চাঁদপুর ঘাটে এসে ভেড়ে ঘসেটি বেগমদের বজরাটি
১৭৫৮ সাল কিংবা ওই সময়ের ঢাকার অনেক কিছুই এ প্রজন্মের অজানা। সে সময় এবং সে সময়ের কিছু অজানা চরিত্র, যেমন: নায়েবে নাজিম, নগর কোতোয়াল, কুঠিপ্রধান ক্যাপ্টেন সুইন্টিন, দিল্লি থেকে আসা আমির-ওমরাদের বংশধর, মসলিন প্রস্তুতকারী ও ঢাকার সরদারদের নিয়ে হচ্ছে দীর্ঘ ধারাবাহিক ‘জিন্দাবাহার’। ধারাবাহিকটিতে নাট্যকার-অভিনেতা ও নির্দেশক মামুনুর রশীদের লেখায় উঠে আসছে আড়াই শ বছর আগের ঢাকার ইতিহাস।
নাট্যকার মামুনুর রশীদ জানান, গত বছরের নভেম্বর মাসে ‘জিন্দাবাহার’ নাটকটির প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছিল। সে সময় প্রথম আলোকে তিনি জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) জন্য দীর্ঘ একটি ধারাবাহিক নাটক লিখছেন। প্রথমা থেকে প্রকাশিত আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়ার লেখা ‘নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা’ বইটি পড়ে মাথায় একটা চমৎকার আইডিয়া আসে তাঁর। এরপরই এই কাজ শুরু। মামুনুর রশীদ বলেন, ‘সিরাজউদ্দৌলার পতনের পরের ঢাকা কেমন ছিল, তা নিয়ে তেমন কাজ হয়নি। আমি পড়াশোনা করে, কল্পনার জগতে বিচরণ করে নাটকের জন্য চিত্রনাট্য লিখলাম। একসময় ঢাকা যখন রাজধানী ছিল, তখন এটা ছিল ইংল্যান্ডের মতো একটি গ্ল্যামারাস শহর। আর্মেনিয়ান, ব্রিটিশ, ফরাসি, পর্তুগিজরা এখানে আসতেন। কারণ, এটা ছিল সোনার খনি। নাটকে আমি ওই সময়কেই ধরার চেষ্টা করেছি।’
প্রথম পর্যায়ে ৫২ পর্বের কাজ হলেও ধারাবাহিকটি দীর্ঘ হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানান নাটকটির নির্মাতা ফজলে আজিম জুয়েল। তিনি বলেন, নবাব সিরাজউদ্দৌলার মৃত্যুর পর দিল্লি থেকে কীভাবে ঢাকার শাসন পরিচালিত হতো, কী কী ঘটেছিল বা ঘটতে পারে—এমন বিষয় নিয়েই নাটকটি হচ্ছে। এমন গল্পে বাংলাদেশে আগে কখনো নাটক নির্মিত হয়নি। আড়াই শ বছর আগে ঢাকা কেমন ছিল, এই ধারাবাহিকের মাধ্যমে দর্শকেরা তা জানতে পারবেন।
ফজলে আজিম বলেন, নাটকে গল্পের শুরুতে দেখা যাবে ১৭৫৮ সালের কোনো এক দিনে মেঘনা নদী থেকে একটি বজরা সশস্ত্র প্রহরীসহ চাঁদপুর ঘাটে এসে ভেড়ে। গন্তব্য ঢাকার জিনজিরা প্রাসাদ। নৌকার আরোহীরা হচ্ছেন নিহত নবাব সিরাজউদ্দৌলার স্ত্রী লুৎফা, কন্যা উম্মে জোহরা, খালা ঘসেটি বেগম, মাতা আমেনা বেগম। কিছুটা বিরতির পর পাল তোলা বজরায় আবার ঢাকা অভিমুখে যাত্রা শুরু হয়। এখান থেকেই শুরু অষ্টাদশ শতাব্দীর সময়ের ঢাকার আখ্যান ‘জিন্দাবাহার’।
লেখক, পরিচালক ও অভিনেতা মামুনুর রশীদ বলেন, ‘সিরাজউদ্দৌলার পক্ষে যুদ্ধ করা ফরাসি সৈনিকদের কিছু চিঠি আমার হাতে এসেছে। এগুলো পড়তে গিয়ে এত তথ্য পেয়েছি যে সেসব নিয়ে নানা রকম ফিকশনের সুযোগ আছে।’
ইতিমধ্যে প্রথম পর্যায়ের শুটিংও শেষ হয়েছে। আগামী মার্চ-এপ্রিলের দিকে বিটিভিতে প্রচার শুরু হওয়ার সম্ভাবনা আছে নাটকটির। সেখানে দেখা যাবে মামুনুর রশীদ, লুৎফর রহমান জর্জ, আজাদ আবুল কালাম, আহমেদ রুবেল, অনন্ত হিরা, শতাব্দী ওয়াদুদ, সমু চৌধুরী, শামীম ভিস্তি, শ্যামল জাকারিয়া, আলিফ চৌধুরী, সাদমান প্রত্যয়, ইউসুফ রাসেল, শাকিল, রোজী সিদ্দিকী, নাজনীন চুমকি, শর্মী মালাসহ অনেককে।