Thank you for trying Sticky AMP!!

তিনি লড়াই করেছেন কণ্ঠ দিয়ে

প্রয়াত শিল্পী আবদুল জব্বার

‘ওরে নীল দরিয়া, আমায় দে রে দে ছাড়িয়া’ গানটি শোনেননি, এমন লোক কি পাওয়া যাবে? গান শোনেন যাঁরা, সবাই গানটি একবার হলেও শুনেছেন। কিন্তু এই গানের শিল্পী কে, এই প্রজন্মের অধিকাংশ লোকই জানেন না। সত্তরের দশকের সুপারহিট ছবি ‘সারেং বৌ’র জনপ্রিয় গানটি আলম খানের সুরে গেয়েছিলেন প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী আবদুল জব্বার। আজ এই কণ্ঠশিল্পীর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী।
‘তুমি কি দেখেছ কভু, জীবনের পরাজয়’, ‘পিচঢালা এই পথটারে ভালোবেসেছি’, এমন পুরোনো দিনের জনপ্রিয় অনেক গানের গায়ক তিনি। পাঁচ দশকের বেশি সময় বাংলাদেশের সংগীতের ভুবনে আলো ছড়িয়েছেন শিল্পী আবদুল জব্বার। ১৯৬২ সাল থেকে তিনি চলচ্চিত্রে গান গাওয়া শুরু করেছিলেন। জহির রায়হান পরিচালিত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র ‘সংগম’-এর গানে তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন। তাঁর গাওয়া গানগুলো সে সময় জয় করে নিয়েছিল সবার মন।

আবদুল জব্বার তাঁর এই কণ্ঠকেই হাতিয়ার বানিয়েছিলেন ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়। অস্ত্র দিয়ে নয়, পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে তিনি লড়াই করেছেন কণ্ঠ দিয়ে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে থেকে প্রচারিত তাঁর গান ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ ও ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ মুক্তিযোদ্ধাদের জুগিয়েছে সাহস আর অনুপ্রেরণা। তাঁর গানে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এ ছাড়া তিনি অসংখ্য দেশাত্মবোধক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধুকে গান শোনাচ্ছেন শিল্পী আবদুল জব্বার

দেশের জন্য ১৯৭১ সালে কলকাতায় গিয়ে আবদুল জব্বার স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দিয়েছিলেন এবং সেখানে প্রথম গান ‘অনেক রক্ত দিয়েছি আমরা/দেব যে আরও এ জীবন পণ’ গেয়েছিলেন তিনি। শরণার্থী ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ভারতের নানা শহরে ঘুরে তহবিল সংগ্রহ করেছিলেন। গান গেয়ে তিনি ১২ লাখ রুপি সংগ্রহ করেছিলেন, যার পুরোটাই তিনি স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ তহবিলে দান করেছিলেন।

আবদুল জব্বার ১৯৩৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সংগীতের তালিম গ্রহণ করেন ওস্তাদ ওসমান গনি এবং ওস্তাদ লুৎফুল হকের কাছ থেকে। তাঁর গাওয়া ‘তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়’, ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ ও ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গান তিনটি ২০০৬ সালে মার্চ মাসজুড়ে অনুষ্ঠিত বিবিসি বাংলার শ্রোতাদের বিচারে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ২০টি বাংলা গানের তালিকায় স্থান করে নিয়েছিল।

আবদুল জব্বার

আবদুল জব্বার কিডনি রোগের জটিলতায় ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১৭ সালের ৩০ আগস্ট মারা যান। ওই বছরই তাঁর প্রথম মৌলিক অ্যালবাম ‘কোথায় আমার নীল দরিয়া’ প্রকাশিত হয়েছিল।