Thank you for trying Sticky AMP!!

'সংস্কৃতি আমাদের মস্ত বড় আশ্রয়'

জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনের উদ্বোধনীতে ছিল সমবেত নৃত্য পরিবেশনা। গতকাল শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। ছবি: প্রথম আলো

১৯৭৮ সালে শুরু। অবশ্য শুরু হয়েছিল জাহিদুর রহিম স্মৃতি পরিষদ নামে। পরে দেশব্যাপী বৃহত্তর পরিসরে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার লক্ষ্য নিয়ে বাঙালির চিরকালের সঙ্গী রবীন্দ্রনাথের নাম যুক্ত করে সংগঠনের নাম করা হয় ‘জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ’। সংস্কৃতির চর্চা ও প্রসারের লক্ষ্যে পথ চলতে চলতে দেশব্যাপী ছড়িয়ে গেছে তারা, বর্তমানে সক্রিয় শাখা ৭৮। এসব শাখার প্রতিনিধিরাই গতকাল শুক্রবার সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মিলেছিলেন জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনে।

শুরুতে ছিল বোধন সংগীত, ‘আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া’। এরপর ‘আগুনের পরশমণি’ গানের সমবেত পরিবেশনার পাশাপাশি ছিল নাচ। প্রদীপ প্রজ্বালন করে তিন দিনের ৩৮ তম সম্মেলনের উদ্বোধন করেন লেখক ও শিক্ষাবিদ মুহম্মদ জাফর ইকবাল। সভাপতিত্ব করেন সন্জীদা খাতুন। স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বুলবুল ইসলাম।

এবারের আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন দেশের নানা অঞ্চলের সাত শতাধিক শিল্পী ও সংগঠক। সংগঠনের সভাপতি সন্জীদা খাতুন বলেন, ‘বছরের এ দিনটিতে যখন একসঙ্গে চেনা মুখগুলো দেখতে পাই, তখন মনটা ভরে ওঠে। বুঝি আমাদের সাধনা সিদ্ধির পথে চলেছে। এরা এ দেশের সংস্কৃতি জগৎকে সমৃদ্ধ করবে, সংস্কৃতির ভেতর দিয়ে সবার অন্তরকে আলোকিত করবে।’ সংস্কৃতির চর্চা মানুষকে ভালোবাসতে শেখায় মন্তব্য করে সন্জীদা খাতুন আরও বলেন, ‘সমাজে যে সমস্ত অনাচার, দুঃখ আছে, তা থেকে মুক্তির জন্য সংস্কৃতি আমাদের মস্ত বড় আশ্রয়। সমস্ত দেশকে সংস্কৃতির মৈত্রীর বন্ধনে বেঁধে আমরা এক করতে চাইছি।’

গতকাল ছিল নারী দিবস। তাই উদ্বোধনের আয়োজনেও প্রসঙ্গক্রমে এ দিবসের তাৎপর্য উচ্চারিত হয়। উদ্বোধক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তি ছেলে ও মেয়েরা সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। যে সমাজে নারী-পুরুষ একসঙ্গে এগিয়ে যায়, সেই সমাজের অগ্রগতি কেউ রোধ করতে পারে না। যে মানুষ রবীন্দ্রসংগীত উপভোগ করে না, তার চেয়ে দুর্ভাগা আর নেই—এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমার দুঃখ হয় নতুন প্রজন্মের অনেকেই পাঠ্যবইয়ে স্থান পাওয়া গল্প–কবিতা ছাড়া রবীন্দ্রনাথের অন্য কোনো লেখা পড়ে না।’

উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে পরিবেশিত হয় গীতি-আলেখ্য ‘বিশ্বভরা প্রাণ’। এরপর শুরু হয় কিশোর বিভাগের সংগীত প্রতিযোগিতা। বিকেলের ‘রবিরশ্মি’ শীর্ষক অধিবেশনে বক্তব্য দেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর। সম্মেলক গান পরিবেশন করেন ময়মনসিংহ ও সিলেট জেলা সংসদের শিল্পীরা। সমবেত নৃত্য পরিবেশনায় ছিল ভাবনা। ছিল একক রবীন্দ্রসংগীত, নাচ, আবৃত্তি ও তিন কবির গানের পরিবেশনা।

প্রতিষ্ঠার পর প্রথম দিকের বার্ষিক অধিবেশনগুলো কেবল রাজধানী ঢাকাতেই হতো। ১৯৮৪ সাল থেকে এক বছর ঢাকায় এবং পরের বছর অন্য জেলায় বার্ষিক অধিবেশন হচ্ছে। প্রতিযোগিতার আয়োজন হচ্ছে এক বছর পরপর, কেবল ঢাকার অধিবেশনে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বুলবুল ইসলাম জানালেন, এবারের তিন দিনেরই সান্ধ্য অধিবেশন সাজানো হয়েছে গুণীজনের কথা, রবিরশ্মি, আবৃত্তি, পাঠ, নৃত্য ও গান দিয়ে। প্রকাশিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির নানা দিক নিয়ে বিশিষ্টজনদের লেখা প্রবন্ধের সংকলন সঙ্গীত সংস্কৃতি।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন আজ বিকেল পাঁচটায় রবীন্দ্রনাথের গানের ‘সজীব মূর্তি’ বিষয়ে সেমিনার। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অসীম দত্ত। সভাপতিত্ব করবেন সন্জীদা খাতুন। প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করবেন অধ্যাপক আ ব ম নূরুল আনোয়ার ও লাইসা আহমদ লিসা। সকাল সাড়ে নয়টায় সাধারণ বিভাগের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। বিকেল চারটায় প্রতিনিধি সম্মেলন এবং সন্ধ্যা ছয়টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে।

তিন দিনজুড়েই থাকছে পরিষদের শাখাগুলোর এযাবৎকাল পরিচালিত কার্যক্রমের উপস্থাপনা। কাল রোববার সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনের প্রধান অতিথি থাকবেন ভাষাসৈনিক রবীন্দ্রগবেষক আহমদ রফিক। এ ছাড়া গুণী-সম্মাননা জানিয়ে রবীন্দ্রপদকে ভূষিত করা হবে সিলেটের প্রবীণ লোকসংগীতশিল্পী সুষমা দাসকে।