Thank you for trying Sticky AMP!!

চট্টগ্রামে আড্ডায় রাহুল আনন্দ। সৌরভ দাশ

পাগল থেকেই তো সুন্দর কিছু হয়: রাহুল আনন্দ

শীতের সকালটা আড়মোড়া ভেঙে সবে দুপুরের দিকে যাত্রা করেছে। গত মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে। চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশের হিলভিউ আবাসিক এলাকার একটি বেসরকারি সংস্থার ক্যাফেতে আমরা তখন চায়ের অপেক্ষায়। হঠাৎ দেখা গেল, অতি চেনা কেউ একজন বসে আছেন কয়েক টেবিল পরই। ঢিলেঢালা ট্রাউজার, টিশার্ট-জ্যাকেট পরা লোকটি আর কেউ নন, জলের গানের রাহুল আনন্দ। ক্যাফের এককোণে বসে চায়ে চুমুক দিচ্ছিলেন। কাছে গিয়ে ‘আরে রাহুল দা’, বলে কুশল আদান-প্রদানের পালা। সেটা মিনিটখানেকেরও ব্যাপার নয়। কিন্তু মানুষটি যে রাহুল। তাই আলাপ জমে গেল। কুশলবিনিময় পরিণত হলো ঘণ্টাখানেকের জমজমাট আড্ডায়।

তো আড্ডায় ঢোকার আগে রাহুলের কথা কি কিছু বলা প্রয়োজন? দেশজোড়া খ্যাতি মানুষটির। একাধারে তিনি সংগীতশিল্পী, গীতিকার ও বাদ্যযন্ত্রী। আবার কবিও। ভিন্ন ধারার ব্যান্ড দল ‘জলের গান’–এর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। রাহুল আনন্দ প্রতিনিয়ত নিজের গান ও বাদ্যযন্ত্র নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। তাঁর গানে উঠে আসে প্রেম ও প্রাণ-প্রকৃতির নানা অনুষঙ্গ। রাহুলের আরেকটা বড় পরিচয় হলো, তিনি অভিনেতাও। কয়েক দিন আগে চট্টগ্রামে এসেছিলেন একটা শর্টফিল্মে অভিনয়ের সুবাদে।

নানা প্রসঙ্গেই কথা হয় রাহুলের সঙ্গে। কত বাদ্যযন্ত্র এ পর্যন্ত বানিয়েছেন? জানতে চাইলে রাহুল আনন্দ হেসে বলেন, হিসাব নাই রে ভাই। শত শত। জলের গানের জন্যই বানান ৬৭টা। প্রতিদিন একটা বাদ্যযন্ত্র বানান তিনি।

রাহুল আনন্দ হেসে বলেন, ‘পাগলামি আরকি! আমাদের মতো কিছু পাগল-ছাগল আছে, যারা এসব করে। এই ধরেন এই কাপটা।’ বলে রাহুল চায়ের কাপ তুলে ধরেন। ‘এই কাপের যে তোড়া, সেটা একটা পাগলই প্রথম বানিয়েছেন নিশ্চয়ই। “পাগল” শব্দটাকে আমরা নষ্ট করেছি। মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষকে আমরা পাগল বলি। অথচ পাগল থেকেই সুন্দর কিছু হয়।’
রাহুল বলেন, ‘একজন শিল্পী যেমন প্রতিদিন ছবি আঁকেন। একজন কবি যেমন কবিতা লেখেন রোজ, আমিও তেমন বাদ্যযন্ত্র বানাই।’ বাদ্যযন্ত্র নিয়ে তাঁর প্রদর্শনী করারও ইচ্ছা আছে। এই বাদ্যযন্ত্রের কারণেই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ রাহুলের বাসায়ও গেছেন কয়েক মাস আগে।
রাহুল আনন্দ প্রেমিক, আবার কবিও। এত যে ব্যস্ততা, তাঁর ফাঁকে প্রকৃতি আর মানুষের জন্য কী করে সময় বের করেন?

রাহুল বলেন, ‘আমি শো–র জন্য কোথাও গেলে একটু সময় চেয়ে নিই। একা, নিজের জন্য। চট্টগ্রামে এসেও আমি নিজের জন্য সময় চেয়ে নিয়েছি। এখানকার ভাটিয়ারীতে প্রচুর পুরোনো জাহাজভাঙার সামগ্রী পাওয়া যায়। সেখানে গিয়ে আমি বাদ্যযন্ত্র বানানোর মতো কিছু উপাদান খুঁজব।’

ক্যাফেতে আড্ডা জমে ওঠে। সৌরভ দাশ

ভারত, বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব জায়গায় বাংলাভাষীদের মধ্যে জলের গান জনপ্রিয়। কিন্তু এত জনপ্রিয়তার পেছনের কারণ কী? এই প্রশ্নের উত্তর রাহুল আনন্দ জানেন না। তিনি বলেন, ‘আমরা কেন জনপ্রিয়, জানি না। তবে দেখেছি, বাচ্চারা আমাদের অনেক পছন্দ করে। শিশুরা কিন্তু নির্মম সমালোচক। তাদের ভালো লাগছে আমাদের গান। শিশুদের নানা ভিডিও পাই আমরা। তো এর কারণ হতে পারে সততা। আমরা সৎভাবে গানটা করার চেষ্টা করি।’
২০১৬ সালে এক দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন রাহুল আনন্দ। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছিলেন তখন। ওই অভিজ্ঞতা থেকে একটা গান লেখেন—‘আমার একটা ডানা ভাঙা...’। এটা খুব বিষাদের গান। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এই গানও শিশুরা পছন্দ করে। বলতে বলতে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন রাহুল আনন্দ।

জলের গানকে অনেক চড়াই-উতরাই পাড়ি দিতে হয়েছে। শুরুতে অনেকেই ভীষণ তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন। কিন্তু যাঁরা গান ভালোবাসেন, তাঁরা শেষ পর্যন্ত জলের গান পছন্দ করেছেন। আর জলের গান শেষ পর্যন্ত আলো ছড়াতে চায়। চাইলে যে কেউই আলো ছড়াতে পারেন, রাহুল আনন্দ বিশ্বাস করেন।

রাহুল আনন্দ

রাহুলের কথা, ‘আলোটা আছে বলেই আমরা অন্ধকারকে দেখতে পাচ্ছি। সূর্য যখন ডুবে যাবে, তখন আমরা কুপিবাতি জ্বালাব, মোমবাতি জ্বালাব। সূর্যের রেপ্লিকা। হয়তো সেটা আকারে ছোট। আমরা আলোকিত করতে পারি। সেটা ছোট আকারে হোক। তাই জ্ঞানের দিক থেকেও আমাকে যেটা দেওয়া হয়েছে, সেটা যদি কাজে লাগাই, তাতে আলো হবে। হোক না ছোট। অন্ধকার তো দূর হবে।’

Also Read: জলের গান, ইলিশের স্বাদ, তুরাগে নৌভ্রমণের স্মৃতি নিয়ে গেলেন মাখোঁ