Thank you for trying Sticky AMP!!

সম্পর্কের সংকট নিয়ে 'অপরেরা'

অপরেরা নাটকের দৃশ্য

মহড়াকক্ষের ভেতরে ঢুকেই খটকা লাগে। ইউরোপীয় তিন ধ্রুপদি নাট্যকারের নাটক। মঞ্চসজ্জা নিরাভরণ, যেন দেশীয় রীতি। চারদিকে দর্শক বসার স্থান। মাঝখানে অভিনয়। ইউরোপের পাণ্ডুলিপি আর দেশীয় উপস্থাপনার মিশেল নাকি?

নাবিকরূপী একজন ঢুকে পড়ে মঞ্চে। মাথায় তার সাদা হ্যাট। কোমরে পিস্তল গোঁজা। এসেই গানের সুরে বলে, ‘আমি তোমাকে নিতে এসেছি। তুমি কি প্রস্তুত?’ মঞ্চে তখন এক যুগল। এলিডা ও ওয়াঙ্গেল। ওয়াঙ্গেল ভালোবাসে এলিডাকে। ওয়াঙ্গেল নাবিককে বলে, ‘এলিডা যাওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়। সে যাবে না।’ নাবিক তাকে নেবেই। কারণ সে যে এলিডার সাবেক প্রেমিক। এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার এলিডার ওপর। কী করবে এলিডা? বুঝতে পারি এই নাবিক আর কেউ নয়, ফ্রিম্যান। এটি হেনরিক ইবসেনের ‘দ্য লেডি ফ্রম দ্য সি’ নাটকের অংশ।

ইউরোপীয় তিন মহান নাট্যকারের ছয়টি নাটকের অংশ নিয়ে সাজানো নাটক অপরেরা। অগাস্ট স্ট্রিন্ডবার্গের ‘দ্য ফাদার’ ও ‘মিস জুলি’, আন্তন চেখভের ‘থ্রি সিস্টার্স’ ও ‘দ্য সিগাল’ এবং হেনরিক ইবসেনের ‘আ ডলস হাউস’ ও ‘দ্য লেডি ফ্রম দ্য সি’ নাটকের ছোট ছোট অংশ নিয়ে তৈরি হয়েছে নাটকটি। পুরো নাটকটিতে উঠে এসেছে পারিবারিক সম্পর্কের সংকটগুলোর নানা রূপ।

কেন ছয়টি নাটকের অংশবিশেষ নিয়ে নাটকের বুনন? নির্দেশক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক আশিক রহমান বললেন, ‘আমি স্তানিস্লাভস্কির অভিনয়-পদ্ধতি পড়াই। শিক্ষার্থীদের বাস্তববাদী অভিনয় শেখাতে গিয়ে এই নাটকগুলো নিয়ে কাজ করেছি। তখন মনের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্কের এই সংকটগুলো উপস্থাপনের আশা জাগে।’

সেই বাসনা থেকে তিন নাট্যকারের ছয় নাটক নেওয়া। যেহেতু বাস্তববাদী অভিনয়ের উপস্থাপন হবে, তাই মঞ্চে কোনো নির্দিষ্ট সজ্জা রাখা যায়নি। একেকটি নাটকের ঘটনাও একেক রকম, তাই খোলা মঞ্চকেই রাখা হয়েছে অভিনয়ের জন্য। নাটক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কেন এই নাট্যকারেরা? নির্দেশকের ভাষ্য, ‘দর্শককে বর্তমান সময়ের সঙ্গে বেশি যুক্ত করতে চেয়েছি। তাই আঠারো শতকের পরের নাটকগুলো নিয়েই এটি সাজানো হয়েছে।’ বলে রাখা ভালো, নাটকটিতে অভিনয় করছেন একদমই নতুনেরা। বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের পঞ্চম সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের দেখা যাবে পাদপ্রদীপের আলোয়।

নাটকটির ড্রামাতার্গ বিভাগীয় শিক্ষক শাহমান মৈশান বলেন, ‘শিল্প-বিপ্লবোত্তর আধুনিক ইউরোপীয় নাট্যভুবনের এই নাট্যকারদের নাটকগুলো নর-নারীর বহুমাত্রিক সম্পর্কের উদ্ভাবনী বয়ানের জন্য মাস্টারপিসে পরিণত হয়েছে।’

কথা চলে। এরই মধ্যে শোনা যায়, কুশীলব প্রস্তুত। সেদিন বিকেলে ছিল আমন্ত্রিত সাংবাদিকদের জন্য একটি প্রদর্শনীও। গতকাল শুরু হয়েছে প্রদর্শনী। দেখা যাবে প্রতিদিন সন্ধ্যা সাতটায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটমণ্ডলে, ১৪ জুলাই পর্যন্ত।