Thank you for trying Sticky AMP!!

কেন 'বড়' হতে চাননি আফজাল হোসেন

দুটি বইয়ের প্রকাশনা উপলক্ষে আয়োজিত মিলনমেলায় আফজাল হোসেন। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

বিপাশার ডান হাতে মাইক্রোফোন, বাঁ হাতে স্মার্টফোন। মঞ্চের সিঁড়িতে বসে ফোনের পর্দায় তাকিয়ে তিনি আবৃত্তি করছিলেন আফজাল হোসেনের কবিতা। একটি–দুটি নয়, ছয়টি কবিতা আবৃত্তি করে শোনালেন তিনি। ‘গাধার মতো ঘোড়া’, ‘মার্বেলগুলো’, ‘তিনটি দাবি’, ‘শামুক’, ‘চোখ’, ‘ছোটদের কবিতা’। অভিনয়শিল্পী বিপাশাকে সবাই চেনেন। চিত্রশিল্পী হিসেবেও তিনি অনন্য। আরেক প্রতিভাবান চিত্রকরের লেখা কবিতা আবৃত্তি করে তাক লাগিয়ে দিলেন তিনি। অথচ এত প্রতিভাধর আফজাল হোসেন জানালেন, জীবনে ‘বড়’ হতে চান না তিনি। কারণ?

আবৃত্তি করছেন বিপাশা হায়াত। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

গতকাল সোমবার বিকেলে একটি অজুহাতকে কেন্দ্র করে এক ‘মিলনমেলায়’ একত্র হয়েছিলেন সত্তর ও আশির দশকের একদল বন্ধু। তাঁরা সবাই মঞ্চ ও টেলিভিশনের মানুষ। বাংলাদেশের টেলিভিশন ও মঞ্চকে যাঁরা সযত্নে আগলে রেখেছিলেন, বন্ধুদের এই দল সেই বড় একটি দলের অংশ। তাঁরা এসে জড়ো হয়েছিলেন ছায়ানট মিলনায়তনে। তাঁদের বন্ধু অভিনেতা, নির্মাতা, চিত্রশিল্পী ও লেখক আফজাল হোসেনের দুটি বই বের হবে মেলায়। অথচ বইয়ের দেখা নেই। তাতে কী? স্মার্টফোনে করে কবিতাগুলো এনে মঞ্চের সিঁড়িতে বসে আবৃত্তি করেছেন বিপাশা হায়াত। সেই অনুষ্ঠানকে মহিমান্বিত করেছেন রবীন্দ্রসংগীতের দুই বাংলার নন্দিত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। একে একে তিনি ‘তোমার কথা হেথা’, ‘জানি নাই গো সাধন তোমার’, ‘আমারে তুমি অশেষ করেছ’, ‘ছিন্নপাতার সাজাই তরণী’, ‘কৃষ্ণকলি আমি তারে বলি’ গানগুলো গেয়ে শোনান। যেন আফজালের আজ জন্মদিন বা বিশেষ কোনো দিন! নয়তো এত বন্ধু, এত আনন্দ, এত প্রশংসা আর ভালোবাসা কেন জানাবেন? কেবল বই প্রকাশ করা হবে বলে? উপস্থাপক অপি করিম অবশ্য বাড়ি থেকে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলেন, একজন সৃজনশীল মানুষের কাটাকুটির ফসল দেখবেন বলে।

মিলনমেলায় গান শুনিয়েছেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

আফজাল হোসেন কেন এত কিছু করেন? অভিনয় করলেই তো চলত তাঁর। প্রভাব-প্রতিপত্তি এসবের আকাঙ্ক্ষায়? আজ মঞ্চে উঠে তিনি সে কথা স্বীকার করে গেছেন—এক মুহূর্তের জন্য প্রভাব-প্রতিপত্তি চাননি তিনি। ‘বড়’ হতে চাননি, ‘বিশেষ’ হতে চাননি, এমনকি তিনি কিছুই হতে চাননি। হিন্দি ছবির নায়িকার পেছনে নৃত্যরতা ৯৯ জন নারীর মতো একঝাঁক মানুষের দলে থাকতে চেয়েছেন তিনি। তাঁর বিশ্বাস, একজন হতে গিয়ে প্রতিদিন কত প্রাপ্তি থেকে মানুষ দূরে সরে যায়।

কিছুই হতে না চেয়েও কত কিছু হওয়া যায়, তার স্বাক্ষর রেখেছেন আফজাল হোসেন। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

এ বছর অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অনন্যা থেকে প্রকাশিত হচ্ছে আফজাল হোসেনের দ্বাদশ বই ‘১৯নং কবিতা মোকাম’ এবং ত্রয়োদশ বই ‘সাবান মাখা রোদ’। একটি কবিতার, আরেকটি সমসাময়িক রচনার সংকলন। ছবি আঁকতে গিয়ে যদি আটকে যান কখনো, তখন তিনি রং রেখে অক্ষরের দিকে ফেরেন। ক্লান্তি এলে চলে যান বিজ্ঞাপন নির্মাণ বা অভিনয়ে। এ সবকিছু তিনি করেন উদ্দীপনা ও প্রেরণার জন্য। এ সবকিছু তাঁকে বেঁচে থাকার প্রেরণা জোগায়। আফজাল হোসেন বলেন, ‘বড় হওয়ার স্বপ্ন নেই আমার। কেননা, খুব বড় হতে গেলে প্রাকৃতিক অনেক কিছু বিসর্জন দিতে হয়। আমি সেটা চাই না। আমি নিজের মতো বাঁচতে চাই।’

প্রিয়জনদের সঙ্গে আফজাল হোসেন। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

বই প্রকাশ উপলক্ষে ছায়ানটের মিলনমেলায় এসেছিলেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ, চলচ্চিত্রকার মোরশেদুল ইসলাম, চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, প্রবাসী ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন, কলামিস্ট ও সাংবাদিক গোলাম মুর্তজা, আফজাল হোসেনের বাল্যবন্ধু ইফতেখারুল ইসলাম, অভিনয়শিল্পী ত্রপা মজুমদার, আফসানা মিমি, রোজী সিদ্দিকী, শহিদুজ্জামান সেলিম, তানভীন সুইটি, তারিন প্রমুখ। এদিন ছিল আফজাল হোসেনের স্ত্রী তাজিন হালিমের জন্মদিন। জন্মদিনের প্রথম প্রহরের শুভেচ্ছাবার্তা জমিয়ে রেখে সন্ধ্যার মঞ্চে তিনি স্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। আর বন্ধুদের জানান, আজ এই যে এত এত নামে আফজালকে তাঁরা ডাকছেন, এর সবকিছুর পেছনে এই মানুষটির অবদান অশেষ। তাঁর লেখা দুটি বই আজ প্রকাশিত হলো। কিন্তু জীবনের দীর্ঘ সময় ধরে যে বই তিনি পাঠ করে যাচ্ছেন, তিনি এই তাজিন হালিম।

মঞ্চে এক উষ্ণ মুহূর্তে আফজাল হোসেন ও স্ত্রী তাজিন হালিম। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

অনুষ্ঠানে ‘তোমার যে হাওয়ায় হাওয়ায়’ গানটির সঙ্গে দ্বৈত নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পী তাসকিন আনহা ও জান্নাতুল ফেরদৌস। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছিল অনন্যা।

বই আসেনি। কিন্তু বইয়ের প্রচ্ছদ হাতে প্রিয়জনেরা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন লেখককে। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
মিলনমেলায় নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পী তাসকিন আনহা ও জান্নাতুল ফেরদৌস। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন