Thank you for trying Sticky AMP!!

আজ ২৮ সেপ্টেম্বর উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকরের জন্মবার্ষিকী

লতা মঙ্গেশকরের জানা-অজানা ১০ তথ্য

আজ ২৮ সেপ্টেম্বর। বেঁচে থাকলে ৯৪ বছর পূর্ণ করতেন লতা মঙ্গেশকর। সাত দশক ধরে দর্শক ও সমালোচকের হৃদয় তৃপ্ত করে চলা ভারতীয় সংগীতের এই কিংবদন্তি ১৯২৯ সালে ভারতের ইন্দোরে জন্মেছিলেন। কিন্তু তাঁর সংগীত ভারত ছাপিয়ে তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে বিশ্বসংগীতের দরবারে। জনপ্রিয় এই সংগীতশিল্পীর অনেক বিষয়ই সবার কাছে জানা। আবার কিছু বিষয় আছে, যা অনেকেই জানেন না। জন্মদিনে লতা মঙ্গেশকরের এমনই কিছু অজানা বিষয় নিয়ে আজকের এই প্রতিবেদন।

মধুবালা থেকে শুরু করে কারিনা কাপুর, যাঁর কণ্ঠের জাদু পেরিয়েছে যুগ, পেরিয়েছে প্রজন্ম। ২০২২ সালে ৬ ফেব্রুয়ারি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন লতা মঙ্গেশকর। বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রিয় সংগীতশিল্পীকে নিজের মতো করেই শুভেচ্ছা জানালেন তারকা, রাজনীতিবিদ ও ভক্তরা। বিভিন্ন ভাষায়, বিভিন্ন ধারার গানে যিনি আজও মুগ্ধ করে রেখেছেন বাংলার শ্রোতৃসমাজকে। তাঁর জন্মদিনের শুভেচ্ছাবার্তায় যেন উপচে পড়ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।

বয়স যখন মাত্র ৫

মাত্র ৫ বছর বয়সে চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর! না, কোনো নায়িকার ঠোঁটে বাজেনি তাঁর গান, তিনি নিজেই হাজির হয়েছিলেন ক্যামেরার সামনে। বাবা পণ্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকর ছিলেন গোয়ালিয়র ঘরানার একজন শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী ও মঞ্চ অভিনেতা। তাঁর মিউজিক্যাল প্লেগুলোতে লতা প্রথম অভিনয় শুরু করেন।

হেমা থেকে লতা

লতা মঙ্গেশকরের নাম শুরুতে ‘লতা’ ছিল না। জন্মের পর তাঁর নাম দেওয়া হয়েছিল ‘হেমা’। বাবা পণ্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকরের ‘ভাও বন্ধন’ নাটকে লতিকা নামের একটি বিখ্যাত চরিত্রের নাম অনুসারে তিনি হয়ে যান ‘লতা মঙ্গেশকর’।

শৈশবের লতা মঙ্গেশকর
হার্দিকর থেকে মঙ্গেশকর

মঙ্গেশকর পরিবারের পদবি ছিল হার্দিকর। দীননাথ এই হার্দিকর পরিবর্তন করে করেন মঙ্গেশকর।

মারাঠি গানে ক্যারিয়ারের শুরু

লতা মঙ্গেশকর তাঁর ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ১৯৪২ সালে, মারাঠি গান গেয়ে। ১৯৪৬ সালে তিনি প্রথম হিন্দি সিনেমার জন্য গান করেন। বসন্ত জোগলেকরের ‘আপ কি সেবা মে’ ছবিতে তিনি ‘পা লাগু কার জোরি’ গানটি গেয়েছিলেন। দুই বছর পর সুরকার গুলাম হায়দার তাঁকে প্রথম বড় সুযোগ দেন। ‘মজবুর’ ছবিতে ‘দিল মেরা তোড়া’ গানটির পর তাঁকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি।

মঙ্গেশকর পরিবারের কন্যারা, লতা কোন জন?
শাস্ত্রীয় থেকে রোমান্টিক—সব সংগীতেই লতা

তিনি ভারতের প্রধান সুরকারদের প্রায় সবার সঙ্গেই কাজ করেছেন। সংগীতের সব ধরনেই তিনি গান করেছেন। শাস্ত্রীয় সংগীত থেকে শুরু করে রোমান্টিক গান, এমনকি ভজনও গেয়েছেন তিনি। সব ধরনের গানেই তিনি পেয়েছেন সাধুবাদ—কখনো দর্শকের, কখনো সমালোচকদের।

প্রায় ৩০ হাজার গান গেয়েছেন

‘নাইটিঙ্গেল অব ইন্ডিয়া’ বলে আখ্যা পাওয়া লতা মঙ্গেশকর অর্ধশত বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ভারতের ৩৬টি ভাষায় প্রায় ৩০ হাজার গান গেয়েছেন। ধ্রুপদি থেকে রোমান্টিক, গজল, ভজন গানের প্রতিটি ধারায় তার স্বচ্ছন্দ বিচরণ সুরেলা আবেশ আচ্ছন্ন করে রেখেছে সংগীতপিপাসুদের।

রয়্যালটি নিয়ে বিবাদ!

ভারতীয় সংগীতের আরেক কিংবদন্তি শিল্পী মোহাম্মদ রফির সঙ্গে প্রায় তিন বছর কোনো গান করেননি লতা। পরে এক সাক্ষাৎকারে লতা বলেন, তাঁরা সংগীতের রয়্যালটি নিয়ে ঝগড়া করেছিলেন। ১৯৬০-এর দশকে শিল্পীদের একটি সমিতি ছিল। মুকেশ, তালাত মাহমুদরা তখন একটি দাবি তুলেছিলেন, শিল্পীদের তাঁদের প্রাপ্য সম্মানী বুঝিয়ে দিতে হবে। যদিও লতা রয়্যালটি পেতেন, কিন্তু তিনি এই দাবি সমর্থন করেন। আর মোহাম্মদ রফি এ দাবির বিরোধিতা করেন। এ নিয়েই দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। লতা দাবি করেছেন, পরে রফি ক্ষমা চেয়ে চিঠি লিখেছিলেন। এরপর শংকর-জয়কিষানের সুরে গান করেন তাঁরা। কিন্তু মোহাম্মদ রফির ছেলে শহীদ রফি এ কথার প্রতিবাদ করে বলেছেন, এমন কোনো চিঠি রফি লেখেননি।

উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর
আশার সঙ্গে বিবাদ

বোন আশা ভোসলের সঙ্গেও লতার মনোমালিন্য হয়েছিল। লতা বলেছিলেন, আশার প্রথম স্বামী গণপতরাও ভোসলের কারণে তাঁদের সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল। সম্ভবত গণপতরাও মনে করতেন, আশা লতার কারণে কাজ পান না। চল্লিশের দশকের শেষ দিকে দুই বোনের ক্যারিয়ার শুরুর পর পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে লতার দ্রুত উত্থান ঘটে। অন্যদিকে আশা তখনো সংগ্রাম করছিলেন। লতা বলেন, গণপতরাও আশাকে তাঁদের বাড়িতে যেতে নিষেধ করেন। তাঁদের দেখাসাক্ষাৎও তিনি বন্ধ করে দেন। পরে আশার দ্বিতীয় স্বামী রাহুল দেব বর্মণ দুই বোনকে কাছে আনেন।

রাজ্যসভার সদস্য

১৯৯৯ সালে ভারতের সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে তাঁকে মনোনীত করা হয়। কিন্তু লতা রাজ্যসভার অধিবেশনগুলোয় খুব বেশি একটা যেতেন না। এ নিয়ে অন্য সদস্যরা তাঁদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। লতা তাঁর অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে বলেছিলেন তাঁর অসুস্থতার কথা।

গুলজারের কথায় অনেকগুলো গানে কণ্ঠ দিয়েছেন লতা মঙ্গেশকর
১০
৩৬ ভাষায় গান

লতা মঙ্গেশকর প্রায় ৩৬টি ভাষায় গান করেছেন। এর মধ্যে আছে বাংলাও। ‘প্রেম একবার এসেছিল নীরবে’, ‘আষাঢ়–শ্রাবণ মানে না তো মন’, ‘ও মোর ময়না গো’, ‘ও পলাশ ও শিমুল’, ‘আকাশপ্রদীপ জ্বেলে’সহ অনেক বিখ্যাত বাংলা গানের কণ্ঠ তাঁর।