Thank you for trying Sticky AMP!!

মেয়ে অগ্নিমিত্রা ও স্ত্রী তানিয়াকে নিয়ে বাবার প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বাপ্পা মজুমদার

বাপ্পার স্মৃতিতে বাবা পণ্ডিত বারীণ মজুমদার

বাড়িটায় সারাক্ষণই সংগীতচর্চা হতো। সারাক্ষণই রেওয়াজ করতেন কেউ না কেউ। বড়রা যখন করতেন না, তখন করতেন ছোটরা, অর্থাৎ শিষ্যরা। ১৭ সিদ্ধেশ্বরীর বাড়িটায় থাকতেন সংগীতসাধক পণ্ডিত বারীণ মজুমদার ও তাঁর স্ত্রী ইলা মজুমদার, জনপ্রিয় শিল্পী বাপ্পা মজুমদারের মা–বাবা। গতকাল সোমবার ছিল বারীণ মজুমদারের শততম জন্মবর্ষ। কেমন ছিলেন পণ্ডিত বারীণ মজুমদার? বাপ্পার স্মৃতি থেকে জেনে নেওয়া যাক তাঁকে।

দিনে গড়ে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা রেওয়াজ করতেন বারীণ মজুমদার। শুরু হতো সকাল সাতটায়। এ ব্যাপারে তিনি ছিলেন ভয়ানক অধ্যবসায়ী। বাড়িতে সংগীতচর্চা হতো সারাক্ষণ। এক ঘরে ছাত্রছাত্রীরা গান শিখছে তো অন্য ঘরে পড়াশোনা করতেন বাপ্পারা। সংগীত এভাবেই মগজে গেঁথে নিয়েছেন তাঁরা। বাপ্পা বলেন, ‘আমাদের কাছে ওটাই ছিল স্বাভাবিক জীবন। বাড়ির পরিবেশ আমাদের শিখিয়েছে, একটা মানুষকে রেওয়াজ করতে হবে। আমাদের ক্ষেত্রে সেটা হয়তো ঠিকঠাকমতো হয়ে ওঠেনি। কিন্তু ভাবনায় ঢুকে গিয়েছিল যে প্র্যাকটিস ছাড়া উপায় নেই।’

বারীণ মজুমদার ছিলেন পরিবারের প্রতি অসম্ভব দায়িত্বশীল একজন মানুষ। বাপ্পার ভাষায়, ‘তিনি অসম্ভব ভালো একজন স্বামী ও পিতা। একজন শিল্পীকে এই কম্বিনেশনে পাওয়া কঠিন। কার কিসের কমতি হলো, সেসব নিয়ে তিনি সজাগ থাকতেন, হয়তো প্রকাশ করতেন না। ছেলে ঠিকমতো পড়ছে কি না, খাচ্ছে কি না, সেসবের খেয়াল রাখতেন। বাবা বাজার ও রান্না করতে পছন্দ করতেন। শিকারে আগ্রহ ছিল, যদিও একপর্যায়ে সেটা ছেড়ে দিয়েছিলেন। মাছ ধরতে পছন্দ করতেন। ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করতেন। তিনি ছিলেন শৌখিন মানুষ। বাগান করতে ভালোবাসতেন। বাবা বলতেন, গাছেরা বাবাকে বোঝে। বাগানে নিজ হাতে কোদাল চালাতেন। সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় একটা পরিত্যক্ত জায়গায় বাবা বাগান করেছিলেন। তাঁর হাতে লাগানো গাছে এত বড় ডালিয়া ফুল ফুটেছিল যে আমি নিশ্চিত, এত বড় ডালিয়া ফুল কেউ দেখেনি।’

বারীণ মজুমদার ও ফেরদৌসী মজুমদার। ছবি: সংগৃহীত

বাবার যত কাজ, যত অর্জন—এসবের পেছনে মায়ের অবদান অনেক বলে বিশ্বাস করেন বাপ্পা মজুমদার। তিনি বলেন, ‘বারীণ মজুমদার যা কিছু করেছেন, ইলা মজুমদার না থাকলে সেসব হয়তো করতেই পারতেন না। তাঁর প্রতিটি কাজে মায়ের প্রত্যক্ষ সমর্থন ছিল।’ বাবার সঙ্গে একটা মজার ঘটনা স্মরণ করে বাপ্পা বলেন, ‘শৈশবে জানতাম, কোনো ফলের বিচি পেটে চলে গেলে পেটের ভেতরে গাছ হয়। তাতে মানুষ মরে যায়। একদিন টিফিনে দুটো কমলা নিয়ে গিয়েছিলাম। খাওয়ার সময় দুটো বিচি আমার পেটে চলে যায়। আমি কাঁদতে কাঁদতে বাসায় ফিরি। বাবাকে বলি, পেটে কমলার বিচি চলে গেছে, আমি তো মরে যাব। বাবা বলেন, রান্নাঘর থেকে এক চিমটি লবণ এনে খাও। আমি খেলাম। এরপর বাবা বললেন, যাও পেটের বিচি মরে গেছে।’

জন্মশতবর্ষ উদযাপন
পণ্ডিত বারীণ মজুমদারের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে ছিল অনুষ্ঠান। গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনের এ অনুষ্ঠানে তাঁর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান অতিথিরা। শত প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বারীণ মজুমদারের জন্মশতবর্ষ উদযাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। দেখানো হয় তাঁকে নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র।

পণ্ডিত বারীণ মজুমদার (১৯২১–২০০১)

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, বারীণ মজুমদারের বড় ছেলে পার্থ প্রতীম মজুমদার ও ছোট ছেলে বাপ্পা মজুমদার। পার্থ প্রতীম মজুমদার বলেন, ‘বাবা আমাদের শিখিয়েছেন, সুর দুই রকমের হয়। একটি অসুরের সুর, অন্যটি সুরের সংগীত। তিনি আমাদের সুরের সংগীতটাই করতে বলেছেন।’ অনুষ্ঠানে গান করেন বেশ কয়েকজন শিল্পী।

শিল্পকলা একাডেমিতে পণ্ডিত বারীণ মজুমদারের জন্মশতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে অতিথিরা

সংগীতগুরু পণ্ডিত বারীণ মজুমদারকে আগ্রা ও রঙিলা ঘরানার যোগ্য উত্তরসাধক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। সংগীতে অবদানের জন্য ১৯৮৩ সালে তাঁকে একুশে পদক এবং ২০০২ সালে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। এ ছাড়া তিনি বেশ কিছু পদক ও সম্মাননা পেয়েছেন।