Thank you for trying Sticky AMP!!

চলে গেলেন স্বপন গুপ্ত

রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী স্বপন গুপ্ত

চলে গেলেন পশ্চিম বাংলার রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী স্বপন গুপ্ত। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। দীর্ঘদিন ধরে লিভার ক্যানসারে ভুগছিলেন তিনি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছিল নিউমোনিয়া। কলকাতার নিউ টাউন এলাকার টাটা মেডিকেল সেন্টারে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের পত্রিকা আনন্দবাজার ও অনলাইন পোর্টাল জিনিউজ।

শিল্পী স্বপন গুপ্তর জন্ম বাংলাদেশের বরিশালে। দেশভাগের পর বাবার সঙ্গে কলকাতায় চলে যান। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী স্বপন কোনো দিনই ভাবেননি গায়ক হবেন। গানের কোনো প্রথাগত শিক্ষাও তাঁর ছিল না। পিয়ানো অ্যাকর্ডিয়ন বাজাতেন, শখ করে গানও গাইতেন। ১৯৬৫ সালে স্থানীয় এক সরস্বতী পূজার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ঘটনাচক্রে শিল্পী দেবব্রত বিশ্বাসের সঙ্গে পরিচয়। দেবব্রত বিশ্বাসের সেদিন অনুষ্ঠানে আসতে দেরি হচ্ছিল। তাই পিয়ানো অ্যাকর্ডিয়ন বাজিয়ে শ্রোতা-দর্শকদের ধরে রাখছিলেন স্বপন।

শেষ পর্যন্ত সংগঠকদের অনুরোধে গানও ধরলেন। ঠিক ওই মুহূর্তে অনুষ্ঠানস্থলে হাজির হন দেবব্রত বিশ্বাস। স্বপন গুপ্তর গান শুনে তিনি বিস্মিত। নিজেই স্বপনকে তাঁর কোনো একটি গান গেয়ে শোনানোর অনুরোধ করেন। অপ্রস্তুত, নার্ভাস স্বপন গাইলেন ‘আকাশভরা সূর্য–তারা’। মুগ্ধ হয়েছিলেন দেবব্রত।

কিছুটা ধীরকণ্ঠে গান গাইতেন তিনি

জানতে চাইলেন, স্বপন কোথায় গান শেখেন। স্বপন অকপটে জানিয়ে দিল, কোথাও নয়। রেডিও শুনে শুনে গান তোলেন।
সেদিনই তাঁর প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে শিল্পীর রাসবিহারী অ্যাভিনিউর বাড়িতে গানের তালিম নেওয়া শুরু করলেন স্বপন। প্রথম প্রথম অনেকের সঙ্গে গান শিখেছেন স্বপন, তারপর আলাদা করে একা শেখার সুযোগ পেয়েছেন। বছর দুয়েক পরে রেডিওতে গান গাওয়া শুরু। কয়েক বছর পরই মায়া সেনের তত্ত্বাবধানে এইচএমভি থেকে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম গানের রেকর্ড। এক পিঠে ‘লুকালে বলেই খুঁজে বাহির করা’, অন্য পিঠে ‘আমায় থাকতে দে-না আপন–মনে’। সেই থেকেই স্বপন গুপ্তর নাম ছড়িয়ে পড়ে।

পরিচালক শৈবাল মিত্রর ছবি ‘চিত্রকর’-এ স্বপন গুপ্তর দুটি গান ব্যবহৃত হয়েছিল। ছবিতে দৃষ্টিহীন বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের চরিত্রটি করেছিলেন ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়। রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী নিজেও দৃষ্টিহীন হওয়ায় চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে তিনি প্রবীণ অভিনেতাকে অনেকটাই সাহায্য করেছিলেন। ছবির স্বার্থে দীর্ঘদিন একসঙ্গে কাটিয়েছিলেন অভিনয় ও গানের দুনিয়ার দুই অন্যতম শিল্পী।

বলা হয়ে থাকে, দেবব্রত বিশ্বাসের সংস্পর্শে আসার পরই বদলে যায় স্বপন গুপ্তর জীবন। রবীন্দ্রগানের ছোঁয়ায় নতুনভাবে জীবনকে উপলব্ধি করেন শিল্পী। কিছুটা ধীরকণ্ঠে গান গাইতেন তিনি। কলকাতায় মহাষষ্ঠীর সকালেই এই গুণী শিল্পীর মৃত্যুতে কলকাতার শিল্পীমহলে বিষাদের ছায়া নেমে আসে। তাঁর প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শোকবার্তায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী স্বপন গুপ্তর প্রয়াণে আমি গভীর শোকাহত। তাঁর বিশেষ গায়নশৈলী শ্রোতাদের দীর্ঘদিন মুগ্ধ করে রেখেছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০১৫ সালে তাঁকে “সংগীত মহাসম্মান” প্রদান করে।’ স্ত্রী ও এক মেয়ে রেখে গেছেন স্বপন গুপ্ত।