Thank you for trying Sticky AMP!!

‘কলকাতায় প্রজেক্টর লাগিয়ে মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরী, বাবু ভাইদের নাটক দেখে’

ভারতের জি-বাংলার জনপ্রিয় সিরিয়াল ‘রাণী রাসমণি’র জীবনসঙ্গী রাজচন্দ্র হয়ে ক্যামেরার সামনে আসেন। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি বাংলাদেশের বাগেরহাটের মোল্লাহাটের গাজী আবদুন নূরকে। বাবার চাকরিসূত্রে যশোরে এসে থিয়েটার করেছেন। রবীন্দ্রভারতী থেকে ড্রামা নিয়ে স্নাতক আর সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেন। তারপর কিছুদিন কাজ করেছেন ক্যামেরার পেছনে অরোরা ফিল্মসে, ১১৩ বছরের পুরোনো প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে। প্রস্তুতি নিয়েই অভিনয়ের রাস্তায় হাঁটা শুরু করেছেন। কথা হলো দুই বাংলার এই অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে।

গাজী আবদুন নূর
প্রশ্ন

কেমন আছেন?

খুব ভালো আছি। গত মার্চের ১০ তারিখ থেকে যশোরে, বাড়িতেই। বাড়িতে এসেই সহকারীকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। কারণ, প্রতিদিন তাঁর আসা-যাওয়াটা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছিল। সেই থেকে আমিই তিন বেলা রান্না করছি। আমি আর মা খাচ্ছি। প্রায় এক দশক কলকাতায় থাকায় আমি মোটামুটি সব ধরনের রান্নাই এখন জানি।

প্রশ্ন

শিল্পসত্তার চর্চার জন্য কী করলেন?

এর মধ্যে কলকাতার একটা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে উৎসবের জন্য আয়োজকেরা আমাকে বিচারক বানাল। প্রচুর সিনেমা দেখলাম ওই সময়টায়। রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে আমার নিজের বানানো আর নির্দেশনায় একটা লাইভ থিয়েটার করলাম। বিমল করের একটা রোমান্টিক উপন্যাস ‘ঘুঘু’কে কমেডি নাটক বানানোর জন্য লিখেছিলেন দেবব্রত চক্রবর্তী। আমিও তখন এ কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। তিনি আর নেই। তাই এবার আমিই এই নাটক নিয়ে আরেক দফা কাজ করলাম। ইচ্ছা আছে, সবকিছু স্বাভাবিক হলে নাটকটি মঞ্চস্থ করব।

প্রশ্ন

‘যৈবতী কন্যার মন’ও ‘ফ্রম বাংলাদেশ’ সিনেমা দুটির কী অবস্থা?

নারগিস আক্তার পরিচালিত ‘যৈবতী কন্যার মন’ ছবিটি তো পয়লা বৈশাখে মুক্তির কথা ছিল। করোনার জন্য পিছিয়ে গেল। আর শাহনেওয়াজ কাকলীর ‘ফ্রম বাংলাদেশ’ ছবিটির শুটিং শেষ। মুক্তিযুদ্ধের একেবারেই ভিন্ন স্বাদের একটি গল্প। ফেরদৌসী মজুমদার, তমালিকা কর্মকর, ঊর্মিলা শ্রাবন্তী করসহ আরও অনেকে এতে অভিনয় করেছেন।

প্রশ্ন

দুই বাংলায় কাজের পরিবেশে কী পার্থক্য দেখেন?

এখানে অনেক সীমাবদ্ধতা নিয়ে কাজ করতে হয়। সবাই কেমন যেন ছটফট করে কাজটা করে। গুছিয়ে কাজ করার প্রবণতা কম। গল্প মুখে মুখে শোনায়। কার কখন কলটাইম, সেটার ঠিক-ঠিকানা নেই। সবাইকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ডাকা হয়। সবাই এসে বসে থাকেন। হয়তো তাঁর কোনো শটই নেই। অথচ রাতের বেলা একটু হোমওয়ার্ক করে একটা সুন্দর পরিকল্পনা নিয়ে দিন শুরু করলে কাজটা পরিপাটি হয়। এখানে যিনি পরিচালক, তিনিই ক্যামেরায়, তিনিই এডি (অ্যাসিসট্যান্ট ডিরেক্টর, অর্থাৎ সহকারী পরিচালক), তিনিই মেকআপম্যান, তিনিই প্রযোজক, সম্পাদক—সবই। ভাগ ভাগ করা থাকলে কাজটা সহজে, ভালোভাবে হয়।

গাজী আবদুন নূর
প্রশ্ন

ঘরবন্দী দিনগুলোয় ফেসবুকে তো সময় দেওয়া হয়েছে। কী বুঝলেন?

ফেসবুকে অনেক বাংলাদেশি শিল্পীদের সঙ্গে পরিচয় হলো। এখানে শিল্পীদের দেখনদারির বিষয়টা প্রবল। সবাই প্রশ্ন করছে, উত্তর খুঁজছে, আলাপ করছে আর সমালোচনা করছে। ওই পর্যন্তই। কাজটা হচ্ছে না। সবাই সবই করছে, শুধু কাজটা বাদে।

প্রশ্ন

কী কাজ করছেন সামনে?

এই মুহূর্তে কোনো কাজের সঙ্গে যুক্ত হইনি। কারণ, আমার মায়ের বয়স হয়েছে। একা থাকেন। দেখাশোনার কেউ নেই। আপাতত আরও কিছুদিন মাকে সময় দিতে চাই। বেশকিছু কাজের প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু মনমতো হচ্ছে না।

শাহনেওয়াজ কাকলীর ‘ফ্রম বাংলাদেশ’ ছবির সেটে গাজী আবদুন নূর, ফেরদৌসী মজুমদার ও ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর
প্রশ্ন

বাংলাদেশের নাটক বা সিরিয়ালে অভিনয়ের ইচ্ছা আছে?

ইচ্ছা তো আছেই। আমি অভিনয়শিল্পী। আর অভিনয়ের ক্ষেত্রে কোনো মূলধারা, ভুলধারা নেই। মঞ্চ, টেলিভিশন, বড় পর্দা নেই। বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রি কেন যেন বিষয়টা বুঝতে পারে না। যে একটা চরিত্র করে জনপ্রিয়তা পেয়েছে, তাকে সেই ধরনের চরিত্রই ঘুরেফিরে দেওয়া হয়। বলা হয়, দর্শক তাঁকে এর বাইরে দেখতে চায় না। এ কথার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে? ধরে নিলাম কথা সত্য। এবার আপনি ধরুন, আপনার সন্তান বিরিয়ানি খেতে ভালোবাসে। সে জন্য আপনি যদি তাকে তিন বেলা বিরিয়ানি খাওয়ান, ১০ বছর পর আপনার সন্তানের কী অবস্থা হবে ভেবে দেখেছেন? তাকে কচুশাক, ভর্তা, মাছ—সবই খাওয়াতে হবে। দর্শককেও তা–ই। তাহলে দর্শকের চোখ, মন তৈরি হবে। ওই অভিনয়শিল্পীরও শিল্পীসত্তার বিকাশ হবে। আপনি ভাবতেও পারবেন না, কলকাতায় বাংলাদেশি নাটকের কী তুমুল জনপ্রিয়তা! কলকাতায় প্রজেক্টর লাগিয়ে মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরী, বাবু ভাইদের নাটক দেখে। আমার মনে আছে, আমার হলের ঘরে প্রায় ৪০ জন একসঙ্গে বসে ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নম্বর’ সিনেমাটা দেখেছিল। আর দর্শকদের কথা একটু বলি। এই লকডাউনে অনেকেই কিন্তু ঘরে বসে নেটফ্লিক্সে ‘থ্রি হানড্রেড সিক্সটি ফাইভ ডেইজ’ ঠিকই দেখেছে। কিন্তু এর ১০০ ভাগের এক ভাগও যদি বাঙালি কোনো শিল্পী করে, তাহলে এ দর্শকেরাই ফেসবুকে শুরু করবে তুমুল সমালোচনা। বিশ্বের যেকোনো দেশেই নেতিবাচক খবর ‘খাওয়ার’ প্রবণতা আছে। কিন্তু বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে এ প্রবণতা একটু বেশিই। শিল্পীদের নিয়ে কোনো নেতিবাচক খবর এলে দর্শকদের এ নিয়ে উন্মাদনার শেষ থাকে না। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বললাম। ২০১৭ সাল থেকে ‘রাণী রাসমণি’ সিরিয়াল করছি। বাংলাদেশি কোনো গণমাধ্যম আমাকে নিয়ে লিখল না। কিন্তু পরে লিখল যে আমাকে নাকি রাজনৈতিক প্রচারণার কারণে ভারত থেকে বের করে দিয়েছে। যেটা সম্পূর্ণ ভুল।

প্রশ্ন

কলকাতায় যাবেন তো?

অবশ্যই। আজ হোক, কাল হোক, যেতেই হবে। ওখানে আমার খালা, বোন, বন্ধু, আত্মীয়—সবাই আছে। আমার একটা সমাজ আছে সেখানে। ফিরতে তো হবেই।