Thank you for trying Sticky AMP!!

প্লিজ প্রেক্ষাগৃহে আসুন, ছবিটি দেখুন: ঋতুপর্ণা

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। ছবি: সংগৃহীত

এবার বাংলা নববর্ষে মুক্তি পাচ্ছে চিত্রনায়ক আলমগীর পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘একটি সিনেমার গল্প’। ছবিটি নিয়ে এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জোর প্রচারণা শুরু হয়েছে। ছবিতে আরিফিন শুভর বিপরীতে অভিনয় করেছেন কলকাতার নায়িকা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। ছবি মুক্তির আগে প্রচারণায় অংশ নিতে ঢাকায় আসবেন ঋতুপর্ণা। তার আগে গতকাল বুধবার রাতে নতুন এই ছবি আর অন্যান্য প্রসঙ্গে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

কয়েক বছর পর বাংলাদেশে আপনার ছবি মুক্তি পাচ্ছে। কেমন লাগছে?
২০১৪ সালে বন্ধু ফেরদৌস প্রযোজিত ‘এক কাপ চা’ ছবিতে বাংলাদেশের দর্শক আমাকে সর্বশেষ দেখেছিলেন। ওই ছবিতে আমি ছিলাম অতিথি চরিত্রে। ‘একটি সিনেমার গল্প’ ছবি নিয়ে আমি ভীষণ উত্তেজিত। আমার তো রোজই মনে হয়, ছবিতে নতুনভাবে নিজেকে আবিষ্কার করছি, ছবি সম্পর্কে জানছি, নতুনভাবে পড়ছি—কোনো ছবি মুক্তির আগে আমার কাছে সব সময় নিজেকে নতুন মনে হয়। এই মনে হওয়ার কারণে এত বছর এই জায়গাতে আছি। কাজ করতে এত ভালো লাগে। ক্লান্ত হইনি।

২৩ বছর ধরে অভিনয় করছেন। সত্যিই ক্লান্ত হননি?
না। কোনো দিন ক্লান্ত হতে চাই না। আমি চাই প্রতিটি ছবিতে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে। ‘একটি সিনেমার গল্প’ ছবিতে সুন্দর একজন অভিনেত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছি। পুরো ছবিজুড়ে আবেগের ছড়াছড়ি। ব্যাপারটি আমার খুব ভালো লেগেছে। কারণ, ইমোশনাল ছবিতে কাজ করতে ভালোবাসি।

এবার কেমন অনুভূতি হলো?
আলমগীর চমৎকার ভাবনা দিয়ে ‘একটি সিনেমার গল্প’ ছবিটি বানিয়েছেন। তিনি একজন কিংবদন্তি, তাঁর সঙ্গে অনেক বছর পর একসঙ্গে ছবিতে কাজ করেছি। বাংলাদেশের ছবিতে ফিরে এসেছি, দারুণ অনুভূতি। এই ছবিতে বাংলাদেশের আরিফিন শুভর সঙ্গে কাজ করেছি। আমাদের জুটিকে আশা করি দর্শকদের ভালো লাগবে।

এই ছবিতে আপনার চরিত্রের নাম কবিতা।
হ্যাঁ। জানেন, কবিতা চরিত্রের সঙ্গে আমার বাস্তব জীবনের অনেকখানি মিল আছে। কিছু জায়গায় অমিলও আছে। কবিতা এমন একজন মেয়ে, যাঁর মধ্যে অসম্ভব প্রাণ আছে। প্রাণটা কখনো সে বোঝায়, কখনো বোঝায় না। একজন অভিনেত্রীর জীবনে অনেক রকম ঝড় বয়ে যায়, সে ঝড়গুলো সব সময় সে সবার সামনে প্রকাশ করে না। নিজের মধ্যে সে ক্ষতবিক্ষত হয়। কবিতাকে খুব কাছের মনে হয়েছে। কবিতার মাঝে যে-কেউ, কোথাও না কোথাও নিজেকে খুঁজে পাবেন। প্রত্যেক মেয়ের মধ্যে কবিতা বাস করে। এই জায়গাটা ছবিতে খুব সুন্দরভাবে দেখিয়েছেন পরিচালক।

আরিফিন শুভর কোনো ছবি দেখেছেন?
না, কাজ করার আগে ওর কথা জানতে পারি। এর আগে কলকাতায় আমার একটা ছবির অনুষ্ঠানে ও এসেছিল। ‘একটি সিনেমার গল্প’ নিয়ে যখন কথা হয়, তখন আলমগীর ভাইয়ের কাছে জানতে পারি, শুভ এখন ভালো কাজ করছে। ঢাকায় শুভর সঙ্গে কথা হয়। তখন ওর ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবিটি মুক্তি পায়। আমরা যখন শুটিং করছি, তখন বাংলাদেশের দর্শক হুমড়ি খেয়ে ছবিটি দেখছিল। শুভকে বলেছিলাম, আমি তোমার জন্য প্রচণ্ড লাকি। আমি ঢাকায় আসার পর তোমার ছবিটি বেশ ভালো ব্যবসা করছে। মনে হয়েছে, ওকে যদি ভালো কাজ দেওয়া যায়, ও অনেক দূর যেতে পারবে।

‘একটি সিনেমার গল্প’ ছবিতে আরিফিন শুভ ও ঋতুপর্ণা

আপনার এই মন্তব্য আরিফিন শুভকে নিশ্চয়ই অনুপ্রাণিত করবে।
আমি কিন্তু বরাবরই তরুণদের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিই। নতুন পরিচালক, নতুন প্রযোজক, নতুন নায়কের সঙ্গে প্রচুর কাজ করেছি। নতুন পরিচালক-প্রযোজক তৈরি করেছি। নতুনদের ভালো জায়গায় দেখতে আমার ভালোই লাগে।

কোন ভাবনা থেকে নতুনদের নিয়ে কাজ করেন?
শিবপ্রসাদের প্রথম দিককার ছবি আমি প্রেজেন্টস করেছিলাম, যদিও ওই ছবিতে অভিনয় করিনি। এ রকম অনেক নির্মাতার প্রথম ছবি আমার প্রতিষ্ঠান থেকে তৈরি হয়েছে। অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায় তো ‘চারুলতা ২০১১’ বানিয়ে সুপার-ডুপার হিট। অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী শুরুর দিকে ‘অনুরণন’ বানিয়েছিলেন, এখন তিনি সুপারস্টার নির্মাতা। আমার প্রযোজনায় প্রথম ছবি বানিয়ে অনেকে সফল হয়েছেন। তাই নতুনদের সঙ্গে কাজ করে খুব খুশি হই।

নতুন পরিচালকের কোন দিকটা আপনাকে মুগ্ধ করে?
অবশ্যই তার মেধা। আমি তার লক্ষ্যটাও দেখব। সে নিজে কী দেখতে পাচ্ছে, আমাকে কী দেখাতে পারছে, মানে তার দৃষ্টিভঙ্গিতে আমাকে কত দূর নিয়ে যেতে পারছে। অবশ্যই তার দৃষ্টি দিয়ে আমি কতটা দেখতে পারছি। তখন বোঝা যাবে, সে কতটা মেধাবী। অনেক মহিলা পরিচালককে প্রোমট করেছি। আজ যে রেশমি মিত্র কাজ করছেন, এ রকম নাম জানা অনেক মেধাবী পরিচালককে নিয়ে কাজ করেছি।

আরিফিন শুভর সঙ্গে আপনি আরেকটি ছবি করছেন।
হ্যাঁ। আমি আর আরিফিন শুভ কলকাতায় একটি ছবির কাজ করছি, নাম ‘আহারে’। সুন্দর গল্প। বাংলাদেশের একজন শেফ আর কলকাতার হোম ডেলিভারির কাজে নিয়োজিত একটা মেয়ের গল্প।

‘একটি সিনেমার গল্প’ ছবি নিয়ে আপনি কী চান?
আমি চাই, আলমগীর ভাইয়ের ছবিটি সুপার-ডুপার হিট হোক। সবাইকে বলব, প্লিজ আপনারা প্রেক্ষাগৃহে আসুন, ছবিটি দেখুন। অনেক দিন পর আলমগীর ভাই একটা ছবি বানিয়েছেন। আমি এমনিতে তাঁকে শ্রদ্ধা করি। পরিচালক এবং অভিনেতা হিসেবে তাঁর সম্পর্কে বলার ধৃষ্টতা আমি রাখি না, তিনি বড় মাপের একজন শিল্পী, বড় মাপের পরিচালক, বড় মনের একজন মানুষ। এই ছবির সবচেয়ে বড় পাওয়া হচ্ছে, সুরকার হিসেবে উপমহাদেশের প্রখ্যাত গায়িকা রুনা লায়লাকে পাওয়া।

‘একটি সিনেমার গল্প’ ছবিতে আরিফিন শুভ ও ঋতুপর্ণা

দর্শককে প্রেক্ষাগৃহে আনার জন্য আপনার কোনো পরিকল্পনা আছে?
এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে আমি ঢাকায় আসছি। তখন ঢাকার দর্শকদের ছবিটি দেখা জন্য আমন্ত্রণ জানাব। এই ছবির হাইলাইট পয়েন্ট যেগুলো আছে, মানুষকে জানাব। এই ছবির মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শক আরেকটি চমৎকার মৌলিক গল্প পাবে। এই ছবির মাধ্যমে মানুষের যে সাধারণ মূল্যবোধ থাকা দরকার, যেগুলো জীবন থেকে হারিয়ে গেছে, আবার ফিরে পাবেন। কিছু কিছু ফান্ডামেন্টাল ভ্যালুজ কোনো দিন মানুষের জীবন থেকে চলে যায় না। এগুলো চিরন্তন, আলমগীর ভাই তা-ই দেখিয়েছেন।

দীর্ঘদিন ধরে আপনি প্রযোজক হিসেবে কাজ করেছেন। পরিচালক হিসেবে কবে পাওয়া যাবে?
সেই আত্মবিশ্বাস এখনো আমার আসেনি। অভিনেত্রী হয়েই থাকতে চাই। এখন তো এত ছবি, এত শিডিউল—নির্মাণ নিয়ে ভাববার সময় নেই। আমি তখনই পরিচালনা করব, যখন সময় দিতে পারব।

আপনি বাণিজ্যিক ঘরানার ছবিতে যেমন কাজ করেছেন, তেমনি বিকল্প ধারার ছবির কাজও করেছেন।
একজন অভিনেত্রী দর্শক হৃদয়ে বেঁচে থাকেন বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করে। আমি আসলে আমার চরিত্রগুলো মানুষের মনে গেঁথে দিয়ে যেতে চাই। ‘রাজকাহিনি’ ছবির বেগমজান, ‘প্রাক্তন’ ছবির সুদীপা, ‘পারমিতার একদিন’ ছবির পারমিতা, ‘চারুলতা’ ছবির চারুলতা—আমি সেভাবে নিজেকে দেখতে চাই। আমি নিজের ছবিগুলোয় চরিত্র হয়ে উঠি, ঋতুপর্ণা থাকি না।

চরিত্র হয়ে ওঠার পেছনে আপনি যখন চরিত্র হয়ে ওঠেন...
আমি যখন কোনো চরিত্র পাই, তখন আমার পরিচালকের কাছ থেকে পুরোটা জেনে নিই। আমার চরিত্র কতটা ইমোশনাল হবে কিংবা হবে না, কতটা পার্সোনালিটি থাকবে কিংবা থাকবে না। ছোটবেলায় কেমন ছিল, বড় হয়ে কেমন হয়েছে—একটা চরিত্রের গবেষণা এভাবেই হয়। যে চরিত্রটা বের হয়ে আসবে, সে কীভাবে কথা বলবে, তার বন্ধু কারা। সে কতটা শিক্ষিত কিংবা কতটা অশিক্ষিত—এভাবেই চরিত্রকে আত্মস্থ করি।

এবার জিও ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডে আপনি একটা নাচে পারফর্ম করেছেন।
নাচটা নিয়মিত চালিয়ে নিচ্ছি। আমার একটা ড্যান্স ট্রুপ আছে। প্রচুর নৃত্যনাট্য পরিচালনা করি। সম্প্রতি জিও ফিল্মফেয়ারে যে নাচ করেছি, ওটা ছিল একদম কমার্শিয়াল। সামনে আমার আরও দুটো ড্যান্স ড্রামা আসছে। নাচ আমার প্যাশন। এ বছরে আরও একটা বড় মিউজিক্যাল ড্যান্স পারফরম্যান্স করব। নাচ আর অভিনয়, দুটো সমানতালে চলবে। নাচ আমার ভালোবাসার জায়গা।

ছোটবেলা থেকে নাচ শেখার কারণে ছবির কাজে ভালোই হলো?
একদমই তাই। ছবিতে নাচ থাকলে আমি বেশ চনমনে হয়ে যাই। দর্শক আমার ছবিতে এত নাচ দেখেছেন, তা বলে শেষ করা যাবে না। প্রায়ই বলতে শুনি, আমার ছবি মানেই নাচ। বাংলাদেশে আমি যে কয়টা ছবিতে অভিনয় করেছি, প্রতিটি ছবির গান সুপারহিট।

আপনি তো ছবিও আঁকতেন...
আমি ছোটবেলা থেকে ছবি আঁকছি। আমার ইলাস্ট্রেশনগুলো নিয়ে একটা পরিকল্পনা মাথায় আছে। আমি কিন্তু লিখি। লেখা নিয়ে অনেকেই বলছেন কিছু করতে। ছবি আর লেখা একসঙ্গে নিয়ে কিছু করার ইচ্ছা। ছবি নিয়ে এখনো কোনো প্রদর্শনী করিনি। শুটিং আর ইভেন্টের ব্যস্ততা কমলে এসব নিয়ে ভাবব।

লেখার ক্ষেত্রে কী প্রাধান্য দেন?
সমাজ নিয়ে লিখি না। মনের মধ্যে যা আসে, তা-ই লিখি। নির্দিষ্ট কোনো বিষয় নিয়ে লিখি না। বাবা-মা, প্রেমিক-প্রেমিকার সম্পর্ক—এসব আমার লেখায় প্রাধান্য পায়। আমি ভালোবাসি সম্পর্ক নিয়ে লিখতে। আমার কাছে সব সময় সম্পর্কটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

ব্যাডমিন্টন খেলতে ভালোবাসেন?
আউটডোর গেমসের মধ্যে ব্যাডমিন্টন খুব প্রিয় খেলা। ইনডোর গেমসের মধ্যে ক্যারম। ক্যারমের মধ্যে তো আমি বোর্ড হারাই।

ব্যাডমিন্টনে প্রিয় খেলোয়াড়...
প্রকাশ পাড়ুকোন। যখন ছোট ছিলাম, তিনি কী হ্যান্ডসাম ছিলেন, বাপরে বাপ! বরিস বেকারও আমার প্রিয় খেলোয়াড়। ক্রিকেট ভালোবাসি। ফুটবল অতটা বুঝি না।

কলকাতার ছবির বর্তমান অবস্থা কেমন?
ভালো, তবে বলিউডি ছবির চাপে আছে। কলকাতা এমন একটা জায়গা, এখানে বলিউড ও মালায়লাম থেকে শুরু করে সব রকম ছবি মুক্তি পায়। এখানে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। তাই বাংলা ছবিকে প্রতিযোগিতা করা মানে এক্সট্রা অর্ডিনারি হতে হবে। সে জন্য চেষ্টা করছি এক্সট্রা অর্ডিনারি ছবি বানাতে। আমাদের তো বাজেট সীমাবদ্ধতা আছে। এর মধ্যে চেষ্টা করছি ভালো মানের ছবি বানাতে। প্রতিদিন সংগ্রাম করতে হয়।

সংসারের খবর বলুন।
সংসারজীবনের একটা অভিযোগ, ঋতুপর্ণার সময়। ‘একটি সিনেমার গল্প’র শুটিংয়ে ঢাকায় থাকার সময় আলমগীর ভাইকে আমার স্বামী সঞ্জয় বলছিল, এই আপনি শিডিউল নিয়েছেন বলে আমি আর শিডিউল নিতে পারছি না (হাসি)। আমার মেয়ের বয়স ছয় বছর। স্কুলে যায়। খুব ভালো নাচে। নাচের দিকে ওর তীব্র ঝোঁক।