Thank you for trying Sticky AMP!!

সেই ইমামকে নিয়ে কবীর সুমনের গান

কবীর সুমন

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমানের আসানসোল শহরে গত ২৭ মার্চ ১৬ বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সিবতুল্লাহ রশিদি নিখোঁজ হয়। আসানসোলের রেলপাড় এলাকা থেকে রামনবমীকে ঘিরে সাম্প্রদায়িক গোলযোগের সময় এক দল মানুষ সিবতুল্লাহকে তুলে নিয়ে যায়। পরদিন ২৭ মার্চ গভীর রাতে তার লাশ পাওয়া যায়। পরিবারের লোকেরা ২৮ মার্চ তার লাশ শনাক্ত করেন। ধারণা করা হয়, এই কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

ছেলের লাশ পাওয়ার পর শান্তি আর ভালোবাসার আহ্বান জানান বাবা স্থানীয় নুরানি মসজিদের ইমাম মাওলানা ইমদাদুল্লাহ রশিদি। এই হত্যাকাণ্ডের পর আসানসোলের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু ইমাম মাওলানা ইমদাদুল্লাহ রশিদি সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রতিশোধ নয়, বরং আসানসোলে শান্তি ফিরিয়ে আনাই আমাদের প্রধান কাজ। সৌহার্দ্য ফিরিয়ে আনতে হবে। প্রতিশোধ, প্রতিহিংসার পথে গেলে আমি আসানসোল ছেড়ে চলে যাব।’

মানুষকে শান্ত করতে ইমাম মাওলানা ইমদাদুল্লাহ রশিদি আরও বলেন, ‘আসানসোল শান্তির এলাকা। আমি ৩০ বছর যাবৎ এখানে আছি। আমি চাই না এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক। আসানসোল শহর আমি চিনি। ভালোবাসি। কোনো দিন এ ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখিনি। আমার পুত্রের হয়তো অতটুকু আয়ু ছিল। তাই আমি আমার এই পুত্রশোকের মধ্যেও আসানসোলে শান্তি আসুক, সেই কামনা করছি।’

ইমদাদুল্লাহর এই আহ্বানের পর স্বাভাবিক ছন্দ ফিরে আসে আসানসোলে। শান্তি ফিরেছে শহরে। পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হয়। এবার ইমাম মাওলানা ইমদাদুল্লাহ রশিদিকে নিয়ে গান তৈরি করেছেন ভারতের বাংলা গানের জনপ্রিয় শিল্পী কবীর সুমন। তাঁর গানের প্রথম চারটি লাইন হলো—
‘১৬ বছরের ছেলেটাকে খুন করলে কজনে মিলে
মুসলিম বলে এতটা ঘেন্না কটা বুকে রেখেছিলে?
ইমাম ইমদাদুল্লাহ রশিদি ভারতের সম্মান
তাঁর নামে হাত ধরাধরি করো হিন্দু মুসলমান।’

গানটি গতকাল সোমবার ইউটিউবে প্রকাশ করেছেন কবীর সুমন। গান গাওয়ার আগে এখানে তিনি বলেন, ‘সেই ১৬ বছরের ছেলেটির জানাজায় তাঁর বাবা ইমাম ইমদাদুল্লাহ রশিদি বলেন, প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা নেওয়ার অধিকার কারও নেই। তাঁর সেই বক্তব্য শান্তি এনে দেয়। উত্তেজিত জনতার মনের আগুন নিভিয়ে দেয়। আমরা আজ মনে করি, ইমাম রশিদির এই আদর্শ আমাদের প্রত্যেকের আদর্শ হওয়া দরকার।’

কবীর সুমন আরও বলেন, ‘আমি আর কী পারি! আমি একটা গান তৈরি করতে পারি। আমি একটা গান তৈরি করলাম। আপনাদের সবার কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি। গানটি যদি আমার ফেসবুক পোস্ট করি, তাহলে অ্যাকাউন্টটি ব্লক করে দেবে। একটি অ্যাকাউন্ট ব্লক করা হয়েছে। আরেকটি অ্যাকাউন্ট বাকি আছে। আপনারা যেভাবে হোক গানটি ছড়িয়ে দিন।’

এদিকে গত ১৬ মার্চ ছিল কবীর সুমনের জন্মদিন। সেদিন সন্ধ্যায় কলকাতার নজরুল মঞ্চে গান করেন তিনি। পরে সংবাদপত্রে লেখা হয়, ‘কারপাল টানেল সিনড্রোমের ব্যথায় থমকে গিয়েছে কবীর সুমনের আঙুল। আঙুলের যন্ত্রণায় পিয়ানোয় হাত ছোঁয়াতে পারছেন না তিনি।’ এ খবরে বিস্মিত হন কবীর সুমন। ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, ‘আমি নজরুল মঞ্চে হাজার দুই শ্রোতার সামনে তিন ঘণ্টা একটি কি-বোর্ড বাজিয়ে গান গেয়েছি। টানা তিন ঘণ্টা। কোনো বিরতি নিইনি। ধন্য পশ্চিমবঙ্গ ও কলকাতার সাংবাদিকতা। সে খবরটাও রাখেন না এই সাংবাদিক।’

কবীর আরও লিখেছেন, ‘লেখাটি লেখার আগে লেখক বা সম্পাদক আমার সঙ্গে একটা কথাও বলেননি, আমার মত নেননি। যে চিকিৎসকেরা আমার চিকিৎসা করছেন, তাঁদের সঙ্গেও আমার রোগ নিয়ে আলোচনা করেননি। আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখে দিয়েছেন। ৭০ বছর বয়সে এক সংগীতশিল্পী এখনো গেয়ে-বাজিয়ে এত মানুষকে আনন্দ দিচ্ছে—এটা ঠিক সহ্য হচ্ছে না। এখনো আমি পেশাদার অনুষ্ঠান করি। টিকিট বিক্রি হয়, কাউকে গছাতে হয় না। লোকে কেনে। হাউসফুল হয়।’