Thank you for trying Sticky AMP!!

আত্মার সঙ্গে আত্মার মিলনের প্রস্তুতি

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার নেতৃত্বে হাজার কণ্ঠে গেয়ে বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণের প্রস্তুতিতে সুরের ধারার শিল্পীরা। ছবি: খালেদ সরকার

রাতের স্কুলমাঠ। সাধারণত নিস্তব্ধ ও অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকার কথা। তবে সপ্তাহ খানেক হলো লালমাটিয়া হাউজিং সোসাইটি স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠটির দিন-রাত প্রায় এক হয়ে গেছে। দিনে নানা বয়সী মানুষের হইচই, রাতে হাজার কণ্ঠে গান। গানে গানে পুরোনো বছরকে বিদায় জানানো হবে। নতুন বছরকে বরণ করা হবে। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে সে প্রস্তুতি।

গত শনিবার সন্ধ্যাবেলায় সেই প্রস্তুতিই চলছিল। সবুজ মাঠে বিছানো লালগালিচার ওপর সার বেঁধে দাঁড়িয়ে কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীরা। সবার হাতে গীতিকবিতার অনুলিপি। সেটি দেখে তাঁরা গাইছিলেন, ‘এমন মানবজনম আর কি হবে/ মন যা চায় তরাই করো এই ভবে’। বর্ষবিদায়ী উৎসব চৈত্রসংক্রান্তিতে পঞ্চকবির গান ছাড়াও থাকবে লালনের এ গানটি। তাঁদের নির্দেশনা দিচ্ছিলেন সুরের ধারার শিক্ষক লুৎফর মোরশেদ চৌধুরী। বলে দিচ্ছিলেন, কোথায় স্কেল নামবে, কোথায় চড়বে।

হাজার কণ্ঠে গেয়ে বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ হবে। গানের স্কুল সুরের ধারার সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে সারা দেশ থেকে এসেছেন শিল্পী ও সংস্কৃতিপ্রেমীরা। তাঁদের একজন শিপ্রা মজুমদার। পিরোজপুর সিভিল সার্জনের দপ্তরে জ্যেষ্ঠ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট। তাঁর মেয়ে অনুজা পড়ছেন দন্ত চিকিৎসা বিষয়ে। উঠেছেন মিরপুরে এক আত্মীয়র বাসায়। মা-মেয়ে দুজনেই গান শেখেন। সংগীত তাঁদের ধ্যান, শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা অনুপ্রেরণা। জানালেন, এ আয়োজনে যোগ দিতে পারাটা তাঁদের জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার।

কর্মীদের নিয়ে সেদিনও দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত ছিলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। বলে দিচ্ছিলেন কাদের আমন্ত্রণপত্র পাঠাতে হবে। বাতলে দিচ্ছিলেন বাইরের শিল্পীদের আসা-যাওয়া, থাকা-খাওয়ার সমাধান। এমনকি মাঠে যাঁরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাঁদের নাশতা দেওয়া হয়েছে কি না—সেসবও। ফোনে একজনকে বলছিলেন তিনি, ‘অনুষ্ঠানে এলে আমাদেরও ভালো লাগত। তবে বাড়িতে বসেও দেখতে পাবেন। চ্যানেল আইতে সরাসরি দেখা যাবে।’

উৎসব সম্পর্কে জানতে চাইলে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বলেন, ‘এ বছর একটা ছন্দময় মিলনের কথা বলছি আমরা। প্রাণের আনন্দে মিলনের ছন্দে, আত্মার সঙ্গে আত্মার মিলন। এ জন্য সারা দেশের শিল্পী ও সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। পিরোজপুর, নীলফামারী, পঞ্চগড়, বান্দরবানসহ নানা জায়গা থেকে শিল্পীরা এসেছেন। ঢাকা ও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা সংস্কৃতিমনস্ক এই মানুষদের নিয়ে পুরোনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করে নিতে চাই। দেশটা যে একটা ভয়ংকর ধর্মান্ধ গোঁড়ামির দিকে যাচ্ছে, সেটাকে প্রতিহত করতে সব শিল্পী-সাহিত্যিক-কবি মিলিত হব, এটাই আমাদের বছরের শেষ প্রার্থনা।’

এ বছর ২৫ বছর পূর্ণ করল গানের স্কুল সুরের ধারা। এ উপলক্ষে আসছে বুধবার থেকে শুরু হবে উৎসব। ১১ এপ্রিল দুপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে থাকবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানসহ আরও অনেকে। স্কুলের রজতজয়ন্তী, বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ মিলিয়ে পয়লা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) পর্যন্ত চার দিনের এ উৎসবে থাকবে বাংলাদেশ ও ভারতের খ্যাতিমান শিল্পীদের নাচ, গান, আবৃত্তি, নৃত্যনাট্য ও সেমিনার।