Thank you for trying Sticky AMP!!

কবির জন্মোৎসব উদ্যাপিত ভার্চ্যুয়াল নানা আয়োজনে

নজরুলজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে গান শোনান শিল্পী ইয়াকুব আলী খান। ছবি: সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সৌজন্যে।

করোনাভাইরাসের প্রকোপে বহুদিন ধরেই জনসমাগম নিষিদ্ধ। তাই প্রতিবছর যেমন আয়োজন করে উদ্‌যাপন করা হয় দ্রোহ ও প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন, এ বছর সেভাবে উদ্‌যাপন করা গেল না। তাই বলে থেমে থাকেনি জন্মদিনের উৎসব। ভার্চ্যুয়াল নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদ্‌যাপন করা হয় জন্মোৎসব। সকালে সমাধিতে ফুল দেওয়ার আয়োজন দিয়ে শুরু হয় কবির জন্মদিনের আয়োজন। আজ বেলা ১১টায় রাজধানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদসংলগ্ন কবির সমাধিতে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের নেতৃত্বে কবির সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল, কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মো. আবদুর রাজ্জাক ভূঞা, যুগ্ম সচিব অসীম কুমার দে, কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের সচিব আবদুর রহিম প্রমুখ। পরে কবির আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। 

সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ‘জাগো অমৃত–পিয়াসী’ শীর্ষক প্রায় ৫০ মিনিটের একটি বিশেষ অনুষ্ঠান নির্মাণ করে, যা আজ সকালে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একাত্তর টিভিতে সম্প্রচারিত হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভেচ্ছাবাণী পাঠ করে শোনান অনন্যা রুমা। এরপর পর্যায়ক্রমে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ও সচিব মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল। কবি নজরুল ইনস্টিটিউট ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের শুভেচ্ছাবাণী পাঠ করে শোনান আবৃত্তিশিল্পী মাহিদুল ইসলাম।

খায়রুল আনাম শাকিল শোনান ‘ওঠরে চাষী জগৎবাসী’ গানটি। ছবি: সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সৌজন্যে।

নজরুলসংগীতশিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিকের নির্দেশনায় ও জেমস্ অব নজরুলের পরিবেশনায় সমবেত কণ্ঠে জনপ্রিয় নজরুলসংগীত ‘জাগো অমৃত-পিয়াসী চিত, আত্মা অনিরুদ্ধ কল্যাণ প্রবুদ্ধ’ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের মূল পূর্ব শুরু হয়। নজরুলের বিখ্যাত কবিতা ‘বাংলাদেশ’ আবৃত্তি করে শোনান বাচিক শিল্পী হাসান আরিফ। এরপর নজরুলের জীবনীভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্রের অংশবিশেষ প্রদর্শিত হয়। নৃত্যশিল্পী ওয়ার্দা রিহাবের নির্দেশনায় জনপ্রিয় নজরুলগীতি ‘শঙ্কাশূন্য লক্ষ কণ্ঠে বাজিছে শঙ্খ ঐ’, ‘সঙ্গ শরণ তীর্থযাত্রা—পথে এসো মোরা যাই’, ‘খর স্রোতজলে কাদা-গোলা বলে গ্রীবা নাড়ে তীরে জরদ্গব (যৌবন-জল-তরঙ্গ)’ ও ‘মোরা ঝঞ্ঝার মত উদ্দাম, মোরা ঝর্ণার মত চঞ্চল’–এর সঙ্গে সমবেত নৃত্য পরিবেশন করেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নৃত্যশিল্পীরা। এরপর যথাক্রমে শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিলের কণ্ঠে ‘ওঠরে চাষী জগৎবাসী, ধর কষে লাঙল’, শিল্পী সালাউদ্দিন আহমেদের কণ্ঠে ‘হে নামাজী! আমার ঘরে নামাজ পড় আজ’ ও শিল্পী ইয়াকুব আলী খানের কণ্ঠে ‘নয়নে নিদ নাহি, নিশীথ প্রহর জাগি, একাকিনী গান গাহি’ শীর্ষক একক নজরুলসংগীত পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠান শেষ হয় নজরুলের আরেকটি বিখ্যাত গান ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’ সমবেত কণ্ঠে পরিবেশনের মধ্য দিয়ে।

সকালে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের নেতৃত্বে কবির সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। ছবি: সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সৌজন্যে।

জানা গেছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ১২১তম নজরুলজয়ন্তীর এ বিশেষ অনুষ্ঠান বাস্তবায়নে ছিল কবি নজরুল ইনস্টিটিউট। বিশেষ এ অনুষ্ঠান প্রযোজনা করেন আবদুস সাত্তার ও উপস্থাপনা করেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।

‘জাগো অমৃত পিয়াসী’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে ছিল দলীয় নৃত্য। ছবি: সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সৌজন্যে।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ, পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে। বাবা কাজী ফকির আহমেদ, মা জাহেদা খাতুন। ১৯৭২ সালে তৎকালীন সরকার তাঁকে জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসে। কবি ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র ইন্তেকাল করেন। কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। এখানেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।