Thank you for trying Sticky AMP!!

ঘরে বসে খিচুড়ি, ইলিশ, ডিমে দিন রাঙানো

মোশাররফ করিম । ছবি সংগৃহীত।

প্রতিবছর ঘরের বাইরে দিন কাটলেও এ বছর করোনার কারণে ঘরেই কাটছে তারকাদের পয়লা বৈশাখ। করোনা নিয়ে সরকারি সতর্কতার নির্দেশের পর থেকেই ঘরবন্দী এসব তারকা। বলা চলে বন্দিজীবন আর অজানা ভবিষ্যৎ। অনেকে আছেন দুশ্চিন্তায়ও। অনেকেই হতাশ ও বিষণ্ন। এর মাঝেই বাঙালি প্রধান উৎসব পয়লা বৈশাখ আজ। বাইরে বের হতে না পারলেও ঘরেই নিজেদের মতো দিনটিকে রাঙাতে কিছুটা আয়োজনের চেষ্টা করেছেন অনেকে।

ব্যস্ত সময়ের ফাঁকে করোনা অবসর দিলেও দেশের সাধারণ মানুষ নিয়ে দুশ্চিন্তা দিন কাটছে অভিনেতা মোশাররফ করিমের। আজ পয়লা বৈশাখে ঘরে নেই বাড়তি কোনো আয়োজন। বেশির ভাগ সময় কাটছে সচেতনতায়। এই প্রসঙ্গে এই অভিনেতা বলেন, ‘যদি নিজে সচেতন থাকি, তাহলেই বাঁচতে দেশ। আমরা জানি, এই ভাইরাস একজনের কাছ থেকে অন্যজনের কাছে ছড়িয়ে যায়। সে জন্য দেশের স্বার্থে সচেতন থাকছি। প্রতিবার পয়লা বৈশাখে অনেক আনন্দ করতাম, মজা হতো। সবার সঙ্গে ভালোবাসা শেয়ার করতাম। এবার করোনাকালের অন্য দিনের মতোই কাটছে দিন। সকালে ঘুম থেকে উঠে খাওয়াদাওয়া করি। নামাজ আদায় করি। কিছু সময় সিনেমা বা অন্যান্য বই পড়ার চেষ্টা করি। গ্লাস পেইন্টিং করা, বাচ্চাকে সময় দেওয়া, বাচ্চা পড়ানো, বাসার সবাইকে সচেতন করছি।’

মৌসুমি হামিদ । ছবি সংগৃহীত।

অভিনেত্রী মৌসুমী হামিদ গত ১৮ মার্চ থেকে ঘরে কোয়ারেন্টিনে আছেন। এই সময়ের মধ্যে মাত্র দুবার কাঁচাবাজার করতে বাইরে যেতে হয়েছে। সে সময় থাকছে বাড়তি সতর্কতা। বাসায় ছোট ভাইকে নিয়েই তাঁর সময় কাটছে। ঘরেই মধ্যেই করোনা নিয়ে সব সময় সচেতন আছেন। পয়লা বৈশাখের এ দিনটি কেমন কাটছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাঙালির প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখ। প্রতিবছর এই দিনে খুশিতে থাকি। বন্ধু, আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে গেট টুগেদার করি। এবার সেটা সম্ভব হচ্ছে না। করোনার কারণে এই মুহূর্তে আমরা সবারই ঘরে নিজেকে আটকে রেখেছি। আতঙ্ক ও ভয় থাকছেই। কখন কী হয় বলা যায় না। এই অবস্থা থেকে ভেবেছিলাম কিছুই করব না। পরে মনে হলো আমার সঙ্গে আমার ভাই আছে। তা ছাড়া নিজেকেও এই সময়ে একটু চাঙা রাখা দরকার। সব সময় ভেঙে পড়লে চলে না। ঘরবন্দী অবস্থায় নিজেকেও একটু প্রাণচঞ্চল রাখা দরকার। পরে বাসায় যা ছিল, সেগুলো দিয়েই কিছুটা রান্নার চেষ্টা করেছি।’ কী খাবার রান্না করেছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খিচুড়ি, গরুর মাংস, সালাদ, ইলিশ ভাজি করেছি, ডিম রান্না করেছি।’ কথার শেষে জানান, করোনার দিনগুলোয় দেশের পরিস্থিতি কী হয়, সেটাই বেশি ভাবাচ্ছে। তাঁর ইচ্ছা অনেক দিন পর আজ শাড়ি পরে ছাদে গিয়ে ছবি তুলবেন। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগের সব বন্ধুর সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

তৌসিফ মাহবুব । ছবি সংগৃহীত।

অভিনেত্রী রোবেনা রেজা জুঁই বলেন, ‘দেশের এই ক্রান্তিকালে পয়লা বৈশাখ সেভাবে উদযাপন করছি না। দেশ এবং দেশের মানুষের ভালো থাকলে আমরা অন্য সময়েও দিনটি পালন করতে পারব।’ কীভাবে আজ এই পয়লা বৈশাখের দিনে সময় কাটছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাসার সবার জন্য অন্য দিনের মতোই রান্না করছি, সবার জন্য কিছু মিষ্টি, কেক বানিয়েছি। টেলিভিশন, অনলাইন খবর দেখছি। নামাজ আদায় করছি, এভাবেই সময় যাচ্ছে। আনন্দে বাড়তি কিছু করার মতো পরিস্থিতি এখন না।’

রোবেনা রেজা জুঁই। ছবি সংগৃহীত।

করোনার এই বন্দী সময়ে সতর্কভাবেই ঘরে অবস্থান করছেন অভিনেতা তৌসিফ মাহবুব। বাসায় সেভাবে সময় না কাটায় শিখে ফেলেছেন ঘরের প্রায় সব কাজ। পয়লা বৈশাখের এই দিনে তিনি নিজেই সব রান্না করেছেন। এই অভিনেতা জানান, ‘আমার তো ঘরে থাকার অভ্যাস নেই। প্রথম দিকে শুধু মনে হতো বন্দী হয়ে আছি। পরে বুঝতে পারলাম, কোনো কাজে যুক্ত থাকতে হবে। এই সময়ে বাড়ির কাজের বুয়াকে সতর্কতার জন্য রাখা সম্ভব হয়নি। বাড়ির সব কাজ নিজেই শুরু করে দিলাম। এখন বলতে পারেন বুয়ার সব কাজই আমি মোটামুটি পারি। আজ বৈশাখেও বাসার সবার জন্য প্রায় সবই আমি রান্না করেছি।’ কী কী রান্না করেছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইলিশ মাছভাজি, গরুর মাংস রান্না করা, মগজ রান্না করা। আলু–বেগুনসহ বিভিন্ন রকম ভর্তা করেছি। এখন রান্না না করলে ভালোই লাগে না।’ পরে তিনি বলেন, ‘নিয়মিত নামাজ পড়ার চেষ্টা করছি, ঘরেই হালকা ব্যায়াম করছি, এভাবেই সময় চলে যাচ্ছে।’ তৌসিফের পরিবারের সদস্য পাঁচজন। সবাই তাঁর রান্নার বেশ প্রশংসা করছেন।

ইরফান সাজ্জাদ। ছবি সংগৃহীত।

২৪ দিনে ধরে ঘরেই আছেন অভিনেতা ইরফান সাজ্জাদ। দেশের পরিস্থিতি নিয়ে খুবই চিন্তিত। চিন্তার মধ্যে দিয়েই কাটছে পয়লা বৈশাখ। এই অভিনেতা জানান, চারপাশে যা দেখছি, তাতে পয়লা বৈশাখ নিয়ে তেমন আনন্দ বা উৎসাহ নেই। করোনায় এই বন্দিজীবনে অন্য দিনগুলো যেভাবে কাটে, আজও সেভাবেই কাটছে। নিজের ইচ্ছেমতো আজকের বিশেষ দিনে আলুভর্তা, পান্তাভাত খাওয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের স্বামী–স্ত্রীর খাবারদাবার একদমই সিম্পল, বিশেষ কোনো আয়োজন নেই। এই মুহূর্তে কাউকে ওয়েলিং নিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর মানসিকতাও নেই। এই সময়ে অনেকের বাসায় খাবার নেই। সবকিছু মিলিয়ে একটু ডিজাস্টার অবস্থা। কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে কথা বললাম তাদের কন্ডিশন ভালো না। সবকিছু মিলিয়ে মনমানসিকতা ভালো নেই।’

শবনম ফারিয়া । ছবি সংগৃহীত।

অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া বলেন, ‘বাড়তি কোনো বাড়তি আয়োজন নেই। দেশের এই পরিস্থিতিতে ঘরেই সতর্কতার সঙ্গে সময় কাটছে। প্রতিবার এই দিনটিতে অভিনয় শিল্পী সংঘের সদস্যরা মিলে অনেক আড্ডা দিতাম, মজা করতাম। সেটা এবার আমাদের অনলাইনে হচ্ছে। বাবা মারা যাওয়ার পর আমাদের বৈশাখ সেভাবে বাড়িতে পালন হতো না। বাসায় সেভাবে কেউ থাকাও হতো না। বাইরেই ব্যস্ত থাকতে হতো। দুই বছর পর আম্মা কিছুটা রান্না করার করেছেন এই। বাড়তি কিছু করার সময় তো এখন না। সবাই একটা চিন্তার মধ্যে দিয়ে সময় পার করছে। দিন গুনছি ভালো একটি ভোরের অপেক্ষায়।’