Thank you for trying Sticky AMP!!

মিশা সওদাগর

আফসোস, সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আমাদের এই ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে কেউ ভাবলেন না: মিশা সওদাগর

গত ঈদে মুক্তি পাওয়া আটটি ছবির পাঁচটিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন মিশা সওদাগর। তবে প্রেক্ষাগৃহের সংকটের মধ্যে একসঙ্গে এতগুলো ছবির মুক্তিতে মোটেও খুশি নন তিনি। এসব নিয়ে গত শুক্রবার তাঁর সঙ্গে কথা বলল ‘বিনোদন’।

প্রশ্ন

মেসেঞ্জার বা ফোন—কোথাও আপনাকে পাচ্ছিলাম না।

আমি মোবাইলের কাছে ছিলাম না। বেশ কিছুদিন আগে আমার পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে গিয়েছিল। আজ জুমার নামাজের পর হঠাৎ একই জায়গায় ব্যথা পাই। তাই বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে আমেরিকায় যাব। সেখানেই চিকিৎসা করাব। আগেও সেখানেই লিগামেন্টের চিকিৎসা করেছিলাম।

প্রশ্ন

কত দিন থাকবেন?

দুই সপ্তাহের মতো থাকব। দেশে ফিরে এসে শুটিং শুরু করতে হবে। মালেক আফসারী, বদিউল আলম খোকন, দেবাশীষ বিশ্বাস ও তাজু কামরুল—এই চার পরিচালককে শিডিউল দেওয়া আছে। ফিরে এসে এসব ছবির কাজ শুরু করতে হবে।

মিশা সওদাগর
প্রশ্ন

ঈদের পর কোনো কাজ করেছেন?

একটি ছবির ডাবিং করেছি। আর কোনো শুটিং করিনি। এর মধ্যে ‘বিট্রে’ ছবির বাকি অংশের শুটিং করার কথা রয়েছে।

প্রশ্ন

গত ঈদে আপনার পাঁচটি চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে। একসঙ্গে এত ছবি মুক্তি তো দারুণ খুশির ব্যাপার।

কিন্তু আমি মোটেও খুশি নই। অবশ্য যদি বলি ‘বিরক্ত’, তাহলেও খারাপ শোনাবে। তবে আমি শঙ্কিত। আমার পাঁচটির বাইরে আরও তিনটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। সব মিলিয়ে আটটি ছবি। আমাদের এমনিতে প্রেক্ষাগৃহের সংকট। এর মধ্যে ঈদের সময় যদি সিঙ্গেল স্ক্রিন বাড়ে, সেখানে তো শাকিব খান আর মিশা সওদাগরের আধিপত্য বেশি। ফ্যান চলছে না, শার্ট খুলে গরমের মধ্যে দর্শক ছবি দেখছেন—এমন চাহিদাসম্পন্ন হিরো শাকিব খানের পর তো তৈরি হয়নি। আমি কেন, এটা পরিচালক, প্রযোজক, প্রদর্শক—সবাই জানেন। এবার সব মিলিয়ে ১৮০টি প্রেক্ষাগৃহের মধ্যে আমরাই নিয়ে নিয়েছি ১০০টি, বাকি সবাই মিলে ৮০টি! আমরা যে নায়ক ও ভিলেন জুটি হিসেবে সেরা, এটা ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে প্রমাণিত। অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা করেই আমরা এটা তৈরি করেছি, তা সিনেপ্লেক্স আর সিঙ্গেল, যেখানেই হোক না কেন।

প্রশ্ন

আপনার কথায় বোঝা গেল, প্রেক্ষাগৃহ–সংকটের এই সময়ে একসঙ্গে এতগুলো ছবির মুক্তির সিদ্ধান্ত কতটা সঠিক?

একেবারে সঠিক সিদ্ধান্ত না। এত ছবি একসঙ্গে মুক্তি পাওয়াটা সুইসাইড গেম। যেখানে নিয়মিত চলছে, সে রকম ৮০টা প্রেক্ষাগৃহ নেই, সেখানে ৮টা ছবি মুক্তি পায় কীভাবে! কেউ পাঁচটা, কেউ আটটা প্রেক্ষাগৃহ পেয়েছে! আমাদের ‘লিডার’–এর পর সিরিয়াল পেয়েছে ‘শত্রু’ ২৪টি, ‘জ্বীন’ ১৪টি, ‘কিল হিম’ ১১টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। আমার মতে, একজন প্রযোজক অনেক কষ্ট করে বিনিয়োগ করছেন, টাকা ওঠার ব্যাপার আছে। সর্বোচ্চ ৪টা ছবি মুক্তি পেলে প্রযোজকেরা হয়তো টাকা তুলতে পারতেন। সেখানে ৫টা, ৭টা, ১১টা কিংবা ১৪টা প্রেক্ষাগৃহে ছবি চালিয়ে টাকা তোলাটা একেবারেই অসম্ভব। আমার মাথাই কাজ করে না, কেন তাঁরা এমনটা করলেন। তাই আমার পাঁচটা ছবি মুক্তি পেয়েছিল দেখেও আমি আনন্দিত নই।

নায়ক থেকে দেশের সফল খলনায়ক মিশা সওদাগর
প্রশ্ন

আপনার এবারের ঈদে মুক্তি পাওয়া অন্য ছবিগুলো তো সেভাবে এতটা প্রেক্ষাগৃহ পেল না। কেন?

হ্যাঁ, ১০০ হল পায়নি তো। এটাতেই তো প্রমাণিত হয়, শাকিবের সঙ্গে খল চরিত্রে মিশার জুটিটাই দর্শক পছন্দ করেন। ১০০ হল পেয়েছে শুধুই ‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’।  

প্রশ্ন

তার মানে অন্য কোনো নায়কের সঙ্গে আপনার জুটি জমে না?  

না না, ওটা আমি জানি না। ওটা আমি বলতেও পারব না। আমি বলতে চাইছি, আমরা অনেক দিনের পুরোনো। শাকিবের সঙ্গে আমার জুটিটা পুরোনো। আমি বলতে চাইছি, আমরা দুজন থাকলে সিঙ্গেল স্ক্রিনের মেক্সিমাম দর্শক আমাদের পক্ষেই থাকেন। এটা অনেক দিনের প্রচেষ্টায় আমরা বানিয়েছি।

প্রশ্ন

কিন্তু চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট কেউ কেউ বলে থাকেন, সিঙ্গেল স্ক্রিনে শাকিব খানের পর একমাত্র বাপ্পীর কিছুটা গ্রহণযোগ্যতা আছে? আপনি তাহলে কী বলবেন?

আমার মনে করি না অতটা। বাপ্পীর আছে হালকা–পাতলা। কিন্তু ওই রকম মনে করি না। শুনতে খারাপ শোনাবে কিন্তু এটাই ঠিক, শাকিব ছাড়া নায়কদের মধ্যে সিঙ্গেল স্ক্রিনে কারও গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়নি। শাকিব–আমি থাকলে মাল্টিপ্লেক্সেও শাকিবের দারুণ সূচনা হয়। বাট ইটস ডিপেন্ডস অন কনটেন্ট। ‘শিকারী’, ‘নবাব’, ‘ভাইজান’ এসব ছবিও সিঙ্গেল স্ক্রিন, মাল্টিপ্লেক্সে বেশ ভালো চলেছে। আমি একটু আগেই বলেছি, এই ছবিটা ক্ল্যাসিক ঘরানার। সমাজের যে জরাজীর্ণ অবস্থা চলছে, প্রতিবাদ করার মতো একটা যথেষ্ট সামাজিক ছবি। প্রতিনিয়ত যে ধরনের সমস্যা আমরা ফেস করি, তার প্রতীকী একটা ছবি, ‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’। পরিবার নিয়ে দেখার মতো ছবি, আছে সামাজিক বার্তাও।

মিশা সওদাগর
প্রশ্ন

ঈদুল আজহায়ও তো আটটি বা তার বেশি ছবি মুক্তির কথা শোনা যাচ্ছে...

সেই একই কথা, মোটেও ঠিক হবে না। চলচ্চিত্রের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার, যেমন প্রযোজক পরিবেশক সমিতি, পরিচালক সমিতি, শিল্পী সমিতিসহ যাঁরা দায়িত্বশীল জায়গায় আছেন, তাঁদের সবাইকে একসঙ্গে বসে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এতগুলো ছবি মুক্তি মোটেও ভালো সিদ্ধান্ত নয়। শাকিব খানের ছবি আগামী ঈদেও আসবে, ওই ছবিও নিঃসন্দেহে শতাধিক প্রেক্ষাগৃহ নেবে। তাহলে বাকি অল্প কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে এতগুলো ছবি মুক্তি দিলে তো প্রযোজকেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই তিন-চারটির বেশি ছবি মুক্তি দেওয়া ঠিক হবে না।

প্রশ্ন

শুক্রবার বাংলাদেশে ‘পাঠান’ মুক্তি পেয়েছে...

ব্যক্তিগতভাবে আমি এটা কখনোই সমর্থন করি না। উপমহাদেশীয় ছবি মুক্তির মাধ্যমে প্রেক্ষাগৃহ বাঁচানোর যে কথা বলা হচ্ছে, যা মোটেও ঠিক নয়। প্রেক্ষাগৃহ বাঁচানোর কথা বলে বাইরের দেশের ছবি এনে চালাব! বিদেশের ২০০-৩০০ কোটি টাকার সিনেমার কাছে আমাদের দেড়-দুই কোটির সিনেমা কোথায় চালাব আমরা? আফসোস, সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আমাদের এই ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে কেউ ভাবলেন না, চেষ্টা করলেন না। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বড় বড় প্রতিষ্ঠান মিলে এখানে বিনিয়োগ করলে আমাদের সিনেমাকে আবার ভালো জায়গায় ফিরিয়ে আনা কঠিন ছিল না।