার’ প্রদানের মধ্য দিয়ে। স্থানীয় অভয় বিনোদিনী উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্য থেকে নৈতিক-চারিত্রিক-সাংস্কৃতিক-খেলাধুলা-পড়াশোনা-সামাজিক দায়িত্ববোধ প্রভৃতি ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক বিচারে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিবেচনায় এ বছর ‘ফেরদৌসী মজুমদার বেস্ট স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার’ পেয়েছে বুশরা নুসাইবা চৌধুরী। নিজের নামাঙ্কিত অ্যাওয়ার্ড নিজেই তুলে দেন ফেরদৌসী মজুমদার। দেওয়া হয় উত্তরীয়, ক্রেস্ট এবং অর্থ সম্মানী বাবদ ২৫ হাজার টাকা। উদ্বোধনীতে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরী, আইটিআইয়ের সাম্মানিক সভাপতি রামেন্দু মজুমদার, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, শারদীয় নাট্যোৎসবের আহ্বায়ক লায়ন চিত্তরঞ্জন দাস প্রমুখ।

আজ উদ্বোধনী সন্ধ্যায় মঞ্চায়িত হয় থিয়েটার নাট্যদলের ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ এবং মণিপুরি থিয়েটারের ‘কহে বীরাঙ্গনা’ নাটক।

ফেরদৌসী মজুমদারের নামে চালু হয়েছে ‘ফেরদৌসী মজুমদার বেস্ট স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার’ পদক। ছবি: সংগৃহীত

মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’ অবলম্বনে ‘কহে বীরাঙ্গনা’ নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন শুভাশিস সিনহা। একক অভিনয় করেন জ্যোতি সিনহা। সৈয়দ শামসুল হকের লেখা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ নির্দেশনা দিয়েছেন আবদুল্লাহ আল-মামুন। পরবর্তী সময়ে নবনির্মাণ করেছেন সুদীপ চক্রবর্তী। নাটকটিতে অভিনয় করেছেন ফেরদৌসী মজুমদার, কেরামত মওলা, তোফা হোসেন, ত্রপা মজুমদার, মারুফ কবির, পরেশ আচার্য, সমর দেব, খুরশিদ আলম প্রমুখ।

উৎসবের দ্বিতীয় দিন শনিবার বিকেল চারটা থেকে ভজন ও শাস্ত্রীয় সংগীত পরিবেশন করবেন পণ্ডিত রামপ্রসাদ সূত্রধর (শিষ্যপতি) ও মানিক সিংহ রায়। এরপর সন্ধ্যা সাতটায় দেশ নাটক মঞ্চস্থ করবে মাসুম রেজা রচিত ও নির্দেশিত নাটক ‘নিত্যপুরাণ’। রাত নয়টায় থিয়েটার ৫২ মঞ্চস্থ করবে নতুন নাটক ‘কালিদাস’। নির্দেশনা দিয়েছেন জয়িতা মহলানবীশ।

পরদিন রোববার বিকেল চারটায় পদাবলী কীর্তন পরিবেশন করবেন জয়পুরহাটের কুমারী লক্ষ্মী দেবী। 

এরপর সন্ধ্যা সাতটায় আরণ্যক নাট্যদল মঞ্চস্থ করবে ‘ময়ূর সিংহাসন’ নাটকটি। মান্নান হীরার রচনায় নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন শাহ আলম দুলাল। রাত নয়টায় স্বপ্নদল মঞ্চস্থ করবে ‘জাদুর প্রদীপ’। এটি নির্দেশনা দিয়েছেন জাহিদ রিপন।

‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ নাটকের একটি দৃশ্য। ছবি: প্রথম আলো

সোমবার সন্ধ্যা সাতটায় নাগরিক নাট্যাঙ্গন মঞ্চস্থ করবে ‘বাংলা আমার বাংলা ও সেই সব দিনগুলো’। এটি নির্দেশনা দিয়েছেন হৃদি হক। রাত নয়টায় চন্দ্রকলা থিয়েটার মঞ্চস্থ করবে ‘তন্ত্রমন্ত্র’। মঙ্গলবার শারদীয় নাট্যোৎসবের সমাপনী সন্ধ্যায় বহুবচন নাট্যদল মঞ্চস্থ করবে ‘অনিকেত সন্ধ্যা’। নির্দেশনা দিয়েছেন আরহাম আলো। এদিন রাত নয়টায় নাট্যফৌজ মঞ্চস্থ করবে ‘এজন মুন্সির পোস্টার’। নির্দেশনা দিয়েছেন লায়ন চিত্ত রঞ্জন দাস।

বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দিরের সভাপতি শারদীয় নাট্যোৎসবের আহ্বায়ক লায়ন চিত্তরঞ্জন দাস প্রথম আলোকে জানান, ১৯৯৫ সাল থেকে নাট্যোৎসবের আয়োজন করছেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘একসময় “ভক্ত গিরিশ”, “ভক্ত প্রহ্লাদ”, “মহারাজা হরিশ্চন্দ্র”, “রাম-সীতা” প্রভৃতি পৌরাণিক এবং ঐতিহাসিক নাটক করতাম। এটা এক অর্থে আমাদের মতো করে আমাদের নির্মাণ, আমাদের আঞ্চলিক আবহের মধ্য দিয়ে উদ্‌যাপন শুরু ও শেষ ছিল। কিন্তু ২০১৬ সাল থেকে আমরা আমাদের বৈচিত্র্যপূর্ণ নাট্যোৎসব ও সাংস্কৃতিক আয়োজন নিয়ে দর্শকদের বিনোদন দেওয়ার চেষ্টা করছি। গত কয়েক বছর দেখেছি, এখানে মেলা-দিঘি-দেবী দেখতে যেমন অনুরাগীর ঢল নামে, তেমনি লিজেন্ড অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদারের অভিনয় দেখতে অনুরাগী দর্শক-শ্রোতার মিলনমেলা তৈরি হয়ে যাবে। তাঁর প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা। পাশাপাশি অন্য দলের প্রযোজনাগুলো উৎসাহব্যঞ্জক। অনুরাগী ভক্ত-দর্শক-শ্রোতা আসবেন, লোকমেলা দেখবেন, মণ্ডপ পরিদর্শন করবেন, নাটক দেখবেন।’