Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনা তুমি এবার যাও!

শানারেই দেবী শানু। ছবি: সংগৃহীত

আমার কবিতারাও আজ কংক্রিটবন্দী নির্বাসনে।

করোনা বা কোভিড-১৯ এই রহস্যময় অদৃশ্য জীবাণু থমকে দিয়েছে পুরো বিশ্বকে। প্রকৃতির উন্মুক্ত প্রান্তরে কবিতার শব্দেরা হাসতে পারছে না, প্রাণভরে নিশ্বাস নিতে পারছে না আজকাল। তবে প্রকৃতি ঠিকই এ সুযোগে নিজেকে নতুন রূপে রাঙিয়ে নিচ্ছে আবারও। বিষাক্ত পৃথিবীকে লকডাউন করে দিয়ে প্রকৃতি এখন প্রাণভরে নিশ্বাস নিয়ে নিচ্ছে। নিক, প্রকৃতি সাজুক আবার নব আনন্দে।

শুধু অপেক্ষায় আমি, আপনি, আমরা নিজ গৃহে লকডাউন থাকছি দিনের পর দিন, শুধু পৃথিবীটাকে দ্রুত সারিয়ে তুলব, এই ভাইরাসের সংক্রমণ যাতে মহামারি আকারে না ছড়ায় সে জন্য। তবে কতটুকু সচেতনভাবে আমরা মানছি এই সচেতনতা? নিজের সঙ্গে বোঝাপড়ার সময় কিন্তু এখন মানুষের। কতটুকু প্রিয় মানুষ, পরিবার, সমাজ, দেশ, বিশ্ব, প্রকৃতির জন্য ভাবছি, দায়িত্বশীল থাকছি জীবনের প্রতি! একটু ভেবে দেখুন।

আমি শিল্পী হিসেবে, মানুষ হিসেবে নিজের গণ্ডির ভেতরে যতটুকু সামর্থ্য আছে চেষ্টা করছি পাশের মানুষগুলোকে সচেতন করার, সাহায্য করার, মানসিক শক্তি নিয়ে বেঁচে থাকতে উদ্বুদ্ধ করার। পরিবারকে, আমার সন্তানকে সময় দিচ্ছি, ছেলের সঙ্গে ছবি এঁকে, সময়টাকে রাঙিয়ে তোলার চেষ্টা করি। অবরুদ্ধ বন্দী সময়টা যেন শিশুমনে বিরূপ প্রভাব না ফেলে তাই অনেক মজার মজার খেলাধুলা করে অথবা তার পছন্দের কাজ করে সময় কাটাচ্ছি। পারিবারিক বন্ধনের একটা নতুন উষ্ণতা ফিরে পাবে অনেক পরিবার এই সময়ে। হয়তো সুকৌশলে প্রকৃতি তাই চেয়েছে, মানুষের প্রতি মানুষের মানবিক মূল্যবোধ বাড়ুক।

শানারেই দেবী শানু। ছবি: সংগৃহীত

হয়তো অচিরেই সময়ের আবর্তনে এই জীবাণু হারিয়ে যাবে মহাকালের পাতা থেকে। কিন্তু শিল্প, সাহিত্য, চিত্রকলায় করোনার পায়ের দাগ গভীরভাবে থেকে যাবে। তবে বিশ্বব্যাপী এই যে এত যুদ্ধ করোনার মতো ক্ষুদ্র একটি ভাইরাস প্রতিহত করতে, ব্যক্তিগতভাবে আমার বেশ ঈর্ষা হয় এই জীবাণুকে। কারণ, যান্ত্রিক পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান অহমিকায় বেড়ে ওঠা নিষ্ঠুর মানবজাতিকে এক তুড়িতে যথেষ্ট শিক্ষা দিয়ে দিল এই অদৃশ্য জীবাণু। কী প্রচণ্ড দাপট তার! একনিমেষে লকডাউন করে দিল পুরো বিশ্বকে।

আমার কাছে মনে হচ্ছে করোনা প্রকৃতিপ্রেরিত এক মারণাস্ত্র, যা ভয় দেখিয়ে আমাদের পরিশুদ্ধির জন্য একটা দীর্ঘ সময় দিয়েছে, স্থবির করে দিয়েছে পুরো মানচিত্র। আমরা মানুষেরা এখন নিজেদের কৃতকর্মের হিসাবনিকাশ করছি, নিজেকে নতুন করে উপলব্ধি করছি, মানবিকতার মায়ায় প্রিয় মানুষদের সঙ্গে নিয়ে আগামীর পৃথিবীকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর অঙ্গীকার করছি। পারিবারিক মূল্যবোধ বেড়েছে, বোধের কড়া নড়ছে, আত্মশুদ্ধির ভাবনা এসেছে অনেক মানুষের মননে। করোনার এত নেতিবাচক প্রভাবের ভেতরও এই ইতিবাচক শিক্ষাটুকু দিয়ে যাবে করোনা—মানুষ এই থমকে থাকা সময়ে নিজেকে, আগামীর প্রকৃতিকে সুন্দরভাবে সাজানোর আত্মপ্রত্যয় ফিরে পাচ্ছে।

করোনা শিখিয়েছে মৃত্যুর কোনো দেশ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, অর্থবিত্ত, কিছুই নেই। করোনা দ্রুতই নির্মূল হোক সবার সম্মিলিত সচেতনতায় আর ভালোবাসার মায়ায় নতুন এক পরিশীলিত পৃথিবী উপহার দিয়ে যাক মানবজাতিকে।

করোনার আঁধার কেটে সুদিন আসবেই সচেতনতা, সততা ও মানবতার হাত ধরেই, চোখের পাতায় স্বপ্নগুলোর বিশ্বাস এমনই সুদৃঢ় থাক। করোনা তুমি এবার যাও!