Thank you for trying Sticky AMP!!

বিদেশি গানের বিপণন নিয়ে জটিলতা

বিদেশি গান নিয়ে দেশে ব্যবসা করতে দেবেন না দেশের সংগীত প্রযোজকেরা। বিভিন্ন সময়ে দেশের মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকের কাছে বিদেশি গান উপস্থাপন করত। এতে দেশের সংগীতাঙ্গন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল উপলব্ধি করে চার বছর আগে উচ্চ আদালতের মাধ্যমে মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে চিঠি ইস্যু করেন দেশের প্রযোজকেরা। এরপর বন্ধ হয়ে যায় বিদেশি গানের বিপণন। চলতি বছর তা আবার শুরু হয়। স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম জি–ফাইভের মাধ্যমে এই বিপণন পদ্ধতি চালু করে মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রবি আজিয়াটা। বিষয়টি দেশের সংগীতাঙ্গনের জন্য অশনিসংকেত, এমনটি ভেবে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (এমআইবি) উকিল নোটিশও পাঠিয়েছে।

দেশের সংগীতাঙ্গনে স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য ২০০৮ সালে গঠিত হয় এমআইবি। সদস্যসংখ্যা ৮০ হলেও সক্রিয় আছে অর্ধেকের কম। এমআইবিভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মতে, পাঁচ বছর আগে দেশের বেশির ভাগ মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রিংব্যাক টিউন, ওয়েলকাম টিউনসহ বিভিন্ন ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিসে উপমহাদেশীয় গান ব্যবহৃত হয়। এসবের সূত্র ধরে তখন দেশের বেশির ভাগ উৎসবে, অনুষ্ঠানে, দোকানে, বাসে, ঘরে বাজতে শোনা যেত হিন্দি গান। হিন্দি গানের প্রভাবে অনেক প্রতিষ্ঠান শিল্পীদের নতুন গান তৈরিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
বাংলাদেশের বাংলা গান বাঁচাতে ২০১৫ সালের ৯ জুলাই উচ্চ আদালত একটি স্থগিতাদেশ দেন। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বাংলাদেশে মুঠোফোনের রিংটোন ও ওয়েলকাম টিউনে হিন্দি গানের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। এ ঘোষণার পর দেশের সব মুঠোফোনে হিন্দি গানের বিপণন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর পুরোনো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি নতুন অনেক প্রতিষ্ঠানও গড়ে ওঠে গান, নাটক ও সিনেমা প্রযোজনার জন্য। গত চার বছরে গানে নতুন করে অনেক বিনিয়োগ করে প্রতিষ্ঠানগুলো। কারণ, দেশীয় শ্রোতাদের হিন্দি গান থেকে দূরে সরিয়ে বাংলাদেশের বাংলা গানমুখী করা।

মাস তিনেক আগে রবি যুক্ত হয় ভারতীয় স্ট্রিমিং অ্যাপ ‘জি-ফাইভ’–এর সঙ্গে। রবির অ্যাপের মাধ্যমে সবাই অবাধে উপভোগ করতে পারবেন হিন্দি গানসহ ভারতীয় বিভিন্ন নাটক, সিনেমা, গান ও ওয়েব সিরিজ। এতে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে এমআইবির পক্ষ থেকে গত ১৭ সেপ্টেম্বর রবি আজিয়াটা লিমিটেড বরাবর একটি উকিল নোটিশ পাঠানো হয়। জানতে চাওয়া হয়, উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ অমান্য করে কেন প্রতিষ্ঠানটি আবার উপমহাদেশের গান বিপণন করছে।

এমন ঘটনা দেশের অডিও শিল্পের জন্য নতুন আঘাত মনে করছেন এমআইবিভুক্ত সংগীত পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান। এমআইবি সভাপতি ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান লেজার ভিশনের চেয়ারম্যান এ কে এম আরিফুর রহমান বলেন, অনেক সংকট শেষে বাংলাদেশের গানের জগৎটা নতুন করে জাগতে শুরু করেছিল। কিন্তু হঠাৎ আবার জি–ফাইভের মাধ্যমে হিন্দি গান বিপণন মোটেও ভালো কোনো কিছুর ইঙ্গিত বহন করে না। অথচ সংকট সময় কাটিয়ে গত কয়েক বছরের চেষ্টায় নাচের অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে বিয়েতেও এখন বাংলাদেশের গান বাজে।
ধ্রুব মিউজিক স্টেশনের কর্ণধার ধ্রুব গুহ বলেন, ‘আমাদের তো আগে নিজের পায়ের নিচের মাটি শক্ত করতে হবে। হিন্দি গান বরাবরই আমাদের দেশের সংগীতাঙ্গনের বড় বাধা। কেউ হয়তো বলতে পারেন, ইউটিউবে তো চলছে। আমি বলব, সেটা ভিন্ন কথা। আমাদের চাওয়া, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কেউ যেন আমাদের দেশে হিন্দি গান শোনার পরিস্থিতি তৈরি না করেন। যে টাকা বাইরের দেশের কন্টেন্টের পেছনে বিনিয়োগ করা হচ্ছে, তা আমাদের কন্টেন্টের পেছনে বিনিয়োগ করলে অনেক শিল্পী, গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালকেরা লাভবান হবেন।’
এমআইবি মহাসচিব ও সিএমভি কর্ণধার শেখ সাহেদ আলী বলেন, ‘আমরা রবিকে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছি। নোটিশের কপি দিয়েছি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতেও। সদুত্তর না পেলে সংবাদ সম্মেলন করে মামলার আশ্রয় নেব।’ এদিকে রবি সূত্রে জানা গেছে, তারা উকিল নোটিশ পেয়েছে এবং এরই মধ্যে তার জবাবও দিয়ে দিয়েছে। এমআইবি মহাসচিব জানান, তাঁরা এখনো সে জবাব পাননি।