Thank you for trying Sticky AMP!!

ছয়টা মাস বেঁচে থাকার খুব ইচ্ছে কাদেরের

অভিনেতা আবদুল কাদের

ছয়টা মাস পৃথিবীর আলো–বাতাসে বেঁচে থাকার আকুতি অভিনেতা আবদুল কাদেরের। আরও ছয় মাস তিনি প্রিয় মানুষদের কাছে থাকতে চান। চেনা মানুষদের দেখতে চান। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে তিনি ভক্তদের কাছে দোয়া চেয়েছেন, যেন ছয়টি মাস তিনি বাঁচতে পারেন।
ক্যানসারে আক্রান্ত অভিনেতা এখন রাজধানীর একটি হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন। তবে এভাবে একা একা তিনি আর থাকতে চান না। করোনা ইউনিট থেকে তিনি সাধারণ কেবিনে আসতে চান। চিকিৎসকেরাও তাঁকে কেবিনে নেওয়ার কথা ভাবছেন।
গতকাল বুধবার বিকেলে এ অভিনেতার স্ত্রী খাইরুন নেসা এবং নাতি সাদমান এহসাস চিকিৎসাধীন আবদুল কাদেরকে করোনা ওয়ার্ডে দেখতে যান। পুত্রবধূ জাহিদা ইসলাম এবং নাতি সিমরীন লুবাবা বাইরে অপেক্ষা করছিলেন।  অভিনেতা স্ত্রীর মুখে মাস্ক থাকায় প্রথমে তাঁকে চিনতে পারেননি।

আবদুল কাদের ও স্ত্রী খাইরুন নেসা

Also Read: মৃত্যুর গুজবে সারা রাত ঘুমাতে পারেনি কাদেরের পরিবার

জিজ্ঞাসা করেছেন আপনি কে? পরিচয় দিয়ে কথা বলল কাদের স্ত্রীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করে জানান, তাঁকে বেডে দিলে ভালো হয়। তাহলে তাঁকে আর একা থাকতে হবে না। তিনি সবাইকে দেখতে পারবেন।

এই অভিনেতার পুত্রবধূ জাহিদা ইসলাম তাঁর শাশুড়ির বরাত দিয়ে বলেন, ‘আম্মা দেখতে যাওয়ার পরে বাবা খুব মন খারাপ করেছেন। তিনি পরিচিত সবার সঙ্গে কথা বলতে চান। পরিচিত সবাইকে একনজর দেখার জন্য তিনি আর ছয় মাস বাঁচতে চান। কাছের মানুষ, আত্মীয়স্বজন, নাট্যঙ্গনের বন্ধুরা, কর্মজীবনের সহকর্মীদের সঙ্গে দেখবেন, কুশল বিনিময় করবেন। এর জন্য ছয়টা মাস বেঁচে থাকার আকুতি তাঁর। এ জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।’ আমরা তাঁকে বলেছি, ৬ মাস না, আপনি সুস্থ হয়ে আরও অনেক দিন আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন।

অভিনেতা আবদুল কাদের

জাহিদা ইসলাম আরও জানান, এখন আবদুল কাদেরের নিশ্বাসে খুব একটা সমস্যা নেই, তবে পা দুটি ফুলে পানি জমেছে।
আবদুল কাদেরের শরীরে করোনার কোনো উপসর্গ না থাকায় চিকিৎসকেরা তাঁকে আজ বৃহস্পতিবার বেডে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। এ অভিনেতা চিকিৎসক শামস মনোয়ার ও শাহরিয়ারের তত্ত্বাবধানে আছেন। পুত্রবধূ জাহিদা ইসলাম জানান, চিকিৎসকেরা তাঁদের বলেছেন আবদুল কাদেরের শরীরে কোনো করোনা উপসর্গ নেই। তাই তাঁরা করোনা পজিটিভ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন। তাঁদের ধারণা এটা ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর বিশেষ উপসর্গ হতে পারে। যে কারণে করোনা পজিটিভ দেখা গেছে। আবার পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে ক্যানসারের চিকিৎসা দেওয়া পরিকল্পনা করছেন চিকিৎসকেরা।

মঞ্চ নাটকের দল থিয়েটার এর সদস্য, বাটা বাংলাদেশ এর সাবেক কর্মকর্তা অভিনেতা আবদুল কাদের দীর্ঘ দিন অসুস্থ।

লুবাবা ও আবদুল কাদের

উন্নত চিকিৎসার জন্য ৮ ডিসেম্বর চেন্নাইয়ে নেওয়া হয় আবদুল কাদেরকে। সেখানকার হাসপাতালে ১৫ ডিসেম্বর ক্যানসার ধরা পড়ার পর চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন, ক্যানসার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে, চতুর্থ স্তরে পৌঁছে গেছেন। শারীরিক দুর্বলতার কারণে তাঁকে কেমোথেরাপি দেওয়া হচ্ছে না। গত রোববার সন্ধ্যায় অভিনেতাকে ঢাকায় আনা হয়। পরদিন ২১ ডিসেম্বর তাঁর শরীরে করোনা শনাক্ত হয়।

আবদুল কাদের নাটক, বিজ্ঞাপন, চলচ্চিত্র—তিন মাধ্যমেই জনপ্রিয়। তিনি জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র নিয়মিত শিল্পী ছিলেন। কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের লেখা ‘কোথাও কেউ নেই’ ধারাবাহিক নাটকে বদি চরিত্রে অভিনয় করে পরিচিতি পান তিনি। অভিনয়ের পাশাপাশি বেশ কিছু বিজ্ঞাপনচিত্রেও কাজ করেছিলেন কাদের। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের নাট্যশিল্পী ও নাট্যকারদের একমাত্র সংগঠন টেলিভিশন নাট্যশিল্পী ও নাট্যকার সংসদ’ টেনাশিনাস -এর সহ-সভাপতি।

‘কোথাও কেউ নেই’ ধারাবাহিক নাটকের দৃশ্যে বদি চরিত্রে অভিনয় করেন আবদুল কাদের

থিয়েটারের প্রায় ৩০টি প্রযোজনায় ১০০০টিরও বেশী প্রদর্শনীতে অভিনয় করেছেন আবদুল কাদের। তাঁর উল্লেখযোগ্য মঞ্চনাটক পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, এখনও ক্রীতদাস, তোমরাই, স্পর্ধা, দুই বোন, মেরাজ ফকিরের মা।