Thank you for trying Sticky AMP!!

ফকির আলমগীরের সেরা ৩ গানের নেপথ্য গল্প

ফকির আলমগীর

সারা জীবনে এক হাজারের বেশি গান করেছেন, এক সাক্ষাৎকারে নিজেই জানিয়ে গেছেন ফকির আলমগীর। তার মধ্যে থেকে প্রিয় গানের তালিকা করাটা সত্যিই কঠিন। ফলে নানা সময়ে তাঁর দেওয়া প্রিয় গানের তালিকায় রকমফের ঘটেছে। তবে তিনটি গান ঘুরেফিরে তাঁর সব তালিকাতেই ঠাঁই পেয়েছে। এগুলো হলো ‘ও সখিনা’, ‘মায়ের একধার দুধের ধার’ আর ‘কালো কালো মানুষের দেশে’। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে নিজেই এসব গানের নেপথ্য গল্প শুনিয়েছেন ফকির আলমগীর।

‘ও সখিনা’
১৯৮২ সালে বিটিভির ঈদ আনন্দমেলায় প্রথম প্রচার হয় ‘ও সখিনা গেছস কিনা ভুইলা আমারে’। আলতাফ আলীর কথায় সুর বসিয়েছিলেন ফকির আলমগীর।
২০১৮ সালে এক সাক্ষাৎকারে ফকির আলমগীর সখিনার গল্প শুনিয়েছেন, ‘সখিনা আবহমান বাংলার প্রেমিকা ও বধূ। কারও কাছে দুঃখিনী পল্লিবালা, আবার কারও কাছে আহ্লাদী বোন। কারও কাছে সে বন্যায় ভেসে যাওয়া বিক্ষুব্ধ চিৎকার। এই সখিনা কখনো রিকশাওয়ালার প্রিয়তমা স্ত্রী। কখনো কারখানার শ্রমজীবী নারী, কখনোবা ফুটপাতের ইটভাঙা শ্রমিক। সখিনা আমার গানের একটি কালজয়ী চরিত্র। প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের সুখ, দুঃখ, ব্যথা, বেদনা, বিরহ, মিলন, সংঘাত, অতৃপ্তি সবকিছু যেন ধরা পড়েছে “সখিনা” নামক একটি শব্দে।

সখিনা একটি প্রতীকী সত্তা, যার মাধ্যমে আমি একটি জনপদের জয়-পরাজয়, প্রেম, ভালোবাসা, সংগ্রাম, প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, আশা, আকাঙ্ক্ষা আর বিজয়কে প্রকাশ করতে চাই। তাই তো আমার সংগীতভুবনে পৃথিবীর সব দুঃখী নারী একটি নারী হিসেবে ধরা পড়ে, তার নাম “সখিনা”।’

ফকির আলমগীর

‘মায়ের একধার দুধের দাম’
২০১৮ সালে হাসান সাইদুলকে এক সাক্ষাৎকারে ফকির আলমগীর বলেছিলেন সেই গানের পেছনের গল্প, ‘১৯৭৭ সালের ঘটনা। মাকে নিয়ে গাড়িতে ফরিদপুর যাচ্ছি। আরিচা ঘাটে আমাদের গাড়ি থামে। ফেরি পার হতে হবে। এই সময় এক অন্ধ বাউলের সঙ্গে দেখা। বাউলটি দেহতত্ত্বের গান গাইছেন। গানটি শুনেই আমার কানে লেগে যায়। সঙ্গে সঙ্গে রেকর্ডার বের করে গানটি রেকর্ড করি। আমার মা-ও গানটি মনোযোগ দিয়ে শুনেছিলেন। বাড়ি যাওয়ার পথে গাড়িতে বসেই বারবার ভাবি গানটি কীভাবে নিজে গাইব। গানটি শুনে খুব আপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম। ঢাকা ফিরে নিজের মতো করে গানটি তৈরি করি। এরপর বিটিভির একটি অনুষ্ঠানে গানটি পরিবেশন করি। পরে অজিত রায় গানটি নতুন করে রেকর্ড করান। এটি নব্বই দশকের কথা।

এই গান আমার “সখিনা-২” অ্যালবামে রাখি। পরে আলাউদ্দিন আলীর সংগীতায়োজনে “অবরোধ” সিনেমার জন্য গানটি নতুন করে রেকর্ড করা হয়। ফরিদ আহমেদের সংগীতায়োজনে গানটি আবারও রেকর্ডিং করা হয়েছিল। এখনো গানটি মানুষের মুখে মুখে ফেরে। বিভিন্ন সময় শিল্পীরা গানটি গেয়েছেন। মাঝেমধ্যে গানটি গাইতে গিয়ে মাকে খুব মনে পড়ে। গানটির কথায় এত দরদ যে অনেক সময় আমি কেঁদে ফেলি।’

‘কালো কালো মানুষের দেশে’
নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মদিনকে উপলক্ষে করে এ গান গেয়েছিলেন ফকির আলমগীর। গানটি লিখেছিলেন সেজান মাহমুদ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার রজতজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ১৯৯৭ সালের ২৫ মার্চ বাংলাদেশে এসেছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা। এ সময় তাঁকে ‘কালো কালো মানুষের দেশে’ গানটি শুনিয়েছিলেন ফকির আলমগীর।

কীভাবে ঘটনাটি ঘটল, বিবিসি বাংলাকে পরে সেই গল্প শুনিয়েছেন ফকির আলমগীর। সেই গানের কথা জানতে পেরে তাঁর সঙ্গে নিজে থেকেই দেখা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন ম্যান্ডেলা। ফকির আলমগীর বলছেন, ‘তখনকার প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন আমাকে টেলিফোন করে হোটেল শেরাটনে আসতে বলেন। আমার স্ত্রীকেও নিয়ে আসতে বলেছিলেন। কারণ, নিজের হোটেল কক্ষে নেলসন ম্যান্ডেলা আমার সঙ্গে দেখা করবে।

ফকির আলমগীর।

‘তখন দ্রুত ছুটে গেলাম শেরাটনে। আমার স্ত্রীও ছিল সঙ্গে। অনেকেই দেখা করবে বলে লবিতে অপেক্ষা করছে। কিন্তু আমাকে সরাসরি তাঁর রুমে নিয়ে যাওয়া হলো। তিনি তখন বঙ্গভবনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। আমাকে নিয়ে নিচে নেমে এলেন এবং নেমেই বললেন, গানটা গাও। আমি যখন গানটা ধরেছি, তিনি আমার সঙ্গে আফ্রিকান ধরনে নাচতে শুরু করলেন, সেটা এখনো আমার চোখে লেগে আছে। আমি তাঁকে জড়িয়ে ধরেছি।’
পরে ম্যান্ডেলার গাড়িবহরের সঙ্গে বঙ্গভবন পর্যন্ত গিয়েছিলেন ফকির আলমগীর। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে অতিথিকক্ষে যাওয়ার আগে তাঁর দিকে হাত নেড়ে বিদায় নেন নেলসন ম্যান্ডেলা।