Thank you for trying Sticky AMP!!

আজ ২৮ সেপ্টেম্বর উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকরের জন্মবার্ষিকী

লতার জন্মদিনে স্মৃতিকাতর আশা

‘সারা দেশে অনেকেই এখন আমার জন্মদিন উদ্‌যাপন করছেন। আমার জন্য প্রার্থনা করছেন। ভালো লাগে। আমার ছোটবেলার জন্মদিনের কিছু স্মৃতি আছে। যেখানে জন্ম এবং বড় হওয়া, সেখানে ঘটা করে জন্মদিন পালন করা হতো না। তেমন রেওয়াজ ছিল না। জন্মদিনের দিন সকালে মা (শেবন্তী মঙ্গেশকর) পূজা করতেন। পূজা শেষ করে বাড়িতে তৈরি মিষ্টি কিছু খেতে দিতেন। এই স্মৃতিগুলো আমার কাছে সবচেয়ে আনন্দের।’ বছর দুয়েক আগে জন্মদিন উপলক্ষে সর্বভারতীয় সংবাদপত্র হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেছিলেন উপমহাদেশের কিংবদন্তিতুল্য কণ্ঠশিল্পী লতা মঙ্গেশকর।

আজ ২৮ সেপ্টেম্বর উপমহাদেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকরের ৯১তম জন্মবার্ষিকী। আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রিয় সংগীতশিল্পীকে নিজের মতো করেই শুভেচ্ছা জানালেন তারকা, রাজনীতিবিদ ও ভক্তরা। বিভিন্ন ভাষায়, বিভিন্ন ধারার গানে যিনি আজও মুগ্ধ করে রেখেছেন বাংলার শ্রোতাসমাজকে। তাঁর জন্মদিনের শুভেচ্ছাবার্তায় যেন উপচে পড়ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। দিনের শুরুতে বোন আশা ভোসলে পুরোনো একটি ছবি আপলোড করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। নব্বয়োর্ধ্ব সুরসম্রাজ্ঞী বোনকে নিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘দিদিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। গান আর লতা মঙ্গেশকরের নাম পরস্পর সংযুক্ত। এখানে আমাদের বোনদের ছবি, যেখানে দিদি সামনে বসে আছেন। আমি পেছনে দাঁড়িয়ে।’ এ ছবিটি শেয়ার করে বলিউডের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী এ আর রহমান শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অগ্রজ শিল্পীকে।

তাঁর সংগীতজীবনের ৭৭ বছর পূর্ণ

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইট করে জানিয়েছেন, তাঁর প্রিয় লতা দিদির সঙ্গে কথা হয়েছে এবং তিনি তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন, তাঁর দীর্ঘায়ু ও সুস্থ জীবনের জন্য প্রার্থনাও করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন কামনা করে লতা মঙ্গেশকরকে শুভেচ্ছা জানান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন লতা মঙ্গেশকরকে। লিখেছেন ‘লতা মঙ্গেশকর গান দিয়ে সারা বিশ্বের জনগণের হৃদয়ে রাজত্ব করছেন, তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। তাঁর সুস্থ জীবন এবং দীর্ঘ আয়ুর জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি।’ এ ছাড়া মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ার, মন্ত্রী অনিল দেশমুখ, একনাথ শিন্ডে, নওয়াব মালিক, নীতিন রাউত, এনসিপি প্রেসিডেন্ট শারদ পাওয়ার শুভেচ্ছা জানান লতাকে।

নিজের জন্মদিনের স্মৃতিচারণা করে এক সাক্ষাৎকারে লতা মঙ্গেশকর বলেন, ‘আমার বাবা যখন মারা যান, তখন আমার বয়স পাঁচ। বাবার (দীননাথ মঙ্গেশকর) মৃত্যুর পর আমাদের পারিবারিক অবস্থা খুবই সংকটপূর্ণ হয়ে পড়ে। মা আমাদের নিয়ে হিমশিম খেয়েছেন। তাই ওই সময় আলাদা করে জন্মদিন নিয়ে ভাবার সময় পাইনি। তবে আমার কাছে জন্মদিনের সেরা উপহার বাবা-মায়ের আশীর্বাদ। জন্মদিনে তাঁদের কথা বেশি মনে পড়ে।’

লতা, আশাদের পরিবার

১৯২৯ সালে ভারতের ইন্দোরে জন্মেছিলেন লতা মঙ্গেশকর। তাঁর গান ভারত ছাপিয়ে তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে বিশ্বসংগীতের দরবারে। লতার বয়স যখন মাত্র ১৩ বছর, ১৯৪২ সালের ২৪ এপ্রিল হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর বাবা দীননাথ মঙ্গেশকর মারা যান। বাবার কাছেই ছোটবেলায় গানের অ আ শিখেছিলেন দুই বোন লতা ও আশা। তিনি ছিলেন শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী ও মঞ্চের অভিনেতা।

মৃত্যুর সময় তেমন কিছু রেখে যেতে পারেননি দীননাথ। পাঁচ সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন লতাদের মা। কে ধরবে সংসারের হাল? গুরুদায়িত্বটা নিতে হলো কিশোরী লতাকে। সে সময় বাবার বন্ধু নবযুগ চিত্রপট চলচ্চিত্র কোম্পানির মালিক মাস্টার বিনায়ক পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। ছোটবেলায় মাঝেমধ্যে চলচ্চিত্রে গান গেয়েছেন লতা। কিন্তু বিনায়ক তাঁকে গান আর অভিনয়—দুটিকেই ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে শেখালেন। মারাঠি চলচ্চিত্রে গাওয়া তাঁর ‘খেলু সারি মানি হাউস ভারি’ গানটি সিনেমা থেকে বাদ পড়ে যায়। দমে যাননি লতা। মাস্টার বিনায়ক তাঁর চলচ্চিত্র ‘পাহিলি মঙ্গলা-গৌর’-এ লতা মঙ্গেশকরের জন্য ছোট একটি চরিত্র রেখেছিলেন। এ চলচ্চিত্রে দাদা চান্দেকারের লেখা গান ‘নাটালি চৈত্রাচি নাভালাল’-এ কণ্ঠ দেন তিনি। তখনো চলছে তাঁর জীবনের সঙ্গে নিত্যদিনের যুদ্ধ। চলচ্চিত্রের জীবনকে কখনো আপন করে নিতে পারেননি তিনি।

১৯৪২ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে মারাঠি সিনেমায় প্লেব্যাক করেন লতা মঙ্গেশকর

একদিন কাজ থেকে কাঁদতে কাঁদতে বাসায় ফিরলেন। মাকে বলেছিলেন, কৃত্রিম অভিনয়ের এ জগৎ তাঁর ভালো লাগে না। কিন্তু কিছু করার ছিল না। পরিবারের দায়িত্ব যে তাঁর কাঁধে! বসন্ত যুগলকরের ‘আপ কি সেবা ম্যায়’ চলচ্চিত্রে প্রথম হিন্দি ভাষার চলচ্চিত্রের জন্য গাইলেন ‘পা লাগো কার জোরি’ গানটি।

বিনায়কের মৃত্যুর পর সংগীত পরিচালক গুলাম হায়দার হন লতার গুরু। নিজের এক জন্মদিনে লতা বলেছিলেন, গুলাম হায়দার তাঁর জীবনে ‘গডফাদার’ ছিলেন। গুলাম হায়দারের হাত ধরে তাঁর জীবনে সুযোগ এল ‘মজবুর’ চলচ্চিত্রে ‘দিল মেরা তোড়া, মুঝে কাহি কা না ছোড়া’ গানটি গাওয়ার। এই এক গানের কারণেই বলিউড নতুন এই গায়িকাকে নিয়ে ভাবতে বাধ্য হয়। জীবনের প্রথম বড় ধরনের হিট ‘মহল’ চলচ্চিত্রের ‘আয়েগা আনেওয়ালা’ গানটি, যে গানে ঠোঁট মেলান মধুবালা।

লতা মঙ্গেশকর এ পর্যন্ত ভারত রত্ন, পদ্মবিভূষণ, পদ্মভূষণসহ অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন