Thank you for trying Sticky AMP!!

সংকটাপন্ন সন্ধ্যা, শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়

এক দিন আগেই সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের পদ্মশ্রী-প্রত্যাখ্যান ঘোষণা নিয়ে তোলপাড় দুই বাংলা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন নেটিজনরা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আবার খবরের শিরোনামে তিনি। গুরুতর শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হলো কিংবদন্তিতুল্য সংগীতশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের। জানা গেছে, ফুসফুসে সংক্রমণে ভুগছেন তিনি। গতকাল রাত থেকে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বর্ষীয়ান সংগীতশিল্পীর। রয়েছে জ্বর, শ্বাসকষ্ট।
কলকাতার লেকগার্ডেন্সের বাড়ি থেকে ইতিমধ্যেই তাঁকে নিয়ে গ্রিন করিডর করে কলকাতার শেঠ সুখলাল কারনানি মেমোরিয়াল হাসপাতাল (এসএসকেএম) নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জানা গেছে, নবতিপর গায়িকার শ্বাসকষ্ট ছিল গতকাল থেকেই। গায়ের তাপমাত্রাও স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি। বুধবার রাত থেকেই অবস্থার আরও অবনতি হয়। এসএসকেএমে চিকিৎসকের দল ইতিমধ্যেই তৈরি রাখা হয়েছে। বর্ষীয়ান সংগীতশিল্পীর চিকিৎসায় গঠন করা হয়েছে মেডিকেল বোর্ড।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দিন কয়েক আগেই বাথরুমে পড়ে গিয়ে অসুস্থ ছিলেন ৯০ বছর বয়সী প্রবাদপ্রতিম গায়িকা। এর মধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে দিল্লি থেকে পদ্মশ্রী পুরস্কারের জন্য ফোন আসে। এমনিতে কারও সঙ্গে ফোনে তেমনটা কথা বলার অভ্যাস আর নেই তাঁর। তবে সেদিন কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ফোন পেয়েই কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা তুলেছিলেন। দায়সারাভাবে পদ্মশ্রী প্রস্তাব আসতেই হতভম্ব হয়ে যান সন্ধ্যাদেবী। তৎক্ষণাৎ পত্রপাঠ সেই পদ্মশ্রী প্রত্যাখ্যান করে দেন। কাঁপা গলায় হিন্দিতেই বলেছিলেন, ‘আমার মন চাইছে না।’ তাঁর ভাষায়, ‘আমি বলে দিয়েছি, আমার পদ্মশ্রীর কোনো দরকার নেই। শ্রোতারাই আমার সব।’ তিনি বলেন, ‘আমার শরীরটা বেশ খারাপ। আমাকে পদ্মশ্রী নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল, দিল্লি থেকে ফোন করা হয়েছে। আমি বলেছি, না, আমি পারব না এই সম্মান নিতে যেতে। তারা কারণ জানতে চায়, আমি বলেছি, আমার মন চাইছে না। এটা অনেক বড় অপমান আমার জন্য। এই অপমানের সম্মান আমি গ্রহণ করতে পারব না। আমি কী কাজ করেছি, ওরা তা জানে না। আমাকে চেনেও না। সংগীতজগৎ সম্পর্কেও ওরা অবগত নয়। তাই কিছু না জেনেই কথা বলেছে, সেটাই খারাপ লাগা। একেবারে ঘোষণার শেষপর্যায়ে এসে আমাকে ফোন করছে, এত দিন পর মনে হলো তাদের, আমি ঠিকমতো দাঁড়াতে পারি না এখন, মঞ্চে গিয়ে কীভাবে গ্রহণ করব এই সম্মান?’

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মতো কিংবদন্তি একজন গায়িকাকে এমন বয়সে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে কলকাতায় অনেকেই সরব হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেকেই। কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেছেন কবির সুমনও। সুমন তো এও প্রশ্ন তুলেছেন যে কলকাতারই দুই সংগীতজ্ঞ অজয় চক্রবর্তী, রশীদ খানকে উচ্চতর পদ্ম সম্মান দেওয়া হলে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে কেন পদ্মশ্রী প্রস্তাব? দুই দিন ধরেই এমন বিতর্কে যখন বাংলায় ঝড় উঠেছে, তার মধ্যেই বৃহস্পতিবার বেলা গড়াতেই গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের অসুস্থ হওয়ার খবর এল।

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়

শাস্ত্রীয় সংগীত থেকে চলচ্চিত্রের গান, আধুনিক গানের অ্যালবাম—সব মিলিয়ে তাঁর কাজের পরিধি অনেকটাই। ১২ বছর বয়স থেকে গান গাইছেন। সংগীতের পেছনে জীবনের ৭৫টি বছর ব্যয় করেছেন। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও তাঁর জুটি বহু বছর ধরে বাঙালির মনজুড়ে আছে। একসময় সুচিত্র সেনের কণ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। ‘এ শুধু গানের দিন, এ লগন গান শোনাবার’, ‘মধুমালতী’, ‘হয়তো কিছুই নাহি পাব’, ‘তুমি নাহয়’, ‘আয় বৃষ্টি ঝেঁপে’, ‘যমুনা কিনারে’সহ অনেক কালজয়ী গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। ১৯৭১ সালে ‘জয়জয়ন্তী’ ও ‘নিশিপদ্ম’ ছবিতে গান গেয়ে শ্রেষ্ঠ গায়িকা হিসেবে ভারতের জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন সন্ধ্যা। এ ছাড়া ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার তাঁকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ উপাধিতে সম্মানিত করে।