Thank you for trying Sticky AMP!!

ফ্রেডি মার্কারি

ভুবনজয়ী এই গায়কের মৃত্যুর কারণ ছিল এইডস

১৩ জুলাই ১৯৮৫। দুপুর ১২টা। লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে প্রিন্স চার্লস ও প্রিন্সেস ডায়ানা উদ্বোধন করলেন লাইভ এইড কনসার্ট। মাঠে ৮০ হাজারের বেশি দর্শক, স্যাটেলাইটের কল্যাণে অগণিত দর্শক দেশ-বিদেশে। একসময় মঞ্চে আসে ব্রিটিশ রক ব্যান্ড ‘কুইন’। ভোকাল ফ্রেডি মার্কারি কিছুক্ষণ পিয়ানো বাজালেন। তারপর জিনস আর স্যান্ডো গেঞ্জিতে কিছুক্ষণ মঞ্চ দাপিয়ে বেড়ালেন এ গায়ক। একে একে গাইলেন ‘উই উইল রক ইউ’, ‘বোহিমিয়ান র‍্যাপসোডি, ‘রেডিও গাগা’…। এত বছর পরে ইউটিউবে সে কনসার্ট দেখে বিস্ময় জাগে, আঙুলের ইশারায় পুরো স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শককে নিয়ন্ত্রণ করার কী অসাধারণ ক্ষমতা। সেদিন দর্শকদের যেন জাদু করেছিলেন ফ্রেডি। হাত তুললে সব দর্শক হাত তুলছেন, তাঁর গানের তালে তালে সমাগত সব দর্শক গাইলেন, তাঁর ছন্দে নাচলেন। সে এক অভাবনীয় দৃশ্য!

ফ্রেডি মার্কারি

ইথিওপিয়ায় দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের জন্য তহবিল গঠন করতে আয়োজন করা হয়েছিল এই কনসার্ট। ওই কনসার্টে কুইন ব্যান্ড তথা ফ্রেডি মার্কারির ২৫ মিনিটের পরিবেশনাকে বলা হয় ইতিহাসের অন্যতম সেরা লাইভ পারফরম্যান্স। একাধারে চিত্রশিল্পী, গীতিকার, সুরকার, বাদক ও গায়ক ফ্রেডি মার্কারিকে আজ স্মরণ করার বিশেষ কারণ আছে। আজ বিশ্ব এইডস দিবস। আর ফ্রেডি মার্কারি সেই তারকা, যিনি এইচআইভি সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন। প্রচারবিমুখ এই মহাতারকার জনপ্রিয়তা যখন তুঙ্গে, তখন জীবনযাপনে অনিয়ম ঢুকে পড়ে। ১৯৮৬ সালের অক্টোবরে রক্ত পরীক্ষায় জানতে পারেন, তিনি এইচআইভি পজিটিভ। ১৯৯১ সালের ২৪ নভেম্বর নিজ বাড়িতে মারা যান এই কিংবদন্তি। এইচআইভিতে আক্রান্ত হওয়ার কথা মৃত্যুর কয়েক দিন আগে বিশ্বকে জানিয়েছিলেন তিনি। যদিও কয়েক বছর ধরেই তাঁর ভাঙা শরীর দেখে ভক্তরা কিছুটা অনুমান করেছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আজ অনেকেই এই দিনে ভুবনজয়ী এই গায়ককেও স্মরণ করছেন।

ফ্রেডি মার্কারির জীবনে অনেক বাঁক। চাকরির কারণে পূর্ব আফ্রিকার জাঞ্জিবারে (তানজানিয়া) থাকতেন তাঁর বাবা। সেখানেই ১৯৪৬ সালে ফ্রেডির জন্ম। জরথুস্ত্র ধর্মানুসারী পরিবারে জন্ম নেওয়া এই শিল্পীর পারিবারিক নাম ফারুখ বুলসারা। উন্নত শিক্ষার জন্য তাঁর পরিবার ফারুখকে পাঠাল তৎকালীন বোম্বাইয়ে। শহর থেকে কিছুটা দূরে, পাঁচগনি এলাকায় ব্রিটিশ ঘরানার সেন্ট পিটার্স বোর্ডিং স্কুলেই সংগীতে হাতেখড়ি। সেখানেই পিয়ানো শেখেন।
১৯৬২ সালে স্কুলের পাট চুকিয়ে জাঞ্জিবারে পরিবারের কাছে ফিরে যান ফ্রেডি। সেখানে টুকটাক চলতে থাকে সংগীতচর্চা। ১৯৬৪ সালে জাঞ্জিবারে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিলে ফ্রেডির পরিবার পাড়ি জমায় ইংল্যান্ডে। ইংল্যান্ডে ইয়েলিং আর্ট কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি জীবিকার প্রয়োজনে উদ্বাস্তু ফ্রেডি টুকটাক কাজ করতে থাকেন। হিথরো বিমানবন্দরে প্যাকেজ হ্যান্ডলিংয়ের কাজও তিনি করেছেন। ১৯৬৯ সালে ফাইন আর্টসের ওপর ডিগ্রি নেন ফ্রেডি।
সে সময় স্মাইল ব্যান্ডের ড্রামার রজার টেইলরের ফ্ল্যাটে একসঙ্গে বসবাস করা শুরু করেন। নিজেদের আঁকা ছবি, পোস্টার বিক্রি করে পেট চলত, পুরোনো পোশাকের কারবারও করেছেন। একই বছর লিভারপুলের ব্যান্ড আইবেক্সের সদস্যদের সঙ্গে পরিচয়। ফ্রেডির গায়কি দেখে তাঁদের পরবর্তী কনসার্টে তাঁকে পারফর্ম করার সুযোগ দেয় আইবেক্স। ১৯৬৯ সালের ২৩ অক্টোবর ইংল্যান্ডের বোল্টন শহরে মঞ্চ মাতিয়ে দেন নবাগত ফ্রেডি।

১৯৭০ সালে স্মাইল ব্যান্ডের ভোকাল হিসেবে যোগ দিলেন ফ্রেডি। কিছুদিন পরই তিনি ব্যান্ডের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিলেন। নতুন নাম হলো ‘কুইন’। তারপর ফ্রেডি বা কুইনকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। একে একে সৃষ্টি হয় ‘বোহিমিয়ান র‍্যাপসোডি’, ‘ডোন্ট স্টপ মি নাউ’, ‘কিলার কুইন’, ‘উই আর দ্য চ্যাম্পিয়নস’ ও ‘উই উইল রক ইউ’-এর মতো কালজয়ী গান।

ফ্রেডি মার্কারি

তাঁর গাওয়া গানে কুইনের নামও পৌঁছে যায় দুনিয়ার আনাচকানাচ। তাঁর গানে প্রভাবিত হন নানা দেশের রকশিল্পীরা। এই যেমন আমাদের রকস্টার জেমসের জনপ্রিয় ‘দুরন্ত মেয়ে’ গানটি ফ্রেডি মার্কারির ‘আই ওয়ান্ট টু ব্রেক ফ্রি’ সুরে গাওয়া। ফ্রেডির গাওয়া ‘উই আর দ্য চ্যাম্পিয়নস’ তো ক্রীড়া অনুষ্ঠানে বিজয়ীর থিম সংই হয়ে গেছে।
জন্ম থেকেই চোয়ালে চারটি অতিরিক্ত দাঁত থাকায় সামনের দাঁতগুলো বেশ খানিকটা উঁচু ছিল। অপারেশনের মাধ্যমে দাঁত ঠিক করালে স্বরে প্রভাব পড়তে পারে, এই ভয়ে সারা জীবন এভাবেই গান গেয়েছেন ফ্রেডি। স্টেজে পারফর্ম করায় সময় তিনি ছিলেন অনবদ্য। হাতের আঙুলের ইশারায় স্টেডিয়ামভর্তি দর্শককে নিয়ন্ত্রণ করার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল তাঁর। তাঁর আগে ও পরে অনেকেই এসেছেন, কিন্তু তাঁর মতো মঞ্চ মাতাতে পেরেছেন আর কে?
সূত্র: নিউ মিউজিক্যাল এক্সপ্রেস, ডয়চে ভেলে, বিবিসি, ইউটিউব