Thank you for trying Sticky AMP!!

অমর পালকে শেষ বিদায়

রবীন্দ্র সদনে দুই বাংলার লোকগানের প্রবাদপ্রতিম শিল্পী অমর পালকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়

দুই বাংলার লোকগানের প্রবাদপ্রতিম শিল্পী অমর পালকে শেষ বিদায় জানালেন তাঁর অসংখ্য ছাত্রছাত্রী আর শিল্পী। আজ রোববার সকালে তাঁর মরদেহ ‘পিস ওয়ার্ল্ড’ থেকে দক্ষিণ কলকাতার বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক দেহ রাখা হয়। তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন আত্মীয়স্বজন আর অগণিত ছাত্রছাত্রী। আরও এসেছিলেন সিপিএমের পলিটব্যুরোর চেয়ারম্যান বিমান বসু, চিত্রশিল্পী সমীর আইচ। এরপর তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় রবীন্দ্র সদনে। সেখানে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন। সেখানে শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হন সংগীতশিল্পী হৈমন্তী শুক্লা, পূর্ণদাস বাউল, শিবাজি সৈকত মিত্র, তীর্থসহ অনেকে। দুপুরে রাজ্য সরকারের তত্ত্বাবধানে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে অমর পালের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

গতকাল শনিবার দুপুরে দক্ষিণ কলকাতার বাড়িতে অমর পালের সেরিব্রাল অ্যাটাক হয়। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে ভর্তি করা হয় আইটিইউতে। বিকেল ৫টা ৫০ মিনিট নাগাদ তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। তাঁর স্ত্রী পুতুল রাণী পাল অনেক আগেই প্রয়াত হয়েছেন।

অমর পালের জন্ম ১৯২২ সালের ১৯ মে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। ১০ বছর বয়সে বাবা মহেশ চন্দ্র পালকে হারান। এরপর সংসারের ভার তিনি নিজের কাঁধে তুলে নেন। ছোটবেলা থেকেই অমর পাল ছিলেন গানপাগল। মা দুর্গাসুন্দরী দেবীর কাছে লোকসংগীত শিখেছেন। পাশাপাশি উচ্চাঙ্গসংগীতের তালিম নেন ওস্তাদ আয়াত আলী খানের কাছে।

১৯৪৮ সালে আকাশবাণীর গীতিকার শচীন্দ্র নাথ ভট্টাচার্যের সঙ্গে কলকাতায় যান অমর পাল। সেখানে বেঙ্গল মিউজিক কলেজের অধ্যাপক মণি চক্রবর্তী, সুরেন চক্রবর্তী, ননীগোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে নতুন করে লোকসংগীত শেখেন। আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রের লোকসংগীতের শিল্পী হিসেবে অমর পাল প্রথম লোকসংগীত পরিবেশন করেন ১৯৫১ সালে।

তাঁর গাওয়া অসংখ্য গানের রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছে। পাশাপাশি তিনি চলচ্চিত্রের গানেও কণ্ঠ দেন। তিনি দেবকী কুমার বসু, সত্যজিৎ রায়, ঋতুপর্ণ ঘোষের ছবিতে গান গেয়ে দারুণ প্রশংসিত হন। সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘হীরক রাজার দেশ’ ছবিতে তাঁর গাওয়া ‘আমি কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়’ এখনো জনপ্রিয়।

অমর পালের গাওয়া খুব জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে ‘প্রভাত সময়ে’, ‘জাগো হে এ নগরবাসী’, ‘রাই জাগো’, ‘প্রভাতে গোবিন্দ নাম’, ‘রাই জাগো গো’, ‘ভারতী গৌরাঙ্গ লইয়া’, ‘হরি দিন তো গেল’, ‘মন রাধে রাধে’, ‘বৃন্দাবন বিলাসিনী’, ‘জাগিয়া লহো কৃষ্ণ নাম’, ‘আমার গৌর কেনে’, ‘আমি কোথায় গেলে’ ইত্যাদি।

অমর পাল ভারত সরকারের সংগীত-নাটক আকাদেমি পুরস্কারসহ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের লালন পুরস্কার ও সংগীত মহাসম্মান পেয়েছেন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানিক ডি–লিট উপাধি দিয়েছে।