Thank you for trying Sticky AMP!!

আধুনিক বাংলা গানে একক হাতে সফল গান তৈরি হয়েছে খান আতাউর রহমান, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ও প্রিন্স মাহ্‌মুদদের মতো শিল্পীদের হাতে

গানে সব্যসাচী স্রষ্টা নেই কেন?

একসময় গান ছিল একক ব্যক্তির শিল্প। বাউল ও ফকিরেরা মুখে মুখে বাঁধতেন গান। তাতে নিজেরাই বসাতেন সুর। নিজস্ব যন্ত্রে বাজিয়ে গাইতেন। পঞ্চকবিদেরও তেমনটিই করতে দেখা গেছে। বাউলসাধক শাহ আবদুল করিমের মধ্যেও এই ধারাই বহমান দেখেছি আমরা। সেই চর্চা কি আজও বহমান?

শাহ আবদুল করিম (১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯১৬—১২ সেপ্টেম্বর ২০০৯)

বাংলাদেশের স্বাধীনতালগ্ন থেকে সংগীতের প্রধান বাহন ছিল চলচ্চিত্র। তখনো খান আতাউর রহমানকে একক হাতে লেখা, সুর ও সংগীতায়োজন করতে দেখা গেছে। ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, ‘আমাকে পোড়াতে যদি এত লাগে ভালো’, ‘এ কি সোনার আলোয় জীবন ভরিয়ে দিলে’, ‘গুন গুন গুন গান গাহিয়া নীল ভ্রমরা যায়’, ‘দিন যায় কথা থাকে’, ‘সব সখীরে পার করিতে নেব আনা আনা’সহ বহু গান উপহার দিয়েছেন তিনি। ক্রমে ভিন্ন ভিন্ন হাতে ভাগ হতে থাকে গান। কেউ লেখেন কথা, কেউ তাতে দেন সুর।

খান আতাউর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, প্রথমত, একক হাতে গান সৃষ্টির ক্ষেত্রে থাকতে হয় অনন্য প্রতিভা। এ রকম দক্ষতা সবার থাকে না। দ্বিতীয়ত, সংগীত প্রযোজকেরা গানে বৈচিত্র্য আনতেই একজনকে দিয়ে লিখিয়ে অন্য একজনকে দিয়ে সুর করিয়ে গান প্রকাশ করতেন। এভাবে এক হাত থেকে গান চলে যায় ভিন্ন ভিন্ন হাতে।

কখনো সুরকার নিজেই সেটি সংগীতায়োজন করেন, নয়তো একজন সংগীতায়োজকের হাতে গিয়ে পূর্ণতা পায় একটি গান। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, প্রথমত, একক হাতে গান সৃষ্টির ক্ষেত্রে থাকতে হয় অনন্য প্রতিভা। এ রকম দক্ষতা সবার থাকে না। দ্বিতীয়ত, সংগীত প্রযোজকেরা গানে বৈচিত্র্য আনতেই একজনকে দিয়ে লিখিয়ে অন্য একজনকে দিয়ে সুর করিয়ে গান প্রকাশ করতেন। এভাবে এক হাত থেকে গান চলে যায় ভিন্ন ভিন্ন হাতে।

সুরকার ও সংগীত পরিচালক আলম খান
আমি, শেখ সাদি খান, আলাউদ্দীন আলী ও আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল দীর্ঘদিন ভিন্ন ভিন্ন সংগীত পরিচালকের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে কাজ করেছি। এতে আমাদের ব্যতিক্রম সব অভিজ্ঞতা হয়েছে। পরে সেসব অভিজ্ঞতা আমার কাজে এসেছে। এখনকার তরুণদের হয়তো এভাবে অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ কম।
আলম খান

শিল্পী, সুরকার ও সংগীত পরিচালক আলম খান মনে করেন, এখনকার তরুণেরা অবিরাম এক হাতে গান সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘প্রায় সবারই ঘরে এখন হোম স্টুডিও। প্রত্যেকেই লিখে, সুর করে, সংগীতায়োজন করে নিজেই গাওয়ার চেষ্টা করে। তাদের অলরাউন্ডার বলা চলে। কিন্তু কেন যেন তাদের গানগুলো ভালো হয় না। হয়তো অভিজ্ঞতার অভাব। তবে কিছু কিছু তরুণের কিছু কাজ আমার ভালো লেগেছে।’

নিজের জীবন অভিজ্ঞতা থেকে আলম খান বলেন, ‘আমি, শেখ সাদি খান, আলাউদ্দীন আলী ও আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল দীর্ঘদিন ভিন্ন ভিন্ন সংগীত পরিচালকের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে কাজ করেছি। এতে আমাদের ব্যতিক্রম সব অভিজ্ঞতা হয়েছে। পরে সেসব অভিজ্ঞতা আমার কাজে এসেছে। এখনকার তরুণদের হয়তো এভাবে অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ কম। তাদের যে কাজগুলো ভালো লাগে না, ভেবে নিই গানটিতে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে।’

আলাউদ্দীন আলী

অনেকেই মনে করেন, এখনকার শিল্পচর্চায় এক হাতে সংগীত সৃষ্টি দুরূহ কাজ। কেননা একজন ব্যক্তিকে নানা রকম কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে হয়। এর মধ্যে গভীর আত্মনিবেদন কঠিন হয়ে পড়েছে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী গীতিকবি কবির বকুল। বহু গানের সুরও করেছেন তিনি। তিনি মনে করেন, বহুমুখী প্রতিভা থাকলেই একজন মানুষ একটি গানকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে পারে।

সত্য সাহা, সুবল দাস, আলম খান, বুলবুল, আলাউদ্দীন আলী ভাইদের সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। দেখতাম তাঁরা একত্রে বসতেন, আড্ডা দিতেন, তাঁদের মধ্যে একটা বিনিময় হতো, যেটা এখন হয় না। এখন অনেকে চেষ্টা করেন, কিন্তু কোথায় যেন একটা ঘাটতি টের পাওয়া যায়।
কবির বকুল

তিনি বলেন, ‘সত্য সাহা, সুবল দাস, আলম খান, বুলবুল, আলাউদ্দীন আলী ভাইদের সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। দেখতাম তাঁরা একত্রে বসতেন, আড্ডা দিতেন, তাঁদের মধ্যে একটা বিনিময় হতো, যেটা এখন হয় না। এখন অনেকে চেষ্টা করেন, কিন্তু কোথায় যেন একটা ঘাটতি টের পাওয়া যায়।’

সত্য সাহা

শিল্পীদের মধ্যে অনেকেই নিজে লিখে, সুর ও সংগীতায়োজন করে গান করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাঁদের সব চেষ্টা সফল হচ্ছে না। গীতিকবি ও সুরস্রষ্টা প্রিন্স মাহমুদ মনে করেন, সবাই সবটা নিজের আয়ত্তে রাখার চেষ্টা থেকে গান লিখে সুর করতে চাইছেন। কিন্তু প্রতিভা না থাকলে সেটা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘এখনো অনেকে ভালো গান করছে, কিন্তু তার পরিমাণ খুবই কম। ইস্টার্ন-ওয়েস্টার্ন সব রকম সুর করার মতো দক্ষ লোক কম আছে আমাদের। একটা সুরের সঙ্গে সমার্থক কথা বা কথার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ সুরের মিলন ঘটানো যথেষ্ট দক্ষতার কাজ। তবে এখনো অনেকের কাজ কিন্তু আমার ভালো লাগে।’